ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

এক গাছের ২২ মাথা

খায়রুল বাশার আশিক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ১ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এক গাছের ২২ মাথা

খায়রুল বাশার আশিক : একটি খেজুর গাছে সাধারণত একটি মাথা থাকা স্বাভাবিক হলেও এই গাছে রয়েছে ২২টি মাথা। একই কাণ্ডের ওপর ২২ মাথাওয়ালা এই গাছটির সন্ধান মিলেছে বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার ৭নং হারতা ইউনিয়নের কালবিলা গ্রামে কালবিলা জামে মসজিদের সামনে। এই খেজুর গাছটিকে কেন্দ্র করে গ্রাম জুড়ে প্রচলিত হয়েছে নানা ধারণা।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, এই গাছটির বয়স হবে প্রায় ১৫ বছর। রাস্তার কাছে ঝোপঝাড়ে কমপক্ষে ১৫-১৬ বছর আগে জন্ম নিয়েছে এই গাছটি। গত বছর দুয়েক আগে হঠাৎ করে স্থানীয় মানুষ দেখতে পায় এই গাছ থেকে একাধিক মাথি (মাথা) গজিয়েছে। মাথিগুলো বড় হবার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সবার চোখ পরে এই গাছটার দিকে। মাথিগুলো বড় হবার পর তা গুনে দেখেছে স্থানীয় জনগণ। একাধিকবার একাধিক ব্যক্তিরা মাথিগুলো গুনে এই গাছটিকে তারা ২২ মাথির খেজুরগাছ হিসেবে নামকরণ করেন।

তারা আরো জানালেন, গাছটির কোনো ব্যক্তিগত মালিকানা নেই। বিগত বছর তিনেক আগেও কেউ না কেউ গাছটি থেকে রস সংগ্রহ করত। তবে ভক্তি কিংবা এই ব্যতিক্রমী গাছের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বিগত দুই বছর কোনো শীত মৌসুমে এই গাছ থেকে রস আহরণ করা হয়নি।

কোনো কারণে গ্রামে কোনো দূরবর্তী লোক আসলে তারা গাছটিকে একবার দেখে যায়। আবার কেউবা চলমান গাড়ি, সাইকেল, মটরসাইকেল থামিয়েও এই গাছটাকে একনজর দেখে যায়। কালবিলা জামে মসজিদের একদম সামনেই রাস্তার পাশেই এই গাছের অবস্থান হওয়ায়, গাছটি সবার দৃষ্টি কেড়ে নেয়।

 



গাছটি নিয়ে কথা হলে উক্ত গ্রামের স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি হাসান ফরাজি (৭০) জানান, বিগত দুটি বছর বর্ষার মৌসুমে স্থানীয়দের উদ্যোগে গাছটি পরিষ্কার-পরিছন্ন করানো হয়েছে। গাছটিতে একসঙ্গে ২২টি মাথি জন্ম নিলেও এ বছর ৪টি মাথি একটু শুকিয়ে আছে। বাকি ১৮টি মাথিই ভালোভাবে বেঁচে আছে।

এই গ্রামের বাসিন্দা ও কালবিলা ঘাটের নৌকার মাঝি রবী হালদার বলেন, কিভাবে কেন খেজুর গাছটি এমন ২২ মাথির গাছে পরিণত হলো তা জানিনা। তবে মানুষ গাছটাকে এখন সম্মান করে। পরিষ্কার-পরিছন্ন করে দেয় নিজেদের ইচ্ছায়। আবার কেউবা সালাম দেয়, কেউ নমস্কার করে।

সমাজবিজ্ঞান গবেষকদের মতে, গাছ ভক্তিবাদের বিষয়টি ইঙ্গিত করে আদিম সমাজের টোটেম ধর্মকে। নৃবিজ্ঞান শাস্ত্র অনুযায়ী টোটেম হচ্ছে আদিম অনগ্রসর জনগোষ্ঠীতে বিদ্যমান থাকা এক ধরনের ধর্মীয় সংস্কৃতি। টোটেম হল এমন এক ধরনের বিশ্বাস, যার মাধ্যমে একটি জনগোষ্ঠী কোনো এক বিশেষ প্রাণী বা গাছের সঙ্গে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলতো। আদি অস্ট্রেলিয়রা টোটেম গাছকে পূজা করতো। এসব বিশ্বাস এখন আধুনিক সমাজে বিলুপ্ত প্রায়।

উদ্ভিদবিজ্ঞান অনুযায়ী, সাধারণত হরমোনজনিত কারণে একবীজপত্রী উদ্ভিদের একাধিক শাখা প্রশাখা জন্ম নিতে পারে। যেকোনো গাছের জেনেটিক সমস্যার কারণে স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় কিংবা গাছটি কোনোভাবে অস্বাভাবিক বৃক্ষে পরিণত হতে পারে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ নভেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়