ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বাংলা সন ও পঞ্জিকা কীভাবে এলো

ইঞ্জি. সাইদ আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৩, ১৪ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাংলা সন ও পঞ্জিকা কীভাবে এলো

ইঞ্জি. সাইদ আহমেদ : বাংলা সন কে প্রবর্তন করেছেন বা কার সময়ে প্রবর্তিত হয়েছে, এ প্রসঙ্গে তিনজন নৃপতির নাম উঠে আসে-  গৌড়ের রাজা শশাঙ্ক, ভারত-সম্রাট আকবর এবং বঙ্গের সুলতান হোসেন শাহ। এঁদের মধ্যে আকবরের পাল্লা ভারি থাকে অন্য দুজনের তুলনায়। আমরা এঁদের বিষয়ে সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করব।

খ্রিস্ট সপ্তম শতকের ‘হর্ষচরিত’ এবং অষ্টম শতকের ‘আর্য্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প’ গ্রন্থদ্বয় থেকে আমরা জানতে পারি, শশাঙ্ক গৌড়ের রাজা ছিলেন এবং হর্ষবর্ধনের থানেশ্বর রাজ্যপ্রাপ্তির পূর্বে তিনি গৌড়রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তবে এ থেকে শশাঙ্কের গৌড়রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রকৃত সময়, এমনকি আনুমানিক সময়ও নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। তখন সমগ্র বঙ্গকে ‘গৌড়’ বলা হতো। কিন্তু ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে আলবেরুনির ‘ভারততত্ত্ব’ গ্রন্থ এবং চিনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং-এর ‘ভারত ভ্রমণকাহিনী’-র ইংরেজি অনুবাদ ভারতে প্রাপ্তির পরই কেবল জানা যায় ৬০৬ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে শশাঙ্ক গৌড়রাজ্যের রাজা হন। এ জন্য ইতিহাসবিদেরা শশাঙ্কের আনুমানিক সময় ধরেন ৬০০ খ্রিস্টাব্দ।

বর্তমানে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ এবং ১৪২৫ বঙ্গাব্দ চলছে। সময় দুটির বিয়োগফল ৫৯৫। এতে অনেকে অনুমান করেন ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দে শশাঙ্ক গৌড়ের রাজা হন এবং সে সময় থেকে বঙ্গাব্দ প্রচলিত হয়। সুতরাং শশাঙ্কই বঙ্গাব্দের প্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু নিম্নলিখিত কারণে সে মত মেনে নেওয়া যায় না :

শশাঙ্ক যে ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গাব্দ প্রতিষ্ঠিত করেন সে সম্পর্কে কোনো প্রমাণ নেই- না শশাঙ্কের মুদ্রায়, না শশাঙ্কের সময়ের কোনো লেখাপত্রে। তাছাড়া বঙ্গাব্দের আদি নাম ‘সন’। এ নাম প্রাচীন হিন্দু মন্দিরে উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে। যেমন, ‘সন ১১২৭ সাল’ লেখা খড়গপুর, মেদিনীপুরের নন্দেশ্বর মন্দির, ‘সন ১১৩৪ সাল’ লেখা রামগোপালপুর, বর্ধমানের লক্ষ্মী জনার্দন মন্দির, ‘সন ১১৫৯ সাল’ লেখা কালনা, বর্ধমানের কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির ইত্যাদি। সন আরবি শব্দ। হিজরির রূপান্তরে বঙ্গাব্দের সৃষ্টি বলেই হয়তো এই ‘সন’ নাম। শশাঙ্ক প্রবর্তিত কোনো অব্দের নাম ‘সন’ হতে পারে না। সেটা হতে পারে কেবল শশাঙ্কাব্দ বা গৌড়াব্দ। কারণ শশাঙ্ক গৌড়রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

শশাঙ্কের সময় থেকে হাজার বছরের মধ্যে বঙ্গাব্দ ব্যবহারের কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি। বঙ্গাব্দ ব্যবহারের যে সর্বপ্রাচীন নমুনা পাওয়া গিয়েছে সেটা ১৬৪৩ খ্রিস্টাব্দের। তাই অনেকে মনে করেন, খ্রিস্ট সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ায় শশাঙ্কের নামে ‘সন’ নাম দিয়ে কেউ বঙ্গাব্দ প্রচলন করে থাকতে পারেন। কিন্তু যেহেতু ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে শশাঙ্কের সঠিক সময়, এমনকি আনুমানিক সময় সম্পর্কেও কারও কোনো ধারণাই ছিল না, সেহেতু খ্রিস্ট সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ায় সঠিক সময় ধরে শশাঙ্কের নামে অব্দ প্রচলনের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

আলবেরুনির ‘ভারততত্ত্ব’ গ্রন্থের মূল কিংবা অনুলিপি- কিছুই ভারতে ছিল না। যদি থাকত, তা হলেও শশাঙ্কের আনুমানিক সময় নির্ধারণ করা সম্ভব হতো না। কারণ সেখানে হর্ষের তিনটি সময় পাওয়া যায় : খ্রিস্টপূর্ব ৪৫৬, ৩৪৩ খ্রিস্টাব্দ এবং ৬০৬ খ্রিস্টাব্দ। এ থেকে হর্ষের সঠিক সময় নির্ণয় করা যায় না। ফলে শশাঙ্কেরও আনুমানিক সময় নির্ণয় করা যায়নি।

এরপর আসে আকবর প্রসঙ্গ। আকবর ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সিংহাসনে বসেন। তিনি পঞ্চাশ বছর রাজত্ব করেন। রাজত্বের অর্ধ সময়ের পর তিনি নিজেকে আরও স্মরণীয় করে রাখার জন্য দিন-ই-ইলাহি নামক একটি ধর্মমত প্রচার করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি তারিখ-ই-ইলাহি বা ইলাহি নাম দিয়ে একটি অব্দ প্রচলন করেন, যার গণনা দেখানো হয় ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে। ইলাহি সন প্রবর্তনের জন্য আকবরনামায় আকবরের যে ফরমান দেখা যায়, তাতে ইলাহি সন প্রচলনের নির্দেশ ছাড়াও ‘বিশুদ্ধ শুক্লপক্ষ পদ্ধতিতে’ পঞ্জিকা তৈরির নির্দেশ ছিল। নির্দেশ পাঠানো হয় সম্রাটের অধিরাজ্যের সকল পঞ্জিকাকার প্রণেতাদের নিকট। তারই ফলে হিজরির সঙ্গে ভারতীয় হিন্দুবর্ষের সমন্বয়ে হিজরির রূপান্তরে বিহারসহ উত্তর ভারতে ফসলি সন, উড়িষ্যায় বিলায়তি ও আমলি সন এবং বঙ্গে সন বা বাংলা সন নামক পৃথক পৃথক আঞ্চলিক অব্দগুলি প্রচলিত হয় স্থানীয় পঞ্জিকাকারদের দ্বারা। আকবরের ইলাহি সন প্রবর্তনের সঙ্গে হিজরির রূপান্তরের কোনো বিষয় ছিল না। ১ ইলাহি = ৯৬৩ হিজরি = ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ। কিন্তু ৯৬৩ বাংলা = ৯৬৩ হিজরি = ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ। সুতরাং যাঁরা বলেন ইলাহি সনই বঙ্গে বাংলা সন হয়েছে, তাঁরা সঠিক কথা বলেন না। আবার অনেকে বলেন পূর্বে বাংলা সনের নাম ছিল ফসলি সন, কিন্তু সেটাও ঠিক নয়। বাংলা ও ফসলি পৃথক দুটি সন।

গণিতের সাহায্যে বঙ্গাব্দের জন্য হিজরির রূপান্তর-সময় পাওয়া যায় ১৫৪৪ খ্রিস্টাব্দ। তখন পহেলা বৈশাখ হয়েছিল ৭ই এপ্রিলে। ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দেও পহেলা বৈশাখ হয়েছিল ৭ই এপ্রিলে। অনেকেই বলেন ১১ই এপ্রিল। এটা ভুল। পহেলা বৈশাখ ১১ই এপ্রিলে প্রথম হয় ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে। তার পূর্বে তারিখ ক্রমেই হ্রাস পেয়েছে। সুতরাং ১৫৪৪ কিংবা ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে পহেলা বৈশাখের তারিখ ১১ই এপ্রিল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই (এ ব্যাপারে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে ‘বঙ্গাব্দের ইতিহাস’ গ্রন্থে)। তবে আকবর যেহেতু সমগ্র বঙ্গ নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি, তাই বঙ্গের সুলতান হোসেন শাহকে অনেকে বঙ্গাব্দের প্রবর্তক বলে মনে করেন। হেসেন শাহর রাজত্বকাল ছিল ১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। সময়টি বঙ্গাব্দের জন্য হিজরির রূপান্তর-সময় ১৫৪৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পড়ে না। তাই হোসেন শাহকে বঙ্গাব্দের প্রবর্তক বলা যায় না।

 




বাংলা সনে যে পঞ্জিকা ব্যবহৃত হয় সেটাকে বাংলা পঞ্জিকা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে সেটা সর্বভারতীয় হিন্দু পঞ্জিকা। এই পঞ্জিকা সৃষ্টির শুরুটা খ্রিস্টপূর্ব ১১০০-র যজুর্বেদ থেকে। দিন, বার এবং হিন্দুদের বর্ষ, মাস, পক্ষ, তিথি, নক্ষত্র, রাশি, লগ্ন ইত্যাদির তথ্যযুক্ত বিশেষ পঞ্জিকাই হলো হিন্দু পঞ্জিকা। যার সৃষ্টি হিন্দু জ্যোতির্বিদ্যা থেকে। বৈদিক গ্রন্থে হিন্দু জ্যোতির্বিদ্যার তথ্য পাওয়া যায়। হিন্দু পঞ্জিকা সৃষ্টির ৩টি কাল ধরা যায় : এক বৈদিক কাল (খ্রিস্টপূর্ব ১১০০-র যজুর্বেদ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৭০০ পর্যন্ত), দুই বেদাঙ্গ জ্যোতিষকাল (খ্রিস্টপূর্ব ৭০০ থেকে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত) এবং তিন সিদ্ধান্ত জ্যোতিষকাল (প্রথমে ২৮৫ খ্রিস্টাব্দ, পরে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত)। এখন সিদ্ধান্ত জ্যোতিষকাল চলছে, যার বিবরণ নিচে দেওয়া হলো :

পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্রে রয়েছে, আর সূর্য চক্রাকারে তাকে আবর্তন করছে- প্রাচীনকালে এই ধারণা নিয়ে হিন্দুগণ জ্যোতির্বিদ্যার চর্চা শুরু করেছিলেন। সূর্যের এই ৩৬০ ডিগ্রি আবর্তনের ফলে যে বর্ষের সৃষ্টি হয়, সেটি হিন্দুদের সৌরবর্ষ। প্রকৃতপক্ষে সেটি নাক্ষত্রিকবর্ষ। হিন্দুদের এই বর্ষের মান ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা ১২ মিনিট ৩৭ সেকেন্ড, যা সৌরবর্ষের চেয়ে দীর্ঘ। একই সঙ্গে চাঁদ পৃথিবীকে ২৭.৩৩ দিনে চক্রাকারে আবর্তন করে চান্দ্র মাস সৃষ্টি করে। আকাশে তারাদের মাঝে সূর্য আর চাঁদের পথ প্রায় কাছাকাছি অবস্থিত। এ জন্য হিন্দু জ্যোতির্বিদগণ সূর্যপথকে চাঁদ আর সূর্য- উভয়ের একটি সাধারণ পথ হিসেবে গণ্য করে একটি অভিন্ন বিন্দু থেকে ৩৬০ ডিগ্রি পথকে পৃথকভাবে সূর্যের জন্য ১২ অংশে এবং চাঁদের জন্য ২৭ অংশে বিভক্ত করেন। সূর্যপথের প্রতিটি অংশের নাম দেওয়া হয় রাশি, যার মান ৩০ ডিগ্রি এবং চাঁদের পথের প্রতিটি অংশের নাম দেওয়া হয় নক্ষত্র। যার মান ১৩ ডিগ্রি ২০ মিনিট (সূর্যপথের চিত্র দেখুন)। উল্লিখিত অংশগুলো কৃত্রিম বলে হিন্দুদের রাশি এবং নক্ষত্রগুলোও কৃত্রিম। মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট ইত্যাদি ১২টি রাশির এবং অশ্বিনী, ভরণী, কৃত্তিকা, রোহিণী ইত্যাদি ২৭টি তারার নামে ২৭টি নক্ষত্রের নামকরণ হয়। মেষ রাশি আর অশ্বিনী নক্ষত্রের প্রারম্ভবিন্দু একই। সূর্য যখন ওই বিন্দুতে প্রবেশ করে তখন মেষ সংক্রান্তি সৃষ্টির দ্বারা মেষ মাসের শুরু হয় এবং মেষ রাশির শেষ প্রান্তে বৃষ রাশিতে প্রবেশ মুহূর্তে মেষ মাসের সমাপ্তি ঘটে। তারপর বৃষ রাশিতে প্রবেশে বৃষ মাসের শুরু হয় এবং বৃষ রাশির শেষে বৃষ মাসের সমাপ্তি ঘটে। এভাবে অন্যান্য রাশি-রূপ মাসগুলো পাওয়া যায়। মেষ মাসের নামকরণ হয় বৈশাখ। কারণ মেষ মাসে সৃষ্ট অমান্ত চান্দ্রমাসে অধিকাংশ সময় বিশাখা নক্ষত্রে পূর্ণিমার অন্ত হয়। এজন্য ওই অমান্ত চান্দ্রমাস আর সৌর মেষ মাসের নামকরণ হয় বৈশাখ। এভাবে নক্ষত্রের নামে বাকি মাসগুলোর নামকরণ হয়েছিল। মাসের নাক্ষত্রিক নামগুলো খ্রিস্টপূর্ব ৭০০ এবং পহেলা বৈশাখে বর্ষারম্ভ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে প্রচলিত হয়।

হিন্দু পঞ্জিকার বর্ষমান দীর্ঘ হওয়ায় সে পঞ্জিকার বর্ষারম্ভ ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে পহেলা বৈশাখ হয়েছিল ২২শে মার্চ। বর্তমানে ঘটছে ১৪ অথবা ১৫ই এপ্রিল। এভাবে পেছাতে পেছাতে একসময় পহেলা বৈশাখ আর পহেলা মে একই দিনে পালন করা যাবে। এমন পঞ্জিকা পশ্চিমবঙ্গে এখনও অনুসৃত হচ্ছে। হিন্দু পঞ্জিকার উদ্দেশ্য ছিল পূজা-পার্বণ ইত্যাদি নির্দিষ্ট ঋতুতে পালন করা। তাই যদি হয়, হিন্দুদের প্রচলিত পঞ্জিকা অনুসৃত হলে সেটা ব্যাহত হতে বাধ্য। সুতরাং হিন্দু পঞ্জিকার আশু সংস্কার প্রয়োজন। এ জন্য তাঁদের পঞ্জিকায় মাসের দিন-সংখ্যা নির্দিষ্ট করে তাতে লিপ-ইয়ার প্রয়োগ করতে হবে, যাতে বর্ষমান সৌরবর্ষের সমান ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড হয়। বর্তমানে প্রচলিত হিন্দু পঞ্জিকার বর্ষমান ২৩ মিনিট ৫১ সেকেন্ড দীর্ঘ। সময়ের বিচারে এ পার্থক্য বিরাট। সুতরাং প্রচলিত হিন্দু পঞ্জিকার সংস্কার অনিবার্য হয়ে গিয়েছে। এই সংস্কারে হিন্দুদের কৃত্রিম রাশি, সংক্রান্তি, নক্ষত্র, তিথি ইত্যাদি বাদ দেওয়া যেতে পারে। হিন্দুদের তিথি হলো অমাবস্যার পর থেকে পরবর্তী অমাবস্যা পর্যন্ত সময়ে সূর্য-চন্দ্রের প্রতি ১২ ডিগ্রি গুণিতক ব্যবধান। এভাবে সৃষ্ট তিথি হয় ৩০টি। অমাবস্যার সময় চাঁদ আর সূর্য প্রায় কাছাকাছি থাকে। কিন্তু চাঁদের গতি সূর্যের আপাত গতির চাইতে অধিক হওয়ায় অমাবস্যার পর চাঁদ সূর্যকে পশ্চাতে রেখে অগ্রসর হতে থাকে। এটাকেই কাজে লাগিয়ে হিন্দুগণ তিথি সৃষ্টি করেছেন। অমাবস্যা আর পূর্ণিমা ব্যতীত হিন্দুদের বাকি তিথিগুলো কৃত্রিম। এই কৃত্রিম তিথিগুলো একদমই অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু প্রচলিত প্রথা মানুষ সহজে ত্যাগ করতে পারে না। তাই সংস্কারকৃত পঞ্জিকায় সেগুলোর কিছু রক্ষা করতে হবে।

বাংলাদেশে বাংলা হিন্দু পঞ্জিকা সংস্কার করা হয়েছে। এর বর্ষমান সৌরবর্ষের মানের সমান। মাসের দিন-সংখ্যা নির্দিষ্ট। এতে লিপ-ইয়ারও প্রয়োগ করা হয়েছে। বর্ষারম্ভ প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল। বর্ষমান এবং মাসের নির্দিষ্ট দিন-সংখ্যা ব্যতীত হিন্দু পঞ্জিকার বাকি বিষয়গুলো অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে মাসের দিন-সংখ্যা নির্দিষ্ট হওয়ায় প্রচলিত হিন্দু পঞ্জিকার কৃত্রিম সংক্রান্তি আর কৃত্রিম রাশি সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। সংক্রান্তি হয় মাসারম্ভে রাত ১২টায়।

আমরা আশাকরি, পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের মতো দ্রুত তাদের পঞ্জিকা সংস্কার করবে। তখন উভয় দেশের বর্ষারম্ভ বা পহেলা বৈশাখ সব সময় একই তারিখে পড়বে। হোক না সেটা ১৪ অথবা ১৫ই এপ্রিল। আসুন, বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গ উভয়ে যৌথভাবে বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করি এবং দেখিয়ে দেই বাঙালি সব পারে- সে কাজ যত কঠিনই হোক না কেন। 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ এপ্রিল ২০১৮/তারা

 

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়