ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘৯ কোটি শিশুর বাবা পিতৃত্বকালীন ছুটি পান না’

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ১৫ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘৯ কোটি শিশুর বাবা পিতৃত্বকালীন ছুটি পান না’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইউনিসেফের নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে, বিশ্বে এক বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ, যাদের সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি, এমন দেশে বসবাস করে যেখানে তাদের বাবারা আইন অনুসারে একদিনের জন্যও বেতনসহ পিতৃত্বকালীন ছুটি পান না।

শুক্রবার ইউনিসেফ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়, ভারত ও নাইজেরিয়াসহ ৯২ দেশে, যেখানে মোট জনসংখ্যায় নবজাতকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি, সেসব দেশে এমন কোনো জাতীয় নীতিমালা নেই যার মাধ্যমে নিশ্চিত করা যায় যে, নতুন বাবারা তাদের নবজাত সন্তানদের সঙ্গে বেতনসহ পর্যাপ্ত ছুটি কাটাতে পারে। অন্যদিকে ব্রাজিল ও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব দ্য কঙ্গোসহ অন্য দেশগুলোতে মোট জনসংখ্যায় নবজাতকের সংখ্যা বেশ উচ্চ হলেও এসব দেশে বেতনসহ জাতীয় পিতৃত্বকালীন নীতিমালা রয়েছে, যদিও এই ছুটির সময়সীমা তুলনামূলকভাবে বেশ কম।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েত্তা এইচ ফোর বলেন, ‘একেবারে শুরু থেকেই মা ও বাবার সঙ্গে ইতিবাচক ও অর্থপূর্ণ মিথস্ক্রিয়া শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ ও জীবন গড়তে সহায়তা করে, তাদের স্বাস্থ্যকর ও সুখী করে এবং তাদের শেখার সক্ষমতা বাড়ায়। এই ভূমিকা পালনে তাদের সুযোগ করে দেওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব।’

তথ্যপ্রমাণ এটাই নির্দেশ করে যে, সন্তানদের জীবনের শুরু থেকেই বাবারা তাদের সঙ্গে বন্ধন তৈরি করতে পারলে, তারা তাদের সন্তানদের বিকাশে অনেক বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে। গবেষণা আরো নির্দেশ করে যে, বাবাদের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে শিশুদের মিথস্ক্রিয়া হলে দীর্ঘমেয়াদে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য, আত্মসম্মান ও জীবন-সন্তুষ্টি অনেক ভালো হয়।

শিশুদের যত্ন নিতে বাবা-মাদের যে সময়, সম্পদ ও তথ্য প্রয়োজন তা তাদের প্রদানে সহায়তা করতে ইউনিসেফ সরকারসমূহকে জাতীয় পরিবার-বান্ধব নীতিমালা বাস্তবায়নের আহ্বান জানায়, যেসব নীতিমালার মধ্যে বেতনসহ পিতৃত্বকালীন ছুটিও রয়েছে।

চলতি বছরের শুরুতে ইউনিসেফ বিশ্বব্যাপী তার সব কার্যালয়ে ১৬ সপ্তাহ পর্যন্ত বেতনসহ পিতৃত্বকালীন ছুটির বিধান রেখে বাবা-মার ছুটি সংক্রান্ত সংস্থাটির বিধিমালার আধুনিকায়ন করেছে। এর মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যে ইউনিসেফই প্রথম এ ধরনের ছুটি নির্ধারিত চার সপ্তাহ থেকে বাড়িয়েছে।

ফোর বলেন, আমরা সব শিশুর জন্য হতে পারবো না, যদি আমরা সব বাবা-মার জন্য না হই। সন্তানের যত্ন নিতে, বিশেষ করে জীবনের একেবারে শুরুর বছরগুলোতে, বাবা-মাদের যে সময় ও সম্পদের প্রয়োজন তা যদি আমরা তাদের দিতে চাই তবে আরো সরকার এবং নিয়োগকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে আমাদের দাবি তুলতে হবে।

বিশ্বব্যাপী পরিবার-বান্ধব নীতিমালার পক্ষে জনমত বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতে পার্লামেন্টের পরবর্তী অধিবেশনে বিবেচনার জন্য পিতৃত্বকালীন সুবিধা বিলের প্রস্তাব করছেন কর্মকর্তারা, যা বাবাদের তিনমাস পর্যন্ত বেতনসহ পিতৃত্বকালীন ছুটি কাটানোর সুযোগ দেবে।

তারপরও অনেক কাজ বাকি। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের আটটি দেশে, যেখানে নবজাতকের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ, সেসব দেশে বেতনসহ কোনো মাতৃত্ব বা পিতৃত্বকালীন ছুটির বিধান নেই। নতুন এই গবেষণা বর্তমানে দ্বিতীয় বছরে থাকা ইউনিসেফের সুপার ড্যাডস প্রচারাভিযানের অংশ, যার লক্ষ্য হচ্ছে সেসব প্রতিবন্ধকতা দূর করা যা ছোট শিশুদের বিকাশে তাদের বাবাদের সক্রিয় ভূমিকা পালনে বাধা দেয়। এই প্রচারাভিযান এ মুহূর্তে জুন মাসে বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে স্বীকৃত বাবা দিবস উদযাপন করছে এবং ছোট শিশুদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকর বিকাশে ভালোবাসা, খেলাধুলা, সুরক্ষা ও ভালো পুষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করছে।

স্নায়ুবিজ্ঞানের অগ্রগতি এটা প্রমাণ করেছে যে, শিশুরা যখন তাদের একেবারের শুরুর বছরগুলোতে, বিশেষ করে সন্তান ধারণ হতে শুরু করে প্রথম ১০০০ দিন থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত, যত্নের মধ্যে ও উদ্দীপক পরিবেশে থাকে তখন তাদের নতুন স্নায়বিক সংযোগগুলোর গঠন সবচেয়ে সন্তোজনক গতিতে হয়। এই স্নায়বিক সংযোগ একটি শিশুর মানসিক বিকাশের সক্ষমতা, তারা কীভাবে শিখবে এবং চিন্তা করবে, তাদের চাপ মোকাবিলার সক্ষমতা নির্ধারণে সহায়তা করে এবং এমনকি তারা প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে কী পরিমাণ আয় করবে তার ওপরও প্রভাব ফেলে।

অ্যাডভানন্সড আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট: ফ্রম সায়েন্স টু স্কেল-শিরোনামে ২০১৬ সালের অক্টোবরে চালু হওয়া ল্যানসেট সিরিজের তথ্য অনুযায়ী, খর্বাকৃতি ও অতিদারিদ্র্যের কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ২৫ কোটি শিশু দুর্বল বিকাশের ঝুঁকিতে ছিল। এই সিরিজে আরো ওঠে এসেছে যে, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, যত্ন প্রদান, নিরাপত্তা ও সুরক্ষা এবং প্রারম্ভিক শিক্ষার মতো শিশুর যত্নের বিষয়গুলো তুলে ধরার কর্মসূচি বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সমন্বিতভাবে পরিচালিত হলে মাথাপিছু খরচ খুবই কমে আসে, যা ৫০ সেন্টের কাছাকাছি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ জুন ২০১৮/সাওন/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়