ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

নদীই যাদের জীবিকা (পর্ব-১)

আল আমিন রাজু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৩, ৬ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নদীই যাদের জীবিকা (পর্ব-১)

আল আমিন রাজু : নদীমাতৃক বাংলাদেশে অনেকে নদীকে কেন্দ্র করেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কিন্তু আধুনিক এই যুগে শহরায়ন আর শিল্পায়ন গ্রাস করে চলেছে নদীতে, বাংলাদেশ হারাচ্ছে তার আসল পরিচয়। নদীমাতৃক বাংলাদেশ যখন নদী দখল-দূষণ, ভরাট, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের দিকে হাঁটছে, তখন ক্ষতির মুখোমুখি অনেকে। আর এদের একদল নদীকে কেন্দ্র করে জীবিকার সন্ধানকারী মানুষগুলো। এখনো এদেশে লাখো মানুষের জীবিকার উৎস এই তটিনী।

শহর কিংবা গ্রাম, নদী যেখানে সেখানেই গড়ে উঠেছে নানা ধরনের পেশা। কোনোটা শত বছরের পুরোনো, কোনোটা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গড়ে ওঠা নতুন পেশা। হাজার বছরের পুরোনো পেশাও আছে নদীমাতৃক বাংলায়। কলকব্জার যুগে মালামাল পরিবহনের মাধ্যম ইঞ্জিন। তবে আধুনিকায়নের যুগে অনেকেই লালন করছেন হাজার বছরের পুরোনো পদ্ধতি।

সড়ক পথে ট্রাক আবার নদী পথে জাহাজ থাকতেও এখনো বাঁশ পরিবহন করা হয় নদীর জোয়ারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। রাতের অনুকূলে বাঁশ ভাসিয়ে দিয়ে কেবল তার নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন কয়েকজন। এটাই তাদের পেশা। নদীর স্রোতের সঙ্গে সন্ধি বয়ে আনে তাদের জীবিকা।

মোহাম্মদ কাবিল (৫৫) একজন বাঁশ পরিবহন শ্রমিক। বুড়িগঙ্গা নদীতে গত ১০ বছর ধরে তিনি বাঁশ পরিবহনের কাজ করছেন। দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরির বিনিময়ে এ কাজ করেন। বাঁশ পরিবহনের জন্য নদীর স্রোত অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু বুড়িগঙ্গায় সেই স্রোত না থাকার কারণে নদীর পাড় দিয়ে রশি টেনে নিয়ে যেতে হচ্ছে, যার কারণে গাবতলী থেকে বাবু বাজার এলাকায় নিয়ে যেতে দুদিন পর্যন্ত সময়ের প্রয়োজন হয়।

কাবিলের সঙ্গে আরো দুজন বাঁশ শ্রমিক রয়েছেন, তারা পালা করে বাঁশ টেনে নিয়ে যাওয়ার কাজ করে থাকেন। একজনের কাজ টেনে নেয়া আর বাকিদের কাজ নদীর পানির গভীরতা মেপে সেই পথে বাঁশের বহর নিয়ে যাওয়া।

কাবিল রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দিনে দিনে দহলের লাইগা নদীর পানি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নদীতে স্রোত নাই বল্লেই চলে। তাই আমাগো কষ্ট করে টেনে নিয়ে যেতে হয়। গাবতলী থেকে বাবু বাজার এইটুকু পথ আমাগো যাইতে দুই দিন সময় লাগবো।’



কাবিলদের মতো শত শত পেশাজীবী এখন হারাতে বসা এ নদীকে আকড়ে ধরে বেঁচে আছেন। মরতে বসা এই নদীর মাঝেই নিজের জীবিকার সন্ধানে সকাল সন্ধ্যা কাটিয়ে দিচ্ছেন।

দায়িত্বশীলদের একটু আগ্রহ নদীতে বিভিন্ন কাজ করা এ মানুষগুলোর পেশা টিকিয়ে রাখতে পারে বহু যুগ। এই পেশাজীবীরা সেই আশায় বুক বেঁধে আছেন নগরায়নের নির্মমতায় হারাতে বসা এ নদী আবার তার স্বরূপে ফিরবে। তবে কবে ফিরবে সেই কথা কেউ দিতে পারেননি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ জানুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ/শান্ত  

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়