ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

আইয়ুব বাচ্চুর বিদায়: ফেসবুকে শোকের ছায়া

সাইফ বরকতুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০৯, ১৮ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আইয়ুব বাচ্চুর বিদায়: ফেসবুকে শোকের ছায়া

সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু

সাইফ বরকতুল্লাহ : বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের অন্যতম অগ্রপথিক, জনপ্রিয় ব্যান্ডদল এলআরবির লিড গিটারিস্ট ও ভোকাল আইয়ুব বাচ্চু আর নেই। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে  তিনি মারা যান। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শিল্পসাহিত্য ও শোবিজ অঙ্গণে। শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমেও তার স্মৃতিচারণ করে তাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন ভক্ত অনুসারীরা।

কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক রাজু আলাউদ্দিন তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আইয়ুব বাচ্চুর গান যে আমি খুব শুনেছি তা নয়। তাছাড়া এই ধারার গানের প্রতি আমার কখনোই প্রবল কোনো আকর্ষণ তৈরি হয়নি। তবে আমি না শুনলেও-ভালো করেই জানি-এদেশের বহু মানুষের হৃদয় তিনি জয় করেছিলেন তার গান ও কণ্ঠ দিয়ে। আমার খারাপ লাগলো তিনি অকালে চলে গেলেন, মাত্র ৫৬ বছর বয়সে।’

কবি, অনুবাদক ও সম্পাদক ড. মাসুদুজ্জামান তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি আমাদের প্রেসলিকে।’

কবি পিয়াস মজিদ লিখেছেন, ‘আইয়ুব বাচ্চু মানে নস্টালজিক নব্বই দশক, আমাদের উরাধুরা শৈশব-কৈশোর, ভাইবোন বন্ধু মিলে ঈদের দিনের ম্যারাথন গান-আড্ডা, জিলা স্কুল থেকে টিফিন পিরিয়ডে অডিও জিপসিতে গিয়ে এলবামের খোঁজ নেয়া, নতুন নতুন ক্যাসেট প্লেয়ারে বাজানো, গানের ভেতর দিয়ে চারপাশটা ঝলমলিয়ে ওঠা বা বুকের ভেতর ননস্টপ বাজতে থাকা বিষাদের ভায়োলিন...আইয়ুব বাচ্চুর সাথে শুধু আইয়ুব বাচ্চুই চলে যান না, আমাদের প্রজন্মও চলে যাই যেন একটু একটু করে আমাদের আত্মার ব্যান্ড থেকে, রূপালি গিটার ফেলে...দূরে বহুদূরে...।’

কবি ও ঐহিক সম্পাদক মেঘ অদিতি তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘কেন এমন সব খবর আসে সকাল হলেই! বদলে যাবার ডাক দিয়ে সে মানুষও কী করে একটা ছবি হয়ে যায়...। সেইসব দিন আর জেগে থাকা অনেকগুলো রাত-আপনি আমাদের হাত ধরেই ছিলেন। এভাবে বিদায় বলতে ভাল লাগছে না মায়েস্ত্রো, সত্যি বলছি!’


সাংবাদিক ও লেখক শান্তা মারিয়া লিখেছেন, ‘নব্বইয়ের দশকে আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি তাদের তারুণ্যের অনেক আনন্দ-বেদনায় জড়িয়ে আছেন আইয়ুব বাচ্চু। ঘরোয়া আড্ডা কিংবা পিকনিক, বন্ধু-বান্ধবরা আইয়ুব বাচ্চুর গান গাইতো। কষ্ট পেতে ভালোবাসি ছিল মুখে মুখে। এই গানটি কত হাসি-ঠাট্টা, আনন্দ, প্রেমের সাক্ষী। পরে সাংবাদিকতা পেশায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয়। জনকণ্ঠে তাপসদার আনন্দকণ্ঠ পাতায় তাঁকে নিয়ে লিখেছিও। আজ এখানে (চীনে) আবহাওয়া খুব সুন্দর। পরিষ্কার নীল আকাশ। আমিও কাজে ব্যস্ত ছিলাম খুব। হঠাৎ করেই বাচ্চুভাইয়ের চলে যাবার খবরে মনে হলো মধ্য শরতের আকাশ তার সবটুকু সৌন্দর্য্য হারিয়েছে। শোক, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ছাপিয়ে মনে হচ্ছে আমাদের সেই তরুণবেলার অনেকটুকু নিয়ে চলে গেলেন আইয়ুব বাচ্চু। যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন বাচ্চুভাই।’

