ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মরিচ তুলতে পারদর্শী গ্রামের নারীরা

জুনাইদ আল হাবিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪১, ২৮ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মরিচ তুলতে পারদর্শী গ্রামের নারীরা

জুনাইদ আল হাবিব : দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ। চাষ হয়েছে রবিশস্য। ধান চাষ এবং ঘরে পৌঁছানোর ভারটা পুরুষদের কাঁধে থাকলেও রবিশস্য আবাদ এবং ঘরে তুলতে একটু ব্যতিক্রমী চিত্র চোখে পড়ে। বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠের বুক ছুঁয়ে বয়ে গেছে গ্রামের মেঠোপথ। এ মেঠোপথগুলো দিয়ে হাঁটলে এবং চারপাশে একটু চোখ ভ্রমণ করালেই ফসলের খেতে দেখা মিলবে ভিন্ন চিত্র। সংসারের কর্মব্যস্ততা দূরে ঠেলে সয়াবিন, বাদাম রোপণ, নিড়ানির মতো কঠোর পরিশ্রমে দেখা যায় গ্রামের নারীদের। সে ফসল যখন ঘরে উঠবে তখনো এ নারীদের সম্পৃক্ততা বেশ নজর কাড়ার মতোই।

এমন দৃশ্য চোখে পড়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় জনপদ লক্ষ্মীপুরে। এখান থেকে দেশের ৮০ শতাংশ সয়াবিনের যোগান মিলে। তাছাড়াও মরিচ ও বাদাম চাষ হয় এখানে। জেলার কমলনগরের দক্ষিণ চর মার্টিনের মেঠোপথ ধরে হাঁটছিলাম। দূর থেকে চোখ কেড়ে নেয় নারীরা মরিচ তুলছেন এমন দৃশ্য। সারিতে সারিতে সবাই লাল টুকটুকে মরিচ তুলে পাত্রে নিচ্ছেন আর সামনে এগুচ্ছেন। চলে তুমুল প্রতিযোগিতা। কার থেকে কে বেশি মরিচ তুলতে পারবেন। যে বেশি তুলতে পারবেন তার লাভের অংশটা একটু বেশি হবে। কেননা এ কাজে হিসেবটা একটু অন্যরকম। নারীদের তোলা মরিচকে তিন ভাগ করা হবে। দুই ভাগ জমির মালিকের আর বাকি এক ভাগ নারী শ্রমিকের। ফলে এ কাজে নারী শ্রমিকদের এক ধরনের স্বাধীনতা কাজ করে।

সাধারণত প্রতি কেজি মরিচের মূল্য ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। অবসরে নারীদের এমন কর্মযজ্ঞ তাদের সংসারের অভাব পূরণে অনেকটা সহায়ক। যেসব নারী মরিচ তুলতে আসেন তাদের অধিকাংশই দরিদ্রপীড়িত পরিবারের। বাদাম তোলার ক্ষেত্রেও এমন পন্থা অবলম্বন করা হয়।

ফসলের খেতে পুরুষদের পাশাপাশি সমানতালে নারীদের এ বিচরণ সম্ভাবনার একটি নতুন মাত্রাও বলা যেতে পারে। সংসারে শুধু পুরুষের ওপর আয়ের ভারটা না রেখে নিজেরাই যখন কাজে নেমে পড়েন, তখন ওই সংসার অনেকটা ভালোই চলে। তারা দু মুঠো ভাত ঠিকমতো খেতে পারেন। শুধু তাই নয়, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচও যোগান দিচ্ছেন কেউ কেউ এসব কাজ করে।



নারী শ্রমিক ইয়াছমিন আক্তার (৩৫)। শুষ্ক মৌসুম এলেই মরিচ তোলার কাজ করেন তিনি। তার মতে, অন্য কোনো ভারী কাজের তুলনায় এ কাজ অনেকটাই সহজ। তিনি বলেন, ‘ঝামেলা নাই। নিরিবিল মরিচ তুলি। আজারিয়া বইসা থাইকা লাভ কি। মরিচ তুইলা দুই চারটা ট্যাকা পাইলেও তো সংসার চলে। মোটামুটি ভালোই লাগে। কারণ গ্রামের আরো মহিলারাও একসঙ্গে মরিচ তোলে।’

রহিমা বেগম (৩৮) নামের আরেকজন নারী শ্রমিক জানান, ‘এ কাজ খুব সহজ। তবে একটু ধৈর্য লাগে। যেমন যে কেউ বেশিক্ষণ সামনে ঝুঁকে থেকে মরিচ তুলতে পারবে না। এটা যাদের অভ্যাস হয়ে গেছে, তাদের জন্য সমস্যা না। মরিচ তুলতে অনেক সময় আমরা বাড়ি থেকে অনেক দূরে চলে যাই। তবে দিন দিন সয়াবিনের চাষ বেড়ে যাওয়ার কারণে মরিচ চাষ কমেছে। তা না হলে আমরা আরো বেশি মরিচ তুলতে পারতাম।’

জমির মালিক মো. আবদুল আলী বলেন, ‘আমার পাঁচ গন্ডা খেত। মহিলা নেমেছে ৩৫ থেকে ৪০ জন। মহিলারা মরিচ তুলে আমাদেরকে আরো সহযোগিতা করতেছেন। তাদের কারণে আমরা অনেক সহজেই ঘরে ফসল তুলে নিতে পারছি। খুব তাড়াতাড়ি বাড়িতে মরিচ নিয়ে যেতে পারছি। তাই তাদের প্রাপ্য অধিকারের বিষয়ে আমরা সজাগ। তাদের যেটা ভাগ, সেটাই তারা আমাদের কাছ থেকে পায়। তারাও খুশি আমরাও খুশি। এতে তারাও একটু আয়ের সুযোগ পাচ্ছে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ এপ্রিল ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়