ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

১২৩ বছরে কুড়িগ্রাম পাবলিক লাইব্রেরি

সুজন মোহন্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫২, ১১ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১২৩ বছরে কুড়িগ্রাম পাবলিক লাইব্রেরি

সুজন মোহন্ত : কুড়িগ্রাম জেলার প্রাচীনতম একটি প্রতিষ্ঠান কুড়িগ্রাম পাবলিক লাইব্রেরি। ১৮৯৫ সালে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসন ও শহরের বুদ্ধিজীবি এবং শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে জেলার পুরাতন কোর্ট চত্বরে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠায় যারা অবদান রেখেছিলেন তাদের মধ্যে স্থানীয় জোতদার ও ম্যাজিস্ট্রেট যোগেশ চন্দ্র রায় চৌধুরী ছিলেন অন্যতম।

প্রতিষ্ঠাকালে লাইব্রেরিটির নামকরণ করা হয়েছিল, ‘কুড়িগ্রাম ভিক্টোরিয়া পাবলিক লাইব্রেরি’। যা তৎকালীন মহকুমা প্রশাসন কুড়িগ্রামের প্রথম জ্ঞানভান্ডার ছিল। যাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে এই অঞ্চলে বৃদ্ধি পায় জ্ঞান চর্চার। লাইব্রেরিটির শুরুতে একটি নিজস্ব ভবন থাকলেও, ১৯৩৮ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় লাইব্রেরিটির স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তীতে লাইব্রেরিটি তৎকালীন কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুলের একটি টিনশেড কক্ষে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু আবার বাধ সাধলো বন্যা। ১৯৫৬ সালের বন্যায় কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুলটির বিশাল ভবনটি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার সঙ্গে লাইব্রেরির জন্য বরাদ্দ কক্ষটিও ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর স্কুলটি অন্যত্র স্থানান্তর করা হলেও, লাইব্রেরিটি স্থানান্তর করা হয়নি। মাঠের এক কোণে অস্থায়ীভাবে দাঁড়িয়ে থাকে লাইব্রেরিটি। অতঃপর নদীর তীর প্রতিরক্ষা কার্যক্রম জোরদার করা হলে, ধরলা নদী চর ফেলে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে ফিরে যায়। আর পরবর্তীতে স্কুলটির জমি দখলি স্বত্ব হিসেবে লাইব্রেরির অধীন হয়ে যায়। পরবর্তীতে, স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে ১৯৫৭ সালে লাইব্রেরিটির ব্যাপক সংস্কার করা হয়। সংস্কার করার সময় ‘ভিক্টোরিয়া’ কথাটি পরবর্তীতে বাদ দিয়ে, লাইব্রেরিটির নামকরণ করা হয় ‘কুড়িগ্রাম পাবলিক লাইব্রেরি’ নামে। দেশ স্বাধীন হবার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত লাইব্রেরিটি শহরের প্রাণকেন্দ্র রূপে পরিগণিত হয়। ১০ হাজার বইয়ের জন্য ৩টি বই রাখার আলমারি, ২টি টেবিল ও কিছু চেয়ার দিয়ে ওই সময় চলেছিল এর কার্যক্রম।

কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী লাইব্রেরিটি দখল করে সেখানে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। ওই সময় তারা লাইব্রেরির অনেক বই ও আসবাবপত্র পুড়িয়ে ধ্বংস করে। দেশ স্বাধীন হবার পর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কিছু অনুদান আর স্থানীয়দের উদ্যোগে পুনরায় কোনোভাবে লাইব্রেরিটি সংস্কার করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে রাজশাহী বিভাগ উন্নয়ন তহবিল ও কুড়িগ্রাম পৌরসভার আর্থিক সহায়তায় লাইব্রেরির ৩ রুম বিশিষ্ট ১টি পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই বর্তমানে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটি লাইব্রেরিটি পরিচালিত করে আসছে। লাইব্রেরিটির গঠনতন্ত্র মোতাবেক পদাধিকার বলে পরিচালনা কমিটির সভাপতি হবেন জেলার জেলা প্রশাসক। আর অন্যান্য ১০টি পদের মধ্যে হবে একজন সহ-সভাপতি, একজন সাধারণ সম্পাদক, একজন যুগ্ম সম্পাদক ও বাকি সাতজন কার্যকরী সদস্য।
 


কুড়িগ্রাম জেলার শত পুরোনো, ঐতিহ্যবাহী এই জ্ঞানভান্ডারটি বর্তমানে নানান আধুনিকতার সংকটে ভুগছে। লাইব্রেরিটি এখনো তৎকালীন নির্মিত পুরোনো ভবনটিতে বিদ্যমান। নেই বই রাখার জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, পাঠকদের বসার মতো পর্যাপ্ত চেয়ার-টেবিল। নেই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার উপযোগী উপকরণ। লাইব্রেরিটিতে বর্তমানে বই রয়েছে ৬ হাজার। একজন খণ্ডকালীন লাইব্রেরিয়ান দিয়ে চলছে এর বর্তমান কার্যক্রম। এত সংকট থাকার পরেও ছুটির দিন ছাড়া লাইব্রেরিটি প্রতিদিন নিয়ম করে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা ও বিকেল ৪টা থেকে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। গড়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জন করে শিক্ষার্থী আসে এখানে বই পড়তে।

লাইব্রেরিটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন জানালেন, লাইব্রেরিটির ৩টি কক্ষের মধ্যে ১টি অফিস রুম ও ১টি লাইব্রেরি হিসেবে চালু রয়েছে। বাকি ১টিতে নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা কর্ণার চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে সেটি চালু করা সম্ভব বলে জানান তিনি।

লাইব্রেরিটির খণ্ডকালীন লাইব্রেরিয়ান নয়ন সরখেল জানান, তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে লাইব্রেরিটিতে ১টি কম্পিউটার স্থাপন করা প্রয়োজন, এতে করে লাইব্রেরির বইয়ের তথ্য ও নিয়মিত পাঠকদের তালিকা সংরক্ষণ করা সহজ হবে।

১২৩ বছরের এই পুরোনো লাইব্রেরিটি কালের স্বাক্ষী হয়ে আজ সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে কুড়িগ্রাম জেলার পুরাতন শহরে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ নভেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়