ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

তরুণদের উদ্যোগে মফস্বলে ডিজিটাল স্কুল

জুনাইদ আল হাবিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৫, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তরুণদের উদ্যোগে মফস্বলে ডিজিটাল স্কুল

জুনাইদ আল হাবিব : সবুজে ঘেরা একটি ক্যাম্পাস। এর মধ্যে কেউ শিক্ষকদের নিবিড় পরিচর্যায় পড়ছে, কেউ খেলছে, দৌড়াদৌড়ি করছে সবুজ ঘাসে। স্কুলেই দুরন্ত কাটছে ওদের শৈশব। মনোমুগ্ধকর পরিবেশে, শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস, কম্পিউটার ল্যাব, সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরার পর্যক্ষণ করা হয়। শুধু তাই নয়, চোখের রেটিনা রিডের মাধ্যমে ডিজিটালভাবে নিশ্চিৎ করা হয় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি-অনুপস্থিতি। শিশু স্কুলে অনুপস্থিত থাকলে মেসেজ চলে যায় অভিভাবকের মুঠোফোনে। - রাজধানী ঢাকা শহরের বড় কোনো নামিদামি স্কুলের মতোই এমন উন্নত ব্যবস্থা রয়েছে গ্রীণ টাচ স্কুল অ্যান্ড কলেজ। প্রতিষ্ঠা হয়েছে গত বছরের জানুয়ারিতে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মেঘনাপাড়ের লক্ষ্মীপুরে গড়ে উঠেছে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। যা গঠনে উদ্যোগ নিয়েছিল স্থানীয় কয়েকজন তরুণ। দেশের একটি মফস্বল এলাকায় এমন ক্যাম্পাস রীতিমতো চমকে দিচ্ছে স্থানীয় মানুষকে।

প্রতিটি শাখায় সর্বোচ্চ ৩০জন শিক্ষার্থীর আসন, প্লে থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত সকাল বিকাল দুই শিফটে পাঠদান করা হয়। শরীরচর্চায় বার্ষিক খেলাধুলা, প্রাকৃতিক জ্ঞানার্জনের জন্য শিক্ষাসফর ও বনভোজন, সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য আয়োজন করা হয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার। রয়েছে নিজস্ব ক্যান্টিন, শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ কেন্দ্র এবং নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা।

লক্ষ্মীপুরের দক্ষিণ তেমুহনীর এই স্কুলের সকল কক্ষ ঘুরে ঘুরে দেখালেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম ভুঁইয়া (তপন)।  তিনি এর আগে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। অবসরে গিয়েও শিক্ষকতার প্রতি ভালোবাসার টানে আবার এ পেশায় ফিরেছেন। যোগ দিয়েছেন এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে। এক পর্যায়ে গল্প জমে ওঠে তাঁর সঙ্গে। জানান উদ্যোগ ও সাফল্য এবং প্রতিবন্ধকতা জয়ের কথা।



‘কলেজ থেকে অবসরে যাওয়ার পর অনেক জেলার উচ্চ পর্যায়ের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য আমাকে অফার দেয়া হয়েছে। এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান আগ্রহী। কিন্তু আমি শিশুদের খুব ভালোবাসি। ওদের সঙ্গে সময় কাটাতে বেশ পছন্দ করি। তাই একদিকে ওদের প্রতি যেমন একটা টান আছে, তেমনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমার একটা আকর্ষণও সৃষ্টি হয়। এত সুন্দর ক্যাম্পাস যে, যার অভিব্যক্তি বলে শেষ করতে পারব না।’ বলছিলেন অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম ভুঁইয়া (তপন)।

প্রযুক্তিবান্ধব একটি শিক্ষাঙ্গনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলছিলেন, ‘যে স্কুলগুলো বর্তমান ধারার শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য, সেই রকম ক্যাম্পাসের শূণ্যতার অনুভব থেকেই গ্রীণ টাচ্ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সৃষ্টি। একেবারে প্রযুক্তিবান্ধব একটি স্কুল, পাশাপাশি শিশুদের খেলাধুলার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি রাইডার। যেমন দোলনা, আপডাউন স্লিপার। আর অভিভাবকরা যেন এসে নির্বিঘ্নে সময় কাটাতে পারে সেজন্য তাদের জন্য একটি কক্ষ রাখা হয়েছে। সেখানে টেলিভিশন সেটও যুক্ত করা হয়েছে।’



‘শিক্ষকদের নিশ্চিতে রয়েছে নিয়মিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। কারণ আমি বিশ্বাস করি একজন ভালো মানের শিক্ষকই পারেন পড়ুয়াদের মেধার বিকাশ ঘটাতে। আমার একেকজন শিক্ষক সব বিষয়েই দক্ষ। যেন কোনো একজন শিক্ষক অনুপস্থিতিতে অন্য একজন শিক্ষক সে বিষয়টি পড়াতে পারেন। বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার মধ্যে মাঝে মাঝে পড়তে হয়। যেমন জেলার অনেক দূর থেকে শিশুরা এখানে গাড়ি দিয়ে পড়তে আসে। যদি দুর্ভাগ্যক্রমে কখনো গাড়ির সমস্যা বা চালক অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন কিন্তু উপস্থিতি নিয়ে একটা টানাপোড়ন হয়। আর শিক্ষক বা শিক্ষার্থীদের কেউ যদি অসুস্থ হয়, সেটা কাজের জন্য একটা সমস্যা। তবে হ্যাঁ, এসব কিছু মোকাবেলা করেই আমাদের কাজ এগিয়ে চলছে।’ চ্যালেঞ্জিং গল্প তুলে ধরে বলছিলেন তিনি।

আগামীর পরিকল্পনা আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলছিলেন, ‘আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো যাতে একটি মানসম্মত আধুনিক আদর্শ স্কুল হিসেবে স্বীকৃতি পায় এটি। পাশাপাশি অভিভাবকদেরও বলবো, আপনারা ঢাকায় না গিয়ে লক্ষ্মীপুরেই ভালো মানের এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আপনাদের সন্তানদের পড়াশোনা করাতে পারবেন। এতে সময় অর্থ ও টেনশন দুটো থেকেই অনেকটা বাঁচা যাবে।’




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়