ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

স্বপ্নের নাম ‘শুনতে কি পাও’

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ৯ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বপ্নের নাম ‘শুনতে কি পাও’

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : মানুষ বাঁচে তার স্বপ্নের জন্য। স্বপ্নপূরণে অসম্ভবকে সম্ভব করতে সে লড়াই করে। কারণ প্রতিটি মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। তবে সবাই যে শুধু নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে এমন নয়, কিছু মানুষ ব্যতিক্রম হয়। তারা স্বপ্ন দেখে অপরের জন্য।

শুনতে কি পাও- তেমনি এক স্বপ্নের নাম।  এই স্বপ্নের শুরু ২০১৩ সালে প্রান্তিক চৌধুরী, নাফিস উর রহমান, ফাহিম ফারুক, রাফিদ রহমান, ঐতিহ্য তূর্য্য, রওনাক আর রূপকের হাত ধরে। মূলত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে থাকার প্রত্যয় নিয়েই সংগঠনটির পথচলা। পাশাপাশি রক্তদানে উৎসাহিত করা এবং ডাটাবেইজ তৈরি করে তারা। এখন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর প্রায় ৩ হাজার রক্তদাতার ডাটাবেইজ আছে সংগঠনটির হাতে। অন্যদিকে মেডিকেল ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ব্লাড গ্রুপিং, ডায়বেটিস এবং রক্তচাপ পরীক্ষার মাধ্যমে সেবা প্রদানও তারা করছে।

 



সংগঠনটির অন্যতম উদ্যোক্তা প্রান্তিক চৌধুরী বলেন, ‘শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিবছর আমরা প্রায় এক হাজার শিশুর কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করি শিক্ষা উপকরণ। ঢাকা কিংবা ঢাকার বাইরে প্রতিবছরই চিত্রাঙ্কন কিংবা নানা ধরণের সাংস্কৃতিক কাজের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়ালেখায় উৎসাহিত করার চেষ্টা করি।’ সংগঠনটির সহযোগিতায় প্রতিবন্ধী মানুষ ও পিছিয়ে পড়া দরিদ্র নারীদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আওতায় এখন পর্যন্ত প্রশিক্ষণ পেয়েছে প্রায় ৫০জন নারী। মোট ১৭জন শ্রবণ প্রতিবন্ধী পেয়েছে হেয়ারিং এইড। প্রায় একশজনের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে রিকশা, দোকান, ফ্রিজসহ সাবলম্বী করার নানান উপকরণ। কুষ্টিয়ায় ‘উদয় মা ও শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র’র মায়েদের জন্য কিনে দেয়া হয়েছে তিনটি অটো রিকশা। সেখান থেকে আয় হওয়া প্রতিমাসে ২০হাজার টাকা দিয়ে চলছে মায়েদের মাসিক খরচ। এছাড়া গত দুইবছর বন্যার পর বীজ এবং সার দিয়ে প্রায় ১৬০জন কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে শুনতে কি পাও।

সূচনালগ্ন থেকে অসাম্প্রদায়িক থাকার মনোভাব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে শুনতে কি পাও। ঈদের পাশাপাশি পূজার সময় হরিজন বাচ্চাদের জন্য ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা তাদের সবসময়ই থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার দুর্গাপূজার আগে তারা গিয়েছিল নাটরের হরিজন কলোনীর ‘আলোকিত শিশু স্কুলে’। ২০১৬ সালে একই স্কুলে তারা পূজায় শিশুদের জন্য নতুন জামা বিতরণ করে। উল্লেখ্য স্কুলটির ৪৩জন শিশুর মধ্যে ৩৩জনই হিন্দু সম্প্রদায়ের। দুটি ক্লাসরুমে শিফট করে পড়ানো হয় শিশুশ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশুদের। স্কুলে ছোটখাটো একটি লাইব্রেরিও তৈরি করে দেয়া হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে। সেখানে ছড়া, কমিক, ঈশপের গল্প, মীনা-রাজুর গল্প, ভূতের গল্প, সাধারণ জ্ঞান, গণিত, বাংলা আর ইংরেজি শিক্ষার প্রায় ৪২৭টি বই রয়েছে। চেয়ার-টেবিলে বসে বইগুলো যেন শিশুরা পড়তে পারে রয়েছে সেই ব্যবস্থা। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের সুপেয় পানির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

 



সংগঠনটির অর্থায়ন হয় সদস্যদের চাঁদা ও শুভাকাঙাক্ষীদের সহযোগিতায়। নাফিস উর রহমান বলেন, আমাদের ইচ্ছে আছে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে বান্দরবানের থানচিতে আরেকটি লাইব্রেরি অর্থাৎ বইঘর করার। আর ‘মানবিকতার তাগিদে, মানুষের পাশে’ থাকার প্রত্যয় নিয়েই সংগঠনটিকে এগিয়ে নেয়া।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ নভেম্বর ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়