কবি মারুফ রায়হান লিখেছেন, ‘গুণীর প্রস্থানে প্রকৃতির গুনগুন থেমে যায়...।’

গল্পকার মোস্তফা অভি লিখেছেন, ‘আর বেশি কাঁদালে উড়াল দেব আকাশে। আহা শিল্পী! সেই তো উড়েই গেলেন লাখো ভক্ত হৃদয় কাঁদিয়ে। এই তো সেদিন কলকাতার সারেগামাপা অনুষ্ঠান দেখছিলাম ইউটিউবে। পুরোদস্তুর আউলা সুরতে বাউলার বেশে গান করছিলেন বাংলাদেশের গর্ব নোবেল। বিচারকের আসনে বসা হরিহরজি আরেকটি গানের অনুরোধ করলেন। আর উপস্থাপন যীশু সেন গুপ্ত বললেন আইয়ুব বাচ্চুর গান করতে। কীরকম মাতিয়ে ছিলেন ভক্ত হৃদয়! কি এপার বাংলা কি ওপার। কেন এত অভিমান আইয়ুব বাচ্চু। কেন আরো কিছুদিন থাকতে পারলেনা ধরাধামে? ভালো থাকুন পরাপারে।’

লেখক ও সাহিত্যিক তাপস রায় লিখেছেন, ‘আজ মন্দিরগু‌লো‌তে আইয়ুব বাচ্চুর গান বাজ‌ছে।’

কথাসাহিত্যিক শামস সাইদ লিখেছেন, ‘ভালোবাসা আসলেই আড়ালে থাকে। ভালোবাসা দেখেননি আইয়ুব বাচ্চু। এই ভালোবাসা দেখলে আবার ফিরে আসতেন তিনি। এত ভালোবাসা রেখে দূরে চলে যাওয়া যায় না।’

ঔপন্যাসিক হারুন পাশা লিখেছেন, ‘এখন অনেক রাত শুনতে শুনতে কষ্ট উদযাপন করতে যার গানে আশ্রয় মিলতো সেই শিল্পী, প্রিয় শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু আমাদের কাঁদিয়ে উড়াল দিলেন আকাশে। সেই স্কুল জীবন থেকে আপনার গান শুনে শুনেই তো লেখালেখির চর্চা শুরু হয় গান লিখে। প্রেরণা তো ছিলেন আপনি, আপনার গাওয়া গান। শত শত গান লিখেছি। বিটিভিতে ঈদের দিনে সন্ধ্যায় ব্যান্ডের গান হবে, দেখবো, যাই না কোথাও ঘুরতে; কেবল আপনার গান দেখব, সেজন্য। তারা ভরা রাতে আমরা এখন কাকে বোঝাবো আপনার অনুপস্থিতির কথা। চোখের জলে আপনার যাওয়া দেখছি। আমার একটা নির্ঘুম রাত আপনার হাতে তুলে দিতে পারলে বুঝতেন কষ্ট কাকে বলে, আপনাকে ছাড়া। ক্যাফেটেরিয়ায় মুহূর্তে ভালো লেগে যাওয়া মেয়েটিকে বন্ধু মিলে বলেছি আপনার গান ধার করে, যেও না চলে খানিকবাদে রং লাগিবে আসমানের বাঁকে। বলেছি, আমার উকিল মুক্তার নাই কী করে তোমার কাঠগড়ায় দাড়াই। প্রিয়জনকে বলেছি তোমার চোখে দেখলে আকাশের নীল ভালো লাগে না। এখন তো অনেক অভালোলাগা নিয়ে কষ্ট পেতে ভালোবাসি বলে কার কাছে ছুটে যাবো। হাঁসতে দেখি, কাঁদতে দেখি মানুষকে, কেবল দেখা হবে না আপনাকে। আপনাকে ছাড়া আমাদের ব্যান্ড জগৎ অসহায়। গেয়েছেন, ভাঙা মন নিয়ে তুমি আর কেঁদো না, আমরা কাঁদিনি, কিন্তু এখন তো কাঁদছি, আপনার অনুপস্থিতিতে। ভাঁজ করা স্মৃতির পৃষ্ঠা খুলে দেখবো আপনার রচিত আকাশ। হে প্রিয় শিল্পী, রূপালি গিটারের সুরে পৌঁছে দিলাম আমার ভালোবাসা। ভালো থাকুন ওপারে।’

সাহিত্যিক ও সাংবাদিক রণজিৎ সরকার লিখেছেন, ‘সময় চলে যায়। মানুষ চলে যায়। স্মৃতিগুলো থেকে যায়।’




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ অক্টোবর ২০১৮/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়