ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

মহা বরকত ও কল্যাণময় মাহে রমজান

রিয়াজুল বাশার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৬, ১৮ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মহা বরকত ও কল্যাণময় মাহে রমজান

রিয়াজুল বাশার : রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের বার্তা নিয়ে আবার এসেছে পবিত্র মাহে রমজান। ইসলাম ধর্মের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হল এই রমজানের সিয়াম বা  রোজা। নামাজ ও জাকাতের ন্যায় রমজান শরিফের রোজাও ইসলামের একটি অন্যতম রোকন। পবিত্র কোরআনে এই ইবাদত পালনের জন্য বিশেষভাবে তাগিদ প্রদান করা হয়েছে। রমজানে সিয়াম পালনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি, সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা ইত্যাদি গুণ অর্জনের প্রত্যক্ষ প্রশিক্ষণ লাভ হয়।

‘সিয়াম’ শব্দ এসেছে ‘সওম’ থেকে। এর অর্থ বিরত থাকা। ইসলামী শরীয়তে সওম হলো- আল্লাহর নির্দেশ পালনের উদ্দেশ্যে নিয়তসহ সুবহে সাদিকের শুরু থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার, ভোগ-বিলাস ও পাপাচার থেকে বিরত থাকা।একে ফার্সিতে বলা হয় রোজা। মহান আল্লাহতাআলা রোজা পালনের জন্য রমজান মাসকে নির্ধারিত করেছেন। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান নর-নারীর জন্য রোজা রাখা ফরজ। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে সিয়াম বা রোজা সম্পর্কে বলেছেন- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’ –(সূরা বাক্বারাহ : ১৮৩)।

হিজরি সনের নবম মাস হলো মাহে রমজান। এ মাসেই নাজিল হয়েছে মহা পবিত্র কোরআন। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন- রমজান মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। -(সূরা বাক্বারাহ : ১৮৫)

পবিত্র কোরআনে আরো বলা হয়েছে- ‘নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের জন্য রোজা ফরজ। তোমাদের মধ্যে যে অসুখে থাকবে কিংবা সফরে থাকবে, তাকে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয়, তাদের এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাওয়াতে হবে।  যে ব্যক্তি খুশীর সঙ্গে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি রোজা রাখ, তবে তোমাদের জন্যে বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার। -(সূরা বাক্বারাহ : ১৮৪)।

হযরত রাসূলে করিম (সা.) তাই রমযান আসার পূর্ব থেকেই রমজানের জন্য প্রস্তুতি নিতেন। শাবান মাসে অধিকহারে নফল রোজা পালনের মাধ্যমে তিনি রমজানে সিয়াম সাধনার আগাম প্রস্তুতি নিতেন। এছাড়া  তিনি সাহাবীদের রমজানের শুভাগমনের সুসংবাদ দিতেন। তাদের শোনাতেন রমজানের ফযিলতের কথা। তারা যেন রমজানে ইবাদত-বন্দেগিতে বেশি করে আত্মনিয়োগ করতে পারেন। নেকি অর্জনে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে প্রত্যয়ী হন।

সিয়ামের মূল ও প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ইবাদত। রোজার লক্ষ্য হলো আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা। কেউ যদি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে অথবা অন্য কোনো কারণে কেবল পার্থিব উদ্দেশ্যে পানাহার করা থেকে বিরত থাকেন, তাহলে সেটা ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে না, আধ্যাত্মিকভাবেও তিনি উপকৃত হবেন না।

মাহে রমজানে ইবাদত-বন্দেগিকে উদ্বুদ্ধ করে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের দৃঢ়তা ও পুণ্য লাভের আশায় রমজানের রোজা রেখে ইবাদত করে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। আর যে রমজানের রাতে ইমানের দৃঢ়তা ও পুণ্যের আশায় জাগ্রত থেকে তারাবির নামাজ আদায় করে তার পেছনের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর যে ক্বদরের রাতে জাগে ইমানের দৃঢ়তা ও পুণ্যের আশায় তারও পেছনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’-(বোখারি ও মুসলিম)

রাসূল (সা.) আরো বলেছেন-  রমজানের প্রথম ১০ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাতের এবং শেষ ১০ দিন নাজাত বা দোজখের আগুন থেকে মুক্তির। এ মাসে পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা বান্দার দিকে শুভ দৃষ্টি প্রদান এবং রহমত বর্ষণ করেন, তাদের সব গুনাহ মাফ করে দেন ও দোয়া কবুল করেন। এ  মাসে মুমিন বান্দার রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

হিজরি অন্যান্য মাসের তুলনায় মাহে রমজানের ফজিলত অনেক বেশি। এ মাসে ইবাদত-বন্দেগির সওয়াব ও পুরস্কার অন্যান্য মাসের চেয়ে বহুগুণ বেশি। প্রকৃতপক্ষে রোজা এমন এক বরকতময় ইবাদত, যার সঙ্গে অন্য কোনো ইবাদতের তুলনা চলে না। রাসূল (সা.) মাহে রমজানে দিনে রোজা রাখতেন আর রাতে দীর্ঘ সময় ইবাদত-বন্দেগি করতেন। সাহাবায়ে কিরামও রমজান মাসকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। মাহে রমজানে সিয়াম সাধনাকারী রোজাদারের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ পুরস্কার ও অশেষ মর্যাদা রয়েছে। হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন- ‘রোজা আমারই জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দেব।’-(বোখারি ও মুসলিম)

মহা বরকত ও কল্যাণময় মাহে রমজান বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগি, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া-দরুদ পাঠ, তওবা-ইস্তেগফার ও প্রার্থনা পেশের মাধ্যমে রহমত কামনার জন্য উত্তম। সুতরাং আমাদের কর্তব্য হল, যথাযথভাবে এ মাসে রোজা রাখা ও ইবাদত-বন্দেগি করা। এ মাস যেন নিরবে এসে আমাদের কাছ থেকে নিরবে চলে না যায়।

মাহে রমজানে আল্লাহ তাআলা এত অধিক রহমত-বরকত নাজিল করেন যে এতে বান্দার কৃত গুনাহ ও পাপ জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যায়।  রহমতের এ মাস পেয়েও যে এর উপযুক্ত মূল্য দিল না, বেশি বেশি পুণ্য আহরণ করতে পারল না এবং জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের পরোয়ানা পেল না, সে বড় হতভাগ্য। তাই পবিত্র এই মাসে মহান রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভ এবং জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ লাভে আমরা সবাই সচেষ্ট হবো। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সঠিকভাবে রোজা রাখা ও ইবাদত করার তৌফিক দান করুন। -আমিন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ মে ২০১৮/রিয়াজুল/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়