ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বেদের বহর || মাহফুজা হিলালী

মাহফুজা হিলালী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৬, ৩ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বেদের বহর || মাহফুজা হিলালী

যখন আমার বয়স এগারো-বারো বছর, এক সকালে ঘুম থেকে উঠে দোতলার জানালা খুলে দেখি পাশের বাড়ির খোলা নির্জন জায়গায় মানুষের কথা-চিৎকারে গমগম করছে; অনেক অপরিচিত এবং একটু অন্য রকম মানুষে ভরে আছে। আমাদের বাড়ির পাশে যাদের জায়গা ছিলো তারা কাঠের খামের উপরে টিনের চাল দিয়ে রেখেছিলো। তখনো ঘরের বেড়া দেয়নি, তারা নতুন বাড়িতে আসেও নি। সেই সুযোগে এখানে এসে ঘর বেঁধেছিল ওই মানুষগুলো। পরে জানলাম এরা বেদে সম্প্রদায়। ছিলো প্রায় পনেরো দিন। সাপের ভয়ে সেখানে আমি যাইনি। তবে তাদের সম্পর্কে জেনেছিলাম মায়ের কাছে। জেনেছিলাম তাদের পেশা এবং নেশার কথা। বাংলার অনুষ্ঠান-পার্বণ-মেলায় সাপের খেলা এক অপরিহার্য বিষয় ছিলো তখন। এখনও  গ্রামে-গঞ্জে দেখা যায়। যদিও বেদেদের কাজ এখন অনেকাংশে কমে এসেছে। তবে একটা সময় ছিলো যখন বেদেদের জীবিকা ছিলো রমরমা। শুধু পহেলা বৈশাখের মেলা নয়, যে কোনো মেলায় বা হাটে বেদে মেয়েরা ঝাঁপি মাথায় হাজির হতো এবং সাপের খেলা দেখাতো। আবার কোনো মেলা বা অনুষ্ঠান নয়, যে কোনো সময় বেদেরা কোনো পাড়া বা মহল্লায় ঢুকে সাপের খেলা দেখাতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ছেলেবেলা’য় উল্লেখ করেছেন কোনো কোনো সকালে বা বেলা এগারোটার দিকে তাদের বাড়িতে সাপের খেলা দেখাতে, বানরের খেলা দেখাতে আসতো বেদেরা।

