ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কালুয়া’স হোমস : বিড়ালের শেষ আশ্রয়স্থল

মো. হৃদয় সম্রাট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৮, ১০ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কালুয়া’স হোমস : বিড়ালের শেষ আশ্রয়স্থল

মো. হৃদয় সম্রাট : প্রতিদিন মারা যাচ্ছে হাজারো গৃহপালিত প্রাণী। তার মধ্য বিড়াল ও কুকুরের সংখ্যাই বেশি। এই মৃত্যু দেখে কেউ পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে, কেউবা বলছে- ইশ! এদের দেখার কেউ নেই। কিন্তু তারাও তো প্রাণী, তাদেরও পরিবার আছে, হতে পারে আমরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব! তাই বলে কি আমরা তাদের সংরক্ষণ করবো না। এভাবেই করুণ কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন কালুয়া’স হোমসের প্রতিষ্ঠাতা আদি দ্য গুরু।

ছোটবেলার বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন নিজের পোষা বিড়ালের সঙ্গে। তাই হয়তোবা বড় হয়েও বিড়ালের প্রতি ভালোবাসার মোহ ঠিক কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। তাই তাদের নিরাপত্তায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলেন বিড়ালের আশ্রয় কেন্দ্র (কালুয়া’স হোমস)। সাধারণত এখানে তিনি রাস্তায় পড়ে থাকা আহত/অসুস্থ বিড়াল এনে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করেন। বিড়ালগুলো যদি সুস্থ বা পঙ্গু হয় তাহলে তিনি চিরতরে এখানেই তাদের থাকার ব্যবস্থা করেন।

বর্তমানে তার আশ্রয়ে আছে প্রায় ৩০টি বিড়াল। প্রতিটা বিড়ালের রয়েছে নাম। নাম ধরে ডাকলে সেই বিড়ালটি এগিয়ে আসে। বিড়ালটি কাছে এলে তিনি শুরু করেন আলাপচারিতা। বিড়ালও মাথা নাড়ে, দেখে মনে হয় তার সব কথাই যেন বিড়ালটি বুঝতে পারছে। এভাবেই বিড়ালের সঙ্গে আলাপচারিতা আর দেখাশোনা করেই দিন পার করছেন তিনি।

 



আদি হাজারীবাগে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে খুব ভালো একটা পোস্টে চাকরিও করেছিলেন কিছুদিন। এ সময় তিনি তার বাসায় একটা বিড়াল পালতেন। একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে দেখেন তার পোষা বিড়ালটিকে কুকুর কামড়ে ধরে তার সামনেই মেরে ফেলছে। ঘটনাটি দেখে তিনি প্রচণ্ড আহত হন। এ ঘটনার পর চাকরি থেকে ইস্তফা নিয়ে নিজেই শুরু করেন অসুস্থ বা আহত বিড়ালের আশ্রয় দেয়ার কাজ। আদি বলেন, ‘ভাই আমি আবেগের বসে এত বড় একটা কাজ করে ফেলবো বুঝতে পারি নাই। সেদিন যদি ওই ঘটনার পর আমি বিড়ালের শেল্টার না করতাম তাহলে আমার ভাগ্য অন্যকিছু হতো! তবুও আমি খুশি এই কাজটা করতে পেরে। কারণ তারা আমাদের সমাজেরই একটা অংশ। আজ যদি আমরা তাদের ভালোবাসতে না পারি তাহলে কিভাবে আমরা অন্য মানুষগুলোকে ভালোবাসবো।’

আদি আফসোস নিয়ে বলেন, এই যে দুঃখিনী (বিড়ালের নাম) কে দেখতে পাচ্ছেন। ওকে আমি উদ্ধার করি পেটে একটা বটি সহকারে। অনেক কষ্ট হয়েছে তাকে বাঁচাতে। হাসপাতালে প্রায় ২ ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পর তাকে বাঁচাতে আমরা সফল হই। হঠাৎ ক্ষুদ্ধ হয়ে তিনি বলেন ওঠেন, যেই লোকটা এই নিরীহ বিড়ালকে মারতে পারে সে তো তার পরিবারের উপরও একই আচরণ করতে পারে। তিনি তার ভবিষতের পরিকল্পনা সম্পর্কে রাইজিংবিডিকে জানান, আমি আর আগের মতো এদের পরিচর্যা করতে পারি না। মেরুদণ্ডে অনেক ব্যথা করে নিচু হয়ে কাজ করতে গেলে। এই মাসে ৬০০০ টাকা দিয়ে একটা লোককে ঠিক করেছি। নিজেই হিমশিম খাচ্ছি এই বিড়ালগুলোর খাবারদাবার আর যাবতীয় খরচ দিয়ে। নিজের দোকান আর কিছু বন্ধুদের সহায়তায় এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এদেরকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার। কিন্তু আস্তে আস্তে ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। দিনে দিনে এটাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সমস্যার পরিমাণও যেন বাড়ছে।

একটি বড় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, আমি এখনও স্বপ্ন দেখি বিড়াল, কুকুরদের নিয়ে অনেক বড় একটা বাড়ি করার। যেখানে থাকবে শত শত অসুস্থ ও আহত প্রাণী। আস্তে আস্তে তাদের সুস্থ করে ফিরিয়ে দেব সমাজে।

তার ফেসবুক গ্রুপের লিংক : 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ নভেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়