ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পুলিশের ভুলে ১১ মাস কারাভোগ করলেন শুক্কুর শাহ

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৯, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পুলিশের ভুলে ১১ মাস কারাভোগ করলেন শুক্কুর শাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর শাহবাগ থানার একটি মাদকের মামলার আসামি না হয়েও পুলিশের ভুলে ১১ মাস কারাভোগ করলেন মো. শুক্কুর শাহ নামের এক ব্যক্তি।

তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তারের ৫ মাস পর বিষয়টি আদালতের গোচরে আনা হলেও আদালত বিষয়টি তেমন আমলে নেননি। এ সংক্রান্ত একটি পুলিশ প্রতিবেদন চাইলে পুলিশ মামলার ঠিকানার বাড়িওয়ালার প্রত্যয়নপত্রসহ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। যাতে বলা হয় সঠিক আসামিকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আর এভাবেই শুক্কুর শাহ হয়ে গেলেন শুক্কুর আলী। অন্যের দোষ মাথায় নিয়ে জেল খাটলেন ১১ মাস।

তবে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। গত ৩০ জানুয়ারি মামলার বাদী আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসলে তিনি জেরায় বলেন, ‘কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামিকে তিনি চেনেন না। তাকে এ মামলায় তিনি গ্রেপ্তার করেন নি।’

টনক নড়ে বিচারকের। তিনি এ মামলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আদালতে তলব করেন। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি ও ওয়ারেন্ট তামিল কর্মকর্তাকেও তলব করেন। পুলিশ তখন নিজেদের ভুল স্বীকার করে আদালতে ক্ষমা প্রার্থনা করে।

শুক্কুর শাহ এ মামলার আসামি নয়, বিষয়টি প্রমানিত হওয়ায় ঢাকার ২ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক অন্য কোন মামলায় আটক না থাকলে শুক্কুর শাহকে আজই মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন।

মামলার ঘটনা সূত্রে দেখা যায়, আবুল কাশেমের ছেলে মো. শুক্কুর আলী নামে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়। ২০১১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি গ্রেপ্তার হন। ওই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি এ মামলায় জামিন পান।

জামিন পেয়ে তিনি এ মামলায় হাজিরা না দিয়ে পলাতক হন। ২০১৩ সালের ৩ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

এ পরোয়ানা তামিলের দায়িত্ব পান এসআই মো. মমিনুল ইসলাম। তিনি সংবাদ পান যে, হাজারীবাগ থানার ৯(৩)১৮ মামলায় শুক্কুর নামে এক আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। তার পিতার নামও কাশেম। তিনি যাচাই বাছাই না করেই শাহবাগ থানার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। এভাবেই আদালতের নথিতে শুক্কুর শাহ হয়ে যান শুক্কুর আলী।

শুক্কুর শাহ আইনজীবী মো. জাকির হোসেন সাংবাদিকদের জানান, হাজারীবাগ থানার মামলায় জামিন পেয়েও শুক্কুর শাহ কারাগার থেকে বের হতে পারেননি। পরে খোঁজ নিয়ে তারা জানতে পারেন তাকে শাহবাগ থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অথচ এ মামলায় শুক্কুর শাহ আসামিই নন।

তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের ৮ আগস্ট বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হয়। তিনি আসামির জাতীয় পরিচয়পত্র আদালতে দাখিল করতে বলেন। কিন্তু গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ পরিচয়পত্র নিয়ে যাওয়ায় তারা তা আদালতে দাখিল করতে পারেননি। তবে শুক্কুর আলীকে এ মামলায় জামিন দিলেও শুক্কুর আলী ও শুক্কুর শাহ এক ব্যক্তি না হওয়ায় তাকে মুক্তি দেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ।’

আইনজীবী জাকির আরও বলেন, ‘গত ৩০ জানুয়ারি মামলার বাদী আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় জেরায় বলেন যে, তিনি এ আসামিকে চেনেন না। তাকে তিনি গ্রেপ্তার করেননি। ফলে বিচারক পুলিশের পরোয়ানা তামিল কর্মকর্তা, শাহবাগ থানার ওসি ও জেল সুপারকে কাগজপত্রসহ ডেকে পাঠান।

মঙ্গলবার তারা আদালতে হাজির হন। কারাগারে রক্ষিত প্রথমে আটক শুক্কুর আলীর ছবি ও শুক্কুর শাহ ছবি, তাদের মায়ের নাম এক না হওয়ায় আদালত শুক্কুর শাহকে এ মামলায় খালাস দেন।

শুক্কুর শাহ যে শুক্কুর আলী নন তা আদালতে জানানোর পরও অতিরিক্ত ছয়মাস তাকে কারাগারে থাকতে হয়েছে জানান তার আইনজীবী জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘বাদী তাকে সনাক্ত না করলে তাকে আরও কতো দিন তাকে থাকতে হতো কে জানে।’




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/মামুন খান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়