বাংলাদেশে বেদে এক পরিচিত নাম। প্রশ্ন হলো বাংলাভূমে কবে এলো বেদে বা বৈদ্য জাতি, তারপর নিজেদের স্থান করে নিলো একেবারে জাতিগত ঐতিহ্যের সঙ্গে। ইতিহাসে দেখা যায় ১৬৩৮ সালে আরাকান থেকে রাজা বল্লাল সেনের সঙ্গে এরা ঢাকা আসে। এরা আরাকান রাজ্যের মনতং আদিবাসী গোত্রের দেশত্যাগী অংশ। আসার কিছু দিন পরই ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নেয় তারা। তারপর আস্তে আস্তে পুরো বাংলা, এমনকি আসাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এদের গায়ের রং এবং আকৃতি বাঙালিদের মতোই। এবং সময়ের সাথে সাথে তারা বাঙালি হয়ে গিয়েছে। বেশির ভাগ বেদেই চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত। সে কারণেই তারা বৈদ্য বা চিকিৎসক। তাদের অবজ্ঞা করে কেউ কেউ ‘বাইদ্যাও’ বলে। বেদেদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো- তারা দলবদ্ধ হয়ে বাস করে। এবং  মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে। এদের ছেলেরা অলস প্রকৃতির এবং পলায়ন স্বভাবের। সাধারণত ছেলেরা সংসারের কাজ, রান্না, সন্তানের দায়িত্ব পালন করে। আর মেয়েরা সাপ এবং ওষুধ নিয়ে গাঁয়ে গাঁয়ে যায়। সাপের খেলা দেখায় নানা রকমের ঝাড়-ফুঁক-এর কাজ করে, রোগের ওষুধ বিক্রি করে, জাদু দেখায়। দিন শেষে বিকেল বা সন্ধ্যায় আশ্রয়স্থলে ফেরে। এই অতি সাধারণ বা অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষগুলোরও হাসি-আনন্দ-প্রেম আছে, আছে সৌন্দর্যের আকর্ষণ, পরস্পরের মনোরঞ্জন। এর বর্ণনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইন্দ্রিরা দেবীর কাছে লেখা চিঠিতে। সেই ১৮৯১ সালের কথা। কবি শাহজাদপুরের কাছারি বাড়ির জানালা দিয়ে দেখেছিলেন বেদেদের। সেবারই প্রথম তিনি এতো কাছে থেকে তাদের জীবন দেখার সুযোগ পান। তিনি লিখেছেন: ‘পুরুষটা রান্না চড়িয়ে দিয়ে বসে বসে বাঁশ চিরে ধামা চাঙারি কুলো প্রভৃতি তৈরি করছে- মেয়েটা কোলের উপর একটি ছোট্ট আয়না নিয়ে অত্যন্ত সাবধানে যত্নে সিঁথেটি কেটে চুল আঁচড়াচ্ছে। বেশবিন্যাস সমাধা হলে পরে একটি গামছা ভিজিয়ে মুখটি বিশেষ যত্নের সঙ্গে দু-তিনবার করে মোছা হলো, তারপরে আঁচল-টাচলগুলো একটু ইতস্তত টেনেটুনে সেরেসুরে নিয়ে বেশ ফিটফাট হয়ে পুরুষটার কাছে গিয়ে উবু হয়ে বসল; তার পরে একটু-আধটু কাজে হাত দিতে লাগলো।’
এই নিচুশ্রেণির মানুষও রবীন্দ্রনাথের তীক্ষ্মদৃষ্টি থেকে বাদ পড়েনি। এবং তাদের জীবনযাত্রার একটা দিক সুন্দরভাবে উঠে এসেছে যে, পরস্পরের প্রতি মনোরঞ্জনের বিষয় মানবকুলে সবারই আছে।

যাই হোক, আমি উপরের অনুচ্ছেদে তাদের থাকবার জায়গাকে ‘আশ্রয়স্থল’ বলে উল্লেখ করেছি। আশ্রয়স্থল বলবার কারণ হলো- এদের থাকার নির্দিষ্ট কোনো ঘরবাড়ি নেই। ভাসমান এদের জীবন। এরা একেক সময় একেক জায়গায় দল বেঁধে গিয়ে কিছুদিনের জন্য বাস করে। সেখানে কোনো পরিত্যাক্ত বা ফাঁকা জায়গায় অস্থায়ীভাবে বাস করে। কখনো তাবু টানায়, কখনো বাখারির চাল দিয়ে অস্থায়ী ঘর বানায়, কখনো কোনো বন্ধ হওয়া স্কুলের বারান্দা পেলে সেখানেই থাকে। সেখান থেকেই আশেপাশের এলাকায় ঝাড়-ফুঁক, সাপের খেলা দেখানো, রসবাতের চিকিৎসা, নানা রকম রোগের চিকিৎসা করে। নিজেদের আশ্রয়স্থল থেকে গ্রামে গ্রামে গিয়ে নিজেদের কাজ সাধন করাকে তাদের ভাষায় বলে ‘গাওয়াল’। মূলত মেয়েরাই গাওয়ালে যায়। উঁচু করে খোঁপা বেঁধে তাতে ফুল গুঁজে নেয়, কপালে পরে টিপ। পায়ে মল বা নূপুর পরা বেদে মেয়েদের একটা বৈশিষ্ট্য। তাছাড়া হাঁসুলি, বালা, বাজু, নোলক, খাঁড়ু, বিছা ইত্যাদি অলঙ্কার পরে। আর পরে রঙিন কাপড়। তাদের কাপড় পরার ধরনও একটু আলাদা। দশ হাত কাপড় দুই খণ্ড করে এক খণ্ড নিচে পরে, অন্য খণ্ড গলার সাথে বিশেষ কায়দায় ঝুলিয়ে দেয়। সঙ্গে ব্লাউজ অথবা ফতুয়া পরে। বর্তমানে অবশ্য কাপড় খণ্ড না-করে রাজস্থানী কায়দায় পরতে শুরু করেছে। তাদের সাজসজ্জার বিশেষ কারণ হলো মানুষকে আকৃষ্ট করা, যেন তাদের ব্যবসা ভালো হয়।

