ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আনন্দে বাঁচতে তরুণদের আনন্দ আশ্রম

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ১৮ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আনন্দে বাঁচতে তরুণদের আনন্দ আশ্রম

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : কেউ ভালো লিখতে পারে, কেউ ভালো গান করে, কেউ ভালো আবৃত্তি করতে পারে। কেউ অভিনয় করতে পারে। কেউ আবার ভালো সুর করতে পারে। এমন সব ক্রিয়েটিভ তরুণদের এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে কাজ করে আনন্দ আশ্রম। হতাশা ভুলিয়ে তরুণদের সফল হতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে কাজ করছে সংগঠনটি।

আনন্দ আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মশিউর রহমান শান্ত। আনন্দ আশ্রমের শুরুটা কিভাবে? এক আড্ডায় আশ্রমের গল্প নিয়ে কথা হয় শান্তর সঙ্গে। শান্ত জানালেন, ‘ওই সময় আমি মূলত বেকার ছিলাম। একটি উপন্যাস লেখার জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। রেডিওতে শো করার কারণে আগে যারা খোঁজখবর নিত, চাকরি ছাড়ার পর রূপ পুরো ভিন্ন হয়ে গেল, কেউ কথা বলে না, খোঁজও নেয় না। আমি একা একা সময় কাটাতাম উপন্যাস লিখে আর ইউটিউবের ভিডিও দেখে। ইউটিউবে বসে বসে টে-টেক্স টে-টক দেখতাম। দেখতাম ইউরোপ আমেরিকার ছেলেমেয়েরা কি সুন্দর কথা বলছে ওপেন প্ল্যাটফর্মে। তখন ভাবলাম বাংলাদেশে যদি এমন করা যায়, তাহলে কেমন হয়। আমি খোঁজ নিয়ে দেখলাম বাংলাদেশে ওপেন প্ল্যাটফর্ম যে কয়টা আছে, ওগুলোতে যেতে অনেক টাকা লাগে। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের পক্ষে পাঁচ-সাত হাজার টাকা খরচ করে সেমিনারে কথা বলতে যাবে, সেটা সম্ভব নয়। তখন আমার মাথায় আসলো এ রকম একটা প্ল্যাটফর্ম করা দরকার। যেটা ওপেন ফর অল থাকবে। সব রকমের ছেলেমেয়েরা থাকবে, বিশেষ করে যারা ক্রিয়েটিভ। এভাবে ২০১৬ সালে নভেম্বরে আনন্দ আশ্রমের যাত্রা শুরু।’

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে মজার ব্যাপার আনন্দ আশ্রম দ্রুত অনেক মানুষের সাড়া পায়। প্রথম সেশনে মাত্র ৫০ জন অংশ নিলেও পরের সেশনগুলোতে অংশ নিয়েছে ৩০০ এর বেশি মানুষ। আমাদের প্রতিটি সেশন হয়ে উঠে ক্রিয়েটিভ মানুষদের মিলন মেলা।

আনন্দ আশ্রম প্রতি মাসে একটি করে সেমিনার করে। যেখানে গান হয়, আড্ডা হয়, বই হাত বদল করা হয়, একজন সফল মানুষ হাজির হয় তার জীবনের গল্প নিয়ে। এখানে মনের দিক থেকে তরুণ এমন যে কেউ যুক্ত হতে পারে। সাধারণত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে অধিকাংশ আয়োজন হলেও সাভার সিআরপিতে প্রতিবন্ধী পঙ্গু মানুষদের নিয়েও আনন্দ আড্ডার আয়োজন করে আনন্দ আশ্রম। দুই বছরে আশ্রমের ২৫টি সেশনে যুক্ত হয়েছে ঢাবি, স্টামফোর্ড, নর্দান, জাবি, জবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হাজারের অধিক তরুণ-তরুণী।



মাখন লাল (২২)। ঢাকা সিটি কলেজ থেকে সদ্য সিএসসি অনার্স শেষ করেছেন। মাখন লাল ভালো গান জানেন, অথচ কোথায় গাইবেন তেমন প্ল্যাটফর্ম পাচ্ছিলেন না। একবার গলায় ক্যামিকেল ঢুকে গিয়ে মাখন লালের গলা নষ্ট হয়ে যায়। ওর স্বপ্ন ছিল আবার গান গাওয়ার। তার পাশে দাঁড়ায় আনন্দ আশ্রম। আবার ঘুরে দাঁড়ায় মাখন। সম্প্রতি মাখনের ‘ওরে মন তোর লাগি’ সহ বেশ কিছু গান জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। শুধু মাখন লাল না, এমন গল্প আরো অনেক তরুণের।

আনন্দ আশ্রমের কর্মসূচি সমন্বয়ক নুসাইবা রহমান আন্নি জানান, আনন্দ আশ্রম একটি স্বেচ্ছাসেবী অলাভজনক সংগঠন। সদস্যদের চাঁদা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অর্থায়নের পরিচালিত হয় এই আশ্রম।

আশ্রমের সভাপতি মশিউর রহমান শান্ত জানান, আনন্দ আশ্রম কাজের মাধ্যমে সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন করতে চায়। সংগঠনটি সব সময় একটি পজেটিভ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে, যেখানে তরুণদের প্রতিভা বিকাশে কোনো বাঁধা থাকবে না।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ নভেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়