ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

শিক্ষিকার জন্য কাঁদল পুরো স্কুলের শিক্ষার্থীরা

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ৭ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিক্ষিকার জন্য কাঁদল পুরো স্কুলের শিক্ষার্থীরা

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি: অন্যত্র বদলী হয়েছেন শিক্ষিকা। যেতেই হবে তাকে। যাবার দিনে ওই শিক্ষিকার জন্য কাঁদল পুরো স্কুলের শিক্ষার্থীরা। কাঁদলেন শিক্ষিকাও।

এ হৃদয়স্পর্শী ঘটনাটি ঘটেছে কোটালীপাড়া উপজেলার ৬৩নং দক্ষিণ হিরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রিয় এই শিক্ষিকার নাম মৌমিতা মল্লিক। মঙ্গলবার প্রিয় ম্যাডামকে এভাবেই চোখের পানিতে বিদায় জানায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। মমতাময়ী ম্যাডামও চোখের জল ফেলতে ফেলতে বিদায় নেন।

ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের কান্নায় ভেঙ্গে পড়া দেখে সেখানে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের চোখও হয়ে ওঠে অশ্রুসজল।

এরমধ্যেই ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে শিক্ষিকার হৃদয়স্পর্শী এই বিদায়ের একটি ভিডিও। ‘গোপালগঞ্জের ফেরিওয়ালা’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে মুন্সি তুহিন নামে একজন মঙ্গলবার এ ঘটনার একটি ভিডিও ও ছবি পোস্ট করেন। এরপরই ভাইরাল হতে শুরু করে তার পোস্টটি।

তিনি পোস্টটিতে লেখেন- গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলাধীন ৬৩ নং দক্ষিণ হিরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মৌমিতা ম্যাডামের অন্যত্রে বদলী হওয়ার খবর শুনে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। চোখের জলে বিদায় জানালেন প্রিয় ম্যাড্যামকে! শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীদের এমন ভালবাসা বাংলাদেশের প্রতিটি স্কুলে সৃষ্টি হউক এমনটা প্রত্যাশা করি।’

কমেন্টে অনেকেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে- এই বিষয়টি তদন্ত করে ওই শিক্ষিকাকে বদলী না করার জন্য সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

পোস্টটিতে সাদ আহমেদ নামে একজন মন্তব্য করেন, ‘এই শিক্ষিকা তো মহান, তবে তার শিক্ষার্থীরা যে এক একজন ভাল মানুষ হবে তা বোঝা যাচ্ছে। ম্যাডামের শিক্ষা ওদের গড়ে তুলবে মহান। স্যালুট ম্যাডাম।’

কমলেশ কমল লেখেন, ‘এইরকম শিক্ষিকা কজনে হতে পারেন। আমার জীবনে প্রথমবার দেখলাম। শিক্ষিকার প্রতি ছাত্র ছাত্রীদের এতো ভালোবাসা। আপা মনির জীবন সার্থক। তিনি এমন একজন শিক্ষিকা হতে পেরেছেন। আমি চাই বাংলার প্রত্যেকটা স্কুলে যেন এরকম শিক্ষিকার জন্ম হোক। ম্যাডাম গড ব্লেস ইউ।’

জুয়েল রানা তার মন্তব্যে লেখেছেন, ‘মমতাময়ী শিক্ষিকা। আপনার মতো শিক্ষিকা যদি ১ লাখ ৩৪ হাজার ১ শত ৪৭ টা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকতো। তাহলে ছাত্র-ছাত্রীরা শ্রেণি কক্ষে তার মায়ের শাসন ও ভালবাসা খুঁজে পেত।’

প্রসেনজিত বিশ্বাস মন্তব্য করেন, ‘এই শিক্ষিকার শিক্ষকতা জীবন ধন্য। আসলে শিক্ষকতা যে একটা মহান পেশা এটা তিনি প্রমাণ করে গেলেন। নিঃসন্দেহে এটা ছোট ছোট বাচ্চাদের ভালোবাসা পাওয়া আসলে একটা বিরাট ব্যাপার। যা সবাই পায় না।’

কোটালীপাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রুবাইয়া ইয়াসমীন বলেন, ‘এই আধুনিক যুগে অনেকে মনে করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক আগেই ভাল ছিল। এখন আর সে অবস্থা খুঁজে পাওয়া যায়না। এ ধারণা সঠিক নয় বলে তিনি উল্লেখ করে বলেন, এখন কিছুটা অবস্থা পাল্টালেও ফিফটি ফিফটি অবস্থা রয়েছে। এখনও শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা একে অপরের সাথে এমন সু-সম্পর্ক রয়েছে।’

গোপালগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনন্দ কিশোর সাহা বলেন, ‘শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে এমন ভালবাসার সম্পর্ক এখন আর দেখা যায় না। শিক্ষার্থীদের কতটুকু ভালবাসলে তাদের কাছ থেকে এমন ভালবাসা পাওয়া যায় এটি তার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এটি সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনুকরনীয় হবে।’




রাইজিংবিডি/ গোপালগঞ্জ/৭ মার্চ ২০১৯/বাদল সাহা/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়