বেদেদের সমাজ নারীকেন্দ্রিক। ছেলেমেয়েরা স্বেচ্ছায় এবং পরস্পরকে পছন্দ করে বিয়ে করে। ছেলেমেয়ের সম্মতিতে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ের আয়োজন করা হয়। বিয়ের দিনে তাদের নিজস্ব নাচ-গানে তারা মেতে ওঠে। বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর ঘরে যায় এবং স্ত্রীকে স্বামী এবং সন্তানের লালন-পালনের জন্য ওয়াদা করতে হয়। স্ত্রীরা স্বামীকে বশে রাখতে সেবাযত্ন করে, আবার তাবিজ-কবজও করে। তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদেরও প্রচলন আছে। যাদের বিয়েতে বিচ্ছেদ ঘটে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় সর্দার। সর্দারই তাদের সম্পদ এবং সন্তানকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভাগ করে দেয়। তবে স্ত্রী বেশি অংশ পায়। বেদে সমাজে বিধবা বিবাহেরও প্রচলন আছে। এদের থাকার যেহেতু নির্দিষ্ট জায়গা নেই, তাই নৌকাই এদের অবলম্বন। বেদেরা বেশিরভাগ সময় নৌকায় থাকে। প্রতিটি পরিবারেরই একটি করে নৌকা থাকে। পরিবার আর নৌকা নিয়ে হয় দল, আর কয়েকটি দল নিয়ে হয় বহর। প্রত্যেকটি বহরের একজন করে সর্দার থাকে। সর্দারের কথা সবাই মেনে চলে। সর্দারের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করে বহরের সবাই মিলে। বিয়ে বা উৎসবে সর্দারকে টাকা বা উপহার দেয়ার নিয়ম রয়েছে। বহরের গতিবিধি এবং গাওয়ালের দিক ঠিক করে দেয় সর্দার। বেদেদের শুধু বহরের সর্দারই নয়, উপগোত্রীয় এবং গোত্রীয় সর্দারও আছে। এখানে বলে রাখা ভালো যে, কয়েকটি বহর মিলে একটি উপগোত্র এবং সবগুলো উপগোত্র মিলে গোত্র গঠিত। সব সর্দারের সম্মিলিত কাজে বেদে গোত্র সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয়। প্রতি বছর কার্তিক মাসের ৫ তারিখ থেকে অগ্রহায়ণ মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে বেদেরা মুন্সিগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে মিলিত হয়। সে সময় সর্দার নির্বাচন হয় এবং সারা বছরের সমস্যা নিয়ে আলোচনা ও মিটমাট হয়। প্রকৃতিগতভাবে বেদেরা খুব সৎ। অপরাধ করলে সর্দারের কাছে অকপটে স্বীকার করে।
 


বেদেরা কায়িক পরিশ্রমকে অমর্যাদার কাজ বলে মনে করে। চিকিৎসা ব্যবসাই তাদের প্রধান কাজ। নানা রকম বুনো শেকড়বাকড়, পশুপাখির হাড়, ধনেশ পাখির তেল, গরু বা মহিশের শিং, কাচ ভাঙ্গা ইত্যাদি থেকে এরা ওষুধ বানায়। ওষুধের সাথে মন্ত্র উচ্চারণও তাদের রীতি। তারা বৈজ্ঞানিক কোনো পদ্ধতি প্রয়োগ করে না। নিজস্ব সনাতন পদ্ধতিই তাদের ভরসা। খেলা দেখিয়ে লোকজন জড়ো করে মানুষের কাছে ওষুধ বিক্রি করে। এরা প্রধানত শিশু চিকিৎসা, বাত ও দাঁতের ব্যথা, দাঁতের পোকা তুলে আনা, যে কোনো ব্যথার মালিশ দেয়। সাপের তাবিজ-কবজও বিক্রি করে। কারো বাড়িতে সাপের উপদ্রব হলে তারা সেখান থেকে সাপ ধরে আনে এবং সেই বাড়ি বন্ধ করার জন্য তাবিজ এবং গাছও দিয়ে আসে। সে কারণে তারা মুসলিম হলেও দেবী মনসার প্রতি রয়েছে তাদের একনিষ্ঠতা। হিন্দু দেবদেবীদের প্রশস্তি রচনা এবং অনুষ্ঠানে তারা অংশ নেয়। তবে ধর্মকর্মে তাদের আগ্রহ কম। পূজা-অর্চনা করে না। আবার বিয়ে হয় ইসলামি মতে। তাদের জীবনযাত্রা, পারিবারিক-সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন সব কিছু গোত্রের মধ্যেই সম্পন্ন হয়। আগের দিনে তারা মারা গেলে লাশ কলা গাছের ভেলায় ভাসিয়ে দেয়া হতো। এখনো কোনো নির্দিষ্ট কবরস্থান নেই, তাই কোনো পরিত্যাক্ত স্থানে বা নদীর কিনারায় কবরস্থ করে। এতে তাদের অনেক হাঙ্গামাও পোহাতে হয়।

বাংলাদেশের অন্য সম্প্রদায় এমনকি আদিবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গেও বেদেদের সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি । সে দিক দিয়ে এরা একেবারেই কোণঠাসা একটি সম্প্রদায়। এরা নয়টি শাখায় বিভক্ত। শাখাগুলো- লাউয়ো বা বাবাজিয়া, চাপাইল্যা, বাজিকর, বেজ বা মিচ্ছিগিরি, গাইন, মেল্লছ, বান্দাইরা, মাল এবং সাপুড়িয়া। ভিন্ন ভিন্ন শাখার ভিন্ন ভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি। আবার তাদের ওষুধপত্রের ব্যবস্থাও ভিন্ন ভিন্ন। লাউয়ো বা বাবাজিয়ারা বড়শি দিয়ে মাছ ধরে। মাছ এবং মাছের কাঁটার মালা বিক্রি করে। গাইন বেদেরা সুগন্ধি মসলা বিক্রি করে। বেজ বেদেরা চোখের চিকিৎসা করে। এরা ভাঙ্গা কাচ দিয়ে চোখে অপারেশন করে। চাপাইল্যারা বিষ-ব্যথা নিরাময়ের জন্য মালা বিক্রি করে। মাছের কাঁটা, বাঘের থাবা, পাখির হাড় দিয়ে এ মালা তৈরি করে। এছাড়া আফিম, মুক্তার অলঙ্কার, চুড়ি, শাঁখা, হাঁসুলি, ঝিনুক ইত্যাদিও বিক্রি করে। এরা ডুবুরির কাজও করে। বাজিকর বেদেরা শিয়ালের হাড় ও ধনেশ পাখির তেল বিক্রি করে। বান্দাইরা বেদেরা ওষুধ বিক্রি করে, বানরের খেলা দেখায়, বিভিন্ন ভোজবাজি ও শারীরিক কসরত দেখায়। সাপ ধরে বিক্রি করে কিন্তু সাপের খেলা দেখায় না। মাল বেদেরা সাপের বিষ নামায়, দাঁতের পোকা ফেলে, রসবাতের তেল বিক্রি করে, শিঙা ফুঁকে বাতের খারাপ রক্ত বের করে দেয় মানুষের শরীর থেকে। সাপুড়িয়ারা তাবিজ-কবজ এবং ওষুধ বিক্রি করে, সাপ ধরে খেলা দেখায় কিন্তু সাপ বিক্রি করে না। তবে বিজ্ঞাননির্ভর একবিংশ শতকে এখন বেদেদের চিকিৎসা কম লোকই গ্রহণ করে। তাই তাদের বৈদ্য বা চিকিৎসক পরিচয় বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে তাদের কাজের পরিবর্তন হচ্ছে। চুড়ি-ফিতা-খেলনা বিক্রির মতো ছোট ছোট ব্যবসায় তারা জড়িয়ে পড়ছে। তারা প্রায় সবাই অশিক্ষিত, তাই কