ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

তালগাছ বন্ধু রানা

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ১৫ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তালগাছ বন্ধু রানা

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : ‘তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে উঁকি মারে আকাশে’ কিংবা ‘ঐ দেখা যায় তালগাছ ঐ আমাদের গাঁ’- তালগাছ নিয়ে এমন জনপ্রিয় ছড়া ছোট বেলা আমরা অনেকেই পড়েছি। শৈশবে পাকা তাল কুড়ানো, তালের শাঁস খাওয়া, তালের তৈরি পিঠা খাওয়ার মজার স্মৃতি আছে সবার ঝুলিতে। আজকাল গ্রামবাংলায় আর তেমন তাল গাছ চোখে পড়ে না। সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যেতে বসেছে আমাদের শৈশবের প্রিয় তালগাছ। এই গাছ বিলুপ্তির পথ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নিয়েছেন  এসইএল চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন। গত পাঁচ বছরে তারা রাজধানী ঢাকায় ১৬ হাজার তাল গাছ লাগিয়েছে।

 



এসইএল চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক ইবনুল সাঈদ রানা জানান, ধীরে ধীরে আমাদের দেশ থেকে তাল গাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের কারণে তালগাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। দারিদ্র্যের কারণে অনেকে তাল গাছের কাঠ বিক্রি করছে। কাঁচা তালের শাঁস-বাণিজ্যের কারণে, নতুন তাল তেমন বেড়ে উঠছে না। তিনি জানান, আমাদের প্রকৃতিতে তাল গাছের বড় ভূমিকা রয়েছে। তাল গাছ বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি কমায়। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। তাল গাছে শৈল্পিক বাসা বাঁধে বাবুই পাখি। তালগাছ যেভাবে হারিয়ে যাচ্ছে পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো তাল গাছের ছবি দেখবে, কিন্তু তালগাছ দেখবে না। অন্য গাছ লাগানো নিয়ে অনেকের অনেক প্রজেক্ট আছে, কিন্তু তালগাছ নিয়ে কোন প্রজেক্ট নেই।

ইবনুল সাঈদ রানা ভাবলেন বিলুপ্তির হাত থেকে তালগাছ বাঁচাতে কি করা যায়। সিধান্ত নিলেন ঢাকার শহরেই তালগাছ রোপণ করবেন। এতে শহরের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে তালগাছ যেমন ভূমিকা রাখবে, ঠিক তেমন গাছের সংখ্যাটাও বাড়বে। ২০১৪ সালের জুলাইয়ের ঘটনা। ইবনুল সাঈদ রানা চাঁদপুর এসইএল মডেল একাডেমীর শিক্ষার্থীদের নিজের আগ্রহের কথা জানালেন, পাকা তালের বিচি সংগ্রহে তাদের সহযোগিতা চাইলেন। পরের দিন শিক্ষার্থীরা স্কুল বারান্দা ভরে তুললেন তালের বিচিতে। রানা সেই পাঁচশ তালের বিচি ঢাকা এনে হাতিরঝিল, ধানমন্ডি লেক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন প্রাঙ্গণে রোপণ শুরু করেন। তালের বিচি রোপণের নেশায় পেয়ে বসে তাকে। একে একে তালের বিচি সংগ্রহ করতে থাকেন গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে, গোপালগঞ্জের মকসুদপুর থেকে, মাদারীপুর থেকে। ঢাকার আগারগাঁও, বিজয় স্মরণী, ঢাকা টু ময়মনসিংহ রোডসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১৬ হাজার তালের বিচি রোপণ করেছেন তিনি।

 



রানা জানান তিনি প্রথম তালের বিচিটা রোপণ করেছেন হাতিরঝিলে রাত ১২টার পর। দিনে রোপণ করলে মানুষ অন্য কিছু ভাবতে পারে। কৌতূহলী কেউ বিচি উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তাই রাতে রোপণ করেছিলেন। কিন্তু একবার রাতেও সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। হাতিরঝিলে পুলিশ আমাদের স্বেচ্ছাসেবক টিমকে সন্ত্রাসী ভেবে তিন দিক থেকে ঘেরাও করে ফেলেছিল। পরে সত্যিটা বুঝতে পেরে পুলিশও তালগাছ লাগিয়েছিল। রানা অভিযোগ করে বলেন, সিটি কর্পোরেশন জেনে কিংবা না জেনে ঘাস বদলের নামে, সৌন্দর্য বর্ধনের নামে বিজয় স্মরণী ও ধানমন্ডি লেকে অনেক তালগাছ কেটে ফেলেছে। এটা অনুচিত। রানা বলেন, কেউ তালের বিচি রোপণ করতে চাইলে বিনা পয়সায় করতে পারবেন। কারণ তালের বিচি গ্রাম থেকে বিনামূল্যে সংগ্রহ করা যায়। তিনি এই বছর জুলাইয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে ৫০ হাজার তালের বিচি রোপণের ইচ্ছার কথা জানান।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ মে ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়