ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের ৯৬তম জন্মজয়ন্তি

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১৪ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের ৯৬তম জন্মজয়ন্তি

শাহ মতিন টিপু : কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের ৯৬তম জন্মজয়ন্তি আজ। ১৯২৩ সালের ১৪ মে বাংলাদেশের ফরিদপুরে কুমার নদের তীরে চলচ্চিত্রের এই প্রবাদ পুরুষের জন্ম।

দেশ বিভাগের সময় তারা সপরিবারে কলকাতায় চলে যান। তিনি কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিষয়ে পড়াশোনা করেন। ছাত্রাবস্থায় কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক শাখার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালে তিনি একজন সাংবাদিক, একজন ওষুধ বিপণনকারী এবং চলচ্চিত্রের শব্দ কলাকুশলী হিসেবে কাজ করেন। মূলত, চল্লিশের দশকে তিনি সমাজবাদী সংস্থা ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণেই তিনি সমভাবাপন্ন মানুষদের কাছাকাছি আসতে সক্ষম হন।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এ চলচ্চিত্রকার পাল্টে দিয়েছেন বাংলা সিনেমার ধারা। তার চলচ্চিত্রযাত্রা শুরু হয় ১৯৫৫ সালে ‘রাতভোর’ নির্মাণের মাধ্যমে। ২০০২ সালে আশি বছর বয়সে নির্মাণ করেন শেষ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আমার ভূবণ’। ২৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ৪টি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ৬টি চলচ্চিত্রবিষয়ক মৌলিক গ্রন্থও লিখেছেন।

তার তৃতীয় ছবি 'বাইশে শ্রাবণ' দিয়ে শুরু হয় তার জয়যাত্রা। এ ছবিটি এনে দেয় আন্তর্জাতিক খ্যাতি। ১৯৬৯ সালে মুক্তি পায় 'ভুবন সোম'। এ ছবিটির মাধ্যমেই বাংলা চলচ্চিত্রে নতুন ধারার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন মৃণাল সেন। ১৯৮০ সালে তার 'আকালের সন্ধানে' রাতারাতি হইচই ফেলে দেয়। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ ছিল ছবিটির মূল আলোচ্য বিষয়।

হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে মৃণাল সেন জানান, তার অসংখ্য ছবির ভীড়ে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য তিনটি ছবি হলো- ‘নীল আকাশের নীচে’ (১৯৫৬), ‘ভূবন সোম (১৯৬৯), ‘কলকাতা ৭১’ (১৯৭১)। ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা ছবি হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে ‘ভূবন সোম’ ও ‘কলকাতা ৭১’ সিনেমা দুটি।

ভারতবর্ষের শিল্পীত চলচ্চিত্র নির্মাণের অন্যতম পথিকৃত মৃণাল সেন। সত্যজিৎ রায় ও ঋত্বিক ঘটক-এর সমসাময়িক এ বাঙালি নির্মাতার কাজ ভারত ছাড়িয়ে সমাদৃত হয়েছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও। মৃণাল সেন পরিচালিত চলচ্চিত্রগুলি প্রায় সবকটি বড় চলচ্চিত্র উৎসব থেকে পুরস্কার জয় করেছে। পাশাপাশি পেয়েছে প্রশংসাও। ভারত এবং ভারতের বাইরের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। তিনি ইন্টারন্যাশন্যাল ফেডারেশন অফ দি ফিল্ম সোসাইটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন।

১৯৮১ সালে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে 'আকালের সন্ধানে' চলচ্চিত্রটি বিশেষ জুরি পুরস্কার রৌপ্যভল্লুক জয় করে। ১৯৮৩ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে 'খারিজ' বিশেষ জুরি পুরস্কার পায়। ১৯৮১ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার 'পদ্মভূষণ' লাভ করেন। ২০০৫ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার 'দাদাসাহেব ফালকে' পান। ১৯৯৮-২০০৩ সালে তিনি ভারতীয় সংসদের সাম্মানিক সদস্যপদ লাভ করেন। ২০০০ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাকে অর্ডার অব ফ্রেন্ডশিপ সম্মানে ভূষিত করেন। মৃণাল সেনকে ফরাসি সরকার তাদের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান 'কমান্ডার অব দি আর্টস অ্যান্ড লেটারস'-এ ভূষিত করেন।

সম্প্রতি ভারত সরকারের উদ্যোগে সে দেশের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সংস্থা দূরদর্শনের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে চার পর্বের এক বিশাল প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘সেলিব্রেটিং মৃণাল সেন-সেলিব্রেটিং সিনেমা’। প্রথম তিনটি খন্ড তার নির্মিত চলচ্চিত্র, তার রাজনীতি ও শিল্পী জীবন নিয়ে। চতুর্থ ও শেষ খন্ডটি মৃণালের ব্যক্তিগত জীবন অবলম্বনে। তাঁকে নিয়ে জার্মানিতে নির্মিত হয়েছে একটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য প্রামাণ্য চলচ্চিত্র। টেন ডেজ ইন ক্যালকাটা নামের ছবিটি নির্মাণ করেছেন বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্রকার রাইনার্ড হাউফ। ছবিটি বিভিন্ন উৎসবে পুরস্কৃতও হয়েছে।

মৃণাল সেনের আত্মজীবনী বেরিয়েছে ২০০৪ সালের শেষভাগে। দিল্লির স্টেলার পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত ৩১০ পৃষ্ঠার এ বইটির নাম 'অলওয়েজ বিয়িং বর্ন'।

মৃণাল সেনের জন্মজয়ন্তীতে ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল ডিজিটাল আর্কাইভে আজ বিকেল ৩টা থেকে মৃণাল সেন নির্মিত চলচ্চিত্র ‘কলকাতা ৭১’ প্রদর্শনী, বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে থাকবে মৃণাল সেন নির্মিত চলচ্চিত্র ‘একদিন প্রতিদিন’এর প্রদর্শনী। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হবে ‘মৃণালপাঠ’ শিরোনামে মৃণাল সেনের চলচ্চিত্রকর্ম নিয়ে আলোচনা।

মৃণাল সেনের জীবন ও সৃষ্টিকর্ম বিষয়ে আলোচনা করবেন চলচ্চিত্র সমালোচক ও লেখক মাহমুদুল হোসেন, চলচ্চিত্র গবেষক ও লেখক অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদ, চলচ্চিত্র সমালোচক জাঈদ আজিজ এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক বেলায়াত হোসেন মামুন। আয়োজনটি সকলের জন্য উন্মুক্ত।

জন্মদিনে বরেণ্য এই চলচ্চিত্রকারকে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ মে ২০১৫/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়