ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

মার্চে বদলে যায় রেডিও টেলিভিশন কেন্দ্রের নাম

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ৪ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মার্চে বদলে যায় রেডিও টেলিভিশন কেন্দ্রের নাম

শাহ মতিন টিপু: একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চে বঙ্গবন্ধুর ডাকে ২ ও ৩ তারিখ সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। ৪ তারিখ ছিল দেশব্যাপী লাগাতার হরতালের তৃতীয় দিন। তবে এই দিন হরতাল ছিল আট ঘন্টার।

একদিকে আন্দোলন, অন্যদিকে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে আহুত (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসভাকে সামনে রেখে মুক্তিকামী জনতা ভীষণ উজ্জীবিত। কারণ, সাতই মার্চ রেসকোর্স ময়দান থেকে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা হবে।

আন্দোলনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা দফায় দফায় বৈঠকে বসেন ৭ মার্চের জনসভা সফল করার জন্য। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) চলতে থাকে জনসভার প্রস্তুতি। পাশাপাশি ঢাকাসহ সারাদেশেই গঠন হতে থাকে সংগ্রাম কমিটি।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দেশমাতৃকাকে হায়েনামুক্ত করতে সারাদেশেই বীর বাঙালীরা ফুঁসে ওঠে। ৭ মার্চ যতই এগিয়ে আসতে শুরু করে উত্তেজনা ততই বাড়তে থাকে।

বঙ্গবন্ধু ঘোষিত পূর্ব কর্মসূচী অনুযায়ী সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সর্বাত্মক সফল হরতাল পালিত হয়। ঢাকায় সাময়িকভাবে কার্ফ্যু তুলে নেওয়া হলেও চট্টগ্রাম, খুলনা ও রংপুরে তা বলবৎ থাকে। খুলনায় হরতাল পালনকালে নিরস্ত্র জনতার ওপর সেনাবাহিনীর বিক্ষিপ্ত গুলিবর্ষণে ৬ জন নিহত হয় ও ২২ জন আহত হয়। চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণে গতকাল আর আজ মিলে সর্বমোট ১২০ জন নিহত ও ৩৩৫ জন আহত হয়।

সারাদেশে আহতদের সুচিকিৎসার্থে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে শত সহস্র মানুষ লাইন দিয়ে স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন। ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও নিহতদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এ রকম উত্তাল পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু তাঁর বাসভবনে আওয়ামী লীগের এক মূলতবী সভায় ভবিষ্যত কর্মসূচী ব্যাখ্যা করে সংগ্রামের নতুন দিকনির্দেশনায় বলেন, ‘আজ আওয়ামী লীগ নয় গোটা বাঙালী জাতিই অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন। আমাদের সামনে আজ দুটো পথ খোলা আছে। একটি সর্বাত্মক ত্যাগ স্বীকারের জন্য নিজেদের মনোবল অটুট রেখে অবিচলভাবে পূর্ণ স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যাওয়া অথবা ভুট্টো ইয়াহিয়ার কথামতো সবকিছু মেনে নেয়া।’

নিজের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমি সারা জীবন ক্ষমতার মসনদ তুচ্ছজ্ঞান করে দেশ ও জাতির কাছে আমার জীবন মর্টগেজ রেখেছি। বাংলার মানুষ গুলি খেয়ে বন্দুকের নলের কাছে বুক পেতে দিয়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ফাঁসিকাষ্ঠ থেকে আমাকে মুক্ত করে এনেছে। আমার ৬ দফা কর্মসূচীর প্রতি ম্যান্ডেট দিয়েছে। এখন শহীদের আত্মত্যাগের প্রতি অশ্রদ্ধা জানিয়ে পাকিস্তানীদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে অবমাননাকর শর্তে কী করে ক্ষমতায় যাই।’

এরপর বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের মধ্যে সারাদেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কাঠামো তৈরির নির্দেশ দেন। এদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে রয়েছে বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের নতুন নামকরণ করেন ‘ঢাকা বেতার কেন্দ্র।’ পাকিস্তান টেলিভিশনের নাম পাল্টে ‘ঢাকা টেলিভিশন’ নাম দিয়ে অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হতে থাকে।

বাংলাদেশ বেতারের প্রাক্তন উপমহাপরিচালক (অনুষ্ঠান) আশফাকুর রহমান খান এই ঘটনার স্মৃতিচারণে উল্লেখ করেন- বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সর্বশ্রেণির মানুষের সঙ্গে পুরোপুরি সাড়া দিয়েছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থিত রেডিও পাকিস্তানের ছয়টি বেতার কেন্দ্রের কর্মীরা। ৪ মার্চ প্রতিষ্ঠানের নাম ‘রেডিও পাকিস্তান’ বর্জন করে ঘোষণা করা হলো ‘ঢাকা বেতার কেন্দ্র’। প্রচার শুরু হলো অসহযোগ আন্দোলনভিত্তিক সমগ্র অনুষ্ঠানমালা। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও খুলনা কেন্দ্র এই পদক্ষেপ অনুসরণ করে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ মার্চ ২০১৯/ টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়