ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

এক মলাটে ইতিহাস: দুনিয়া মাতানো বিশ্বকাপ

শিলু হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ২৫ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এক মলাটে ইতিহাস: দুনিয়া মাতানো বিশ্বকাপ

শিলু হোসেন: জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা খেলার নাম ফুটবল। এ নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। কারণ এ খেলায় উত্তেজনা প্রতি সেকেন্ডে কমে-বাড়ে। ফুটবল নিয়ে তাই ফুটবল ভক্তদের আগ্রহ থাকে বছরজুড়ে। রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল, সান্তোস- ক্লাবগুলো নিয়ে তাদের মাতামাতি থাকে সব সময়। এদিকে মেসি, রোনালদো, মুলার, ম্যাথিউস, নেইমার, মার্সেলো, সুয়ারেজ- এদের নিয়ে আগ্রহের কথা তো বলার প্রয়োজনই পড়ে না। জনপ্রিয় এই খেলার সবচেয়ে বড়ো আসর বসে প্রতি চার বছর পরপর। মাত্র এক মাসের এই বিশ্বকাপ ফুটবল আসর দুনিয়া মাতিয়ে রাখে। এ সময় ফুটবলের প্রতি আগ্রহ ফুটবলপ্রেমীদের বেড়ে যায় দ্বিগুণ মাত্রায়। বিষয়টি বিবেচনা করেই প্রকাশিত হয়েছে বইটি।

আগ্রহ, উত্তেজনা, উচ্ছ্বাস এক রকম হলেও একটা প্রতিযোগিতা ফুটবলপ্রেমীদের ভেতরে কাজ করে। তা হলো, এই খেলার খুঁটিনাটি জানা। ফুটবলের খবর যার নখদর্পণে বন্ধুমহলে তার খ্যাতিও কম নয়। ফুটবল নিয়ে, বিশ্বকাপ আসর নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর মানুষ জানতে চায়। এই বইটি পাঠককে সে-কথাগুলো জানার সুযোগ করে দেবে খুবই বিশ্বস্ত ভাবে। কারণ বইটি যিনি লিখেছেন তিনি স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব। লেখক, গবেষক হিসেবে পাঠক মহলে তার খ্যাতি রয়েছে। তিনি সেই খ্যাতির প্রতি সুবিচার করবেন এই বিশ্বাস পাঠকের রয়েছে।

বইটির গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অতীত থেকে বর্তমান অর্থাৎ সম্প্রতি শেষ হওয়া বিশ্বকাপ ফুটবলের সব তথ্যের সঠিক সন্নিবেশ। কবে থেকে ফুটবল খেলার প্রচলন হলো? কোন দেশে ফুটবল মাঠে প্রথম গড়াগড়ি খায়? কীভাবে এর বিবর্তন হলো- তার সঠিক ইতিহাস নিয়ে কিঞ্চিৎ দ্বিমত ফুটবল ইতিহাসবেত্তাদের মধ্যে আছে। তবে ফুটবলের ইতিহাস লেখকরা এর মূল উৎস খুঁজে পেয়েছেন চীনে। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে চীনে ‘টুসু-ছু’ নামে একটি আড়ম্বরপূর্ণ বর্ণাঢ্য খেলা হতো। চীনা ভাষায় ‘টুসু’ মানে ‘পা দিয়ে লাথি মারা’ আর ‘ছু’ অর্থ চামড়ার তৈরি বল। অর্থ এক জায়গায় করে যেটা আসে তা হলো, এখনকার ফুটবল খেলা। সে সময় রাজবাড়ির মাঠে ব্যাপক জাঁকজমকভাবে এই খেলা হতো। রাজা, রানী কিংবা তাদের ছেলেমেয়েদের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজন হতো এই টুসু-ছুর। এই খেলোয়ারদের জিতলে যেমন মূল্যবান পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা থাকতো, ঠিক এর বিপরীতে থাকতো কঠিন তিরস্কার পাওয়ার আশঙ্কা। ভয়, শঙ্কা আর আশা নিয়েই ‘টুসু-ছু’ খেলা হতো। তবে এখনকার মতো তখনও হারজিত নির্ধারণ হতো গোলের মাধ্যমেই। এই ‘টুসু-ছু’ খেলা বিভিন্ন দেশে ঘুরেফিরে ধীরে ধীরে আজকের ফুটবল খেলায় রূপ নিয়েছে।

এক ছন্দে গল্পের মতো চীনের ‘টুসু-ছু’ খেলা থেকে ফুটবল আগমনের ইতিহাস এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মতো তথ্যসমৃদ্ধ একটা বই রচনা করেছেন শামসুজ্জামান খান। ফুটবলের ইতিহাসসহ বিশ্বকাপ ফুটবলের বিভিন্ন সময়ের রোমাঞ্চকর সব ঘটনা দিয়ে পরিপাটি করে বইটি সাজানো। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে ফুটবল কীভাবে এলো তারও একটা বিশ্বাসযোগ্য ইতিহাস বইয়ে উল্লেখ রয়েছে। তবে শুধু ফুটবলের ইতিহাসই নয় ১৯৩০ সালে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ের কাপ জিতে নেওয়ার পুরো ঘটনাও এই বইয়ে উঠে এসেছে।

সর্বকালের সেরা বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা কোন দুই দলের মধ্যে হয়েছে? ফ্রান্স-আর্জেন্টিনা নাকি অন্য কারো মধ্যে? সেইসঙ্গে রয়েছে ১৯৮২, ১৯৮৬, ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার বর্ণনা। কালো মাণিকখ্যাত ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার পেলে থেকে শুরু করে বিশ্বের ফুটবল ইতিহাসে একমাত্র খেলোয়াড় যিনি কোচ, খেলোয়াড় এবং অধিনায়ক থাকাকালে জার্মানিকে বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছেন সেই বেকেন বাওয়ারের কথাও বাদ পড়েনি বইটির সূচিতে।

ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত ফুটবলার সৈয়দ আবদুস সামাদ। ফুটবলের ইতিহাসের পাতায় তার নাম গ্রাহ্যভরে উঠে আসেনি সেভাবে। এর কারণ হয়তো সময় ও তার প্রতি উপেক্ষা। এক সময়ে ফুটবলের জাদুকর বলা হতো সামাদকে। তার ফুটবল জীবনের শুরুটা ছিল আকস্মিক ও নাটকীয়তায় ভরা। কলকাতার এক শক্তিশালী দল খেলতে গেছে পূর্ণিয়ায়। খেলার সময় ঘনিয়ে আসছে কিন্তু পূর্ণিয়া দলের নিয়মিত লেফটইনের খবর নেই। পূর্ণিয়া দলের কর্তা ব্যক্তিদের মাথায় বাজ পড়ার উপক্রম। কে একজন বললেন, সামাদকে নামালে কেমন হয়? অসম্ভব প্রতিশ্রুতিবান খেলোয়াড়। কিন্তু বয়স মোটে বারো বছর। এইটুকু দুধের বাচ্চাকে এত বড়ো খেলায় নামানো নিয়ে ভাবলেন অনেকে। শেষে উপায় না দেখে এই হালকা-পাতলা গড়নের কিশোরকেই সাহস করে মাঠে নামানো হলো। এই খেলায় পূর্ণিয়া দল জিতলো দুই গোলে। অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলো, দুটো গোলই করলো কোনো রকমে কাজ ঠেকানোর জন্যে মাঠে নামানো এই কিশোর-খেলোয়াড় সামাদ!

এরপরই ফুটবলের বিস্ময়কর খেলোযাড় হয়ে উঠলেন সামাদ। পায়ে বল নিয়ে জাদু দেখিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে খ্যাতি পেলেন। সেই কিশোর বয়সে যে জাদু দেখালেন তারপর থেকে তার খেলোয়াড় জীবনে অবিশ্বাস্য সব ঘটনা ঘটতে থাকলো। শাসুজ্জামান খান ফুটবলের ইতিহাস থেকে প্রায় মুছে যাওয়া এই ফুটবলারের নাম ও বিভিন্ন সময়ে তার খেলার সব ঘটনাও বইটিতে উল্লেখ করেছেন।

বিশ্বের নানা প্রান্তের ফুটবল বিশেষজ্ঞ এবং ক্রীড়া সাংবাদিকদের ভোটে ২০১৩ সালের জুনে একটি ‘কাল্পনিক’ ফুটবল একাদশ গঠন করে বিশ্বের জনপ্রিয় ফুটবল সাময়িকী ‘ওয়ার্ল্ড সকার’। মাঠ কাঁপানো সর্বকালের সেরা ফুটবলার ও বিভিন্ন পজিশনে খেলা বিশ্বের ১০৭ জন ফুটবলারের মধ্যে থেকে বাছাই করে এগারো জনকে নির্বাচন করা হয়। যদিও অনেক ফুটবলপ্রেমীদের অনেক প্রিয় ফুটবলার এই একাদশে না থাকায় এ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিশ্বের সেরা ফুটবল একাদশ কীভাবে করা হয়েছে, এর নির্বাচন প্রক্রিয়া কেমন ছিল, কারা বাদ পড়েছে এই একাদশ থেকে এর খুঁটিনাটি বইটিতে উল্লেখ রয়েছে। মানুষ সবসময় সেরা কিছুই জানতে চায়- এক কথায় রেকর্ড জানতে চায়। ফুটবলে  কোন খেলোয়াড় বেশি লাল কার্ড পেয়েছেন, কোন খেলোয়াড় দ্রুত হ্যাটট্রিক করেছেন, বেশি হ্যাটট্রিক করেছেন কে, কোন দল বেশিবার ফাইনালে উঠেছে, বিশ্বকাপ ফুটবলের এমন সব রোমাঞ্চকর তথ্যে ভরা ‘দুনিয়া মাতানো বিশ্বকাপ’ বইটি। আর্ট পেপারে ছাপা রঙিন ছবি বইটিকে আরো গুরুত্ববহ করে তুলেছে। বইটি ফুটবলপ্রেমীদের সংগ্রহে রাখার মতো একটি বই।

বই: দুনিয়া মাতানো বিশ্বকাপ
লেখক: শামসুজ্জামান খান
প্রথম সংস্করণ: ফেব্রুয়ারি, ২০১৮
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ
প্রকাশক: বাংলাপ্রকাশ
মূল্য: এক হাজার টাকা





রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ জুলাই ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়