ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

নিরাপদ খাদ্য, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের দাবি পবার

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩২, ১৪ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নিরাপদ খাদ্য, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের দাবি পবার

নিজস্ব প্রতিবেদক : নিরাপদ খাদ্য, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা এবং সুস্থ পরিবেশের অধিকার নিশ্চিতকরণের দাবি জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)।

বুধবার রাজধানীর কলাবাগানে পবা কার্যালয়ে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস উপলক্ষে সংগঠনটি আয়োজিত এক সেমিনারে এ দাবি জানান বক্তারা।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১২০টি দেশে ২৪০টির বেশি সংস্থা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করে আসছে। এবছর দিবসটির লক্ষ্য হচ্ছে ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে সারা বিশ্বে ডিজিটাল বাজার ব্যবস্থা ভোক্তাদের জন্য আরো অবাধ, নিরাপদ ও সুলভ করা। এ ছাড়া বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িদ্ব হচ্ছে নাগরিকদের জন্য নিরাপদ খাদ্য, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা এবং সুস্থ পরিবেশের অধিকার নিশ্চিত করা।

বক্তারা আরো বলেন, মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম হচ্ছে খাদ্য। দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য বিষমুক্ত ও নিরাপদ এবং পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু রাষ্ট্রকে আমরা এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে দেখছি না। অতি মুনাফা লোভী কৃষক, উৎপাদনকারী, মজুতকারী, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যাদি, ডিডিটি, কীটনাশক, কাপড়ের রং, ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথেফেন ব্যবহার করছে। জনগণকে বাধ্য হয়ে এসব বিষাক্ত খাবার গ্রহণ করতে হচ্ছে এবং তারা নিরাপদ এবং পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

শিল্পকারখানা বিশেষ করে টেক্সটাইল ও ডাইং ইন্ডাস্ট্রির অপরিশোধিত বর্জ্য এবং পয়ঃবর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। ফলে নদীগুলো এতই দূষিত হয়ে পড়ছে যে সেখানে কোনো জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। নদীর বিষাক্ত পানি কৃষি কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে শাকসবজি ও ধান এবং মাছে ভারী ধাতু যেমন লেড, আর্সেনিক, কেডমিয়াম, মারকারি ও ক্রোমিয়ামের মিশ্রণ ঘটে। খাদ্যচক্রের মাধ্যমে এসব ভারী ধাতু আমাদের শরীরে প্রবেশ করে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

এ সময় প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান মূল প্রবন্ধে বলেন, ১৯৮৩ সালে প্রথম বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস পালন করা হয়। কনজুমার্স ইন্টারন্যাশনালের সফল প্রচারাভিযানের ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘ ভোক্তা অধিকার নীতিমালা গৃহীত হয় এবং পরবর্তীকালে ২০১৫ সালে তা সংশোধন করা হয়। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকদের জন্য অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান, বিশ্রাম-বিনোদনের ব্যবস্থা এবং সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার নিশ্চিত করা। জনগণের পুষ্টিবিধান ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা। সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও  জনগণের মৌলিক চাহিদা বিশেষ করে নিরাপদ ও পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য, নিরাপদ ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা, সুস্থ পরিবেশ ইত্যাদি এখনো নিশ্চিত হয়নি। বরং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা-অব্যবস্থাপনায় এ সকল মৌলিক চাহিদা আজ হুমকির মুখে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব জনগণের এসব মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণ করে প্রতিশ্রুত সেবা নিশ্চিত করা।

কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১৬ ভাগ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত এবং রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত খাদ্য গ্রহণের ফলেই কিডনি রোগ হচ্ছে। প্রতিমাসে ক্যানসার, কিডনি ও লিভার রোগী দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। দীর্ঘদিন বিষাক্ত খাদ্য গ্রহণের ফলে গর্ভবতী মা ও তার পেটের ভ্রুণের ক্ষতি হয়, সন্তানও ক্যানসার, কিডনিসহ মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।

এ ছাড়াও শিশু স্বল্পবুদ্ধি, স্মরণশক্তি কম ও অল্প বয়সে বৃদ্ধ হয়। প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হচ্ছে। খাদ্যের সঙ্গে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ গ্রহণের পর তা নিঃশেষ না হয়ে দেহের ভিতর দীর্ঘদিন জমা থাকে। ফলে এ বিষক্রিয়া বংশ থেকে বংশে স্থানান্তর হয়। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যে কয়েকটি হুমকি মানবসভ্যতাকে ধ্বংস করার জন্য ক্রমাগত অবদান রেখে চলেছে, তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে ক্রমবর্ধমান অ্যান্টিবায়োটিক র‌্যাজিস্ট্যান্স। বিভিন্ন পোল্ট্রি এবং পশুখাদ্যের সাথে অ্যান্টিবায়োটিক মেশানো থেকে শুরু করে মানুষের চিকিৎসার নামে যথেচ্ছভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ক্রমাগতভাবে অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন অপারেশনের ক্ষত শুকানো ও রোগ সারাতে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না। ফলে জীবন আশঙ্কা ও চিকিৎসা ব্যয় আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান অনুষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার, পবার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, নাসফের সাধারণ সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী, বানিপার সাধারণ সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ, পবার সদস্য রাজিয়া সামাদ প্রমুখ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ মার্চ ২০১৮/নাসির/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়