ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সংকটের এক বছর

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৬, ২৫ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোহিঙ্গা সংকটের এক বছর

কক্সবাজার প্রতিনিধি : ‘‘আমার ছেলে যখন তার বউকে খুঁজে পায়নি, তখন তার মাথা খারাপ হয়ে যায়। তখন মিয়ানমার বাহিনীর পিছু ছুটতে থাকে। এক পর্যায়ে মিয়ানমার বাহিনী তাকে গুলি করতে থাকে। মনে হয়, একশতের অধিক গুলি তাকে করেছে। যা লুকিয়ে দেখতে হয়েছে আমার। পরে প্রাণ বাঁচাতে নাতিদের নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসি। ছেলের মৃতদেহ দেখতে পাইনি আর ছেলের বউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।’’ কাঁদতে কাঁদতে এ কথা বলছিলেন ৬৫ বছরের বৃদ্ধা আনোয়ারা বেগম।

নুর নবী (১৪), রুজিনা (১২), ইউসুফ নবী (১০) ও মো. নবী (৭) নাতি-নাতনিদের নিয়ে পালিয়ে আসা আনোয়ারা বেগম আশ্রয় নিয়েছেন কক্সবাজারের উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পে। ঘটনার এক বছর পার হলেও ভুলতে পারছেন না ছেলেকে গুলি করে হত্যার ঘটনা।

শুধু আনোয়ারা বেগম নন, একই অবস্থা তার পাশের ঝুঁপড়িতে থাকা হাসিনা বেগমের। মিয়ানমার সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে তার স্বামী। এখন বৃদ্ধা মা ও দুই শিশু কন্যা নিয়ে রয়েছেন আতংকে।

 



হাসিনা বেগম বলেন, স্বামীকে মিয়ানমারে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এরপর ৩ ও ৫ বছরের দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয়ে আছেন। কিন্তু এখানে বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার খাদ্যসামগ্রী দিয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছেন। কিন্তু যখন মিয়ানমারে ফিরে যাবেন, তখন ওখানে কী খেয়ে বৃদ্ধা মা ও সন্তানদের নিয়ে বাঁচবেন।

গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনা বাহিনীর নির্যাতনে অনেক রোহিঙ্গা হারিয়েছে মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী কিংবা ছেলে-মেয়ে। এ ঘটনার এক বছর পার হলেও বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা তাদের স্বজনহারার শোক ভুলতে পারছে না। স্বজনদের দাবি, এ সব হত্যার জন্য মিয়ানমার বাহিনীকে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনা হোক। জেলার উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া স্বজনহারা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের অনেকের অবস্থা এ রকম। তারা চান এ সব হত্যার বিচার।

মা-বাবা হারানো রোহিঙ্গা শিশু নুর নবী (১৪) বলে, চোখের সামনে বাবাকে হত্যা করার দৃশ্য দেখেছে। মাকে খুঁজে পায়নি। এখন মাঝে মাঝে ঘুমে এ সব স্বপ্ন দেখলে কান্নায় বুক ফেটে যায়। ঘুমও আসে না। যত দিন না মা-বাবার হত্যাকারীর বিচার হবে, ততদিন তাকে কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে।

 



ভাই হারানো রোহিঙ্গা প্রতিনিধি ছুরুত আলম (৩৭) বলেন, বাংলাদেশ সরকার তাদের সাহায্য করছে। এখন তারা চান, যারা তাদের মা-বোনদের নির্যাতন ও হত্যা করেছে, তাদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের আওতায় আনা হোক।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম জানান, স্বজনহারা এ সব জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের শোক কাটিয়ে ওঠা সহজে সম্ভব নয়। তারপরও সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় তাদের দুঃখ-যন্ত্রণা কাটিয়ে ওঠানোর আপ্রাণ চেষ্টা চলছে।

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বয় কমিটি আইএসসিজি’র দেওয়া তথ্যমতে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৭ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে স্বজনহারা রয়েছে ৪০ হাজার।



রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/২৫ আগস্ট ২০১৮/সুজাউদ্দিন রুবেল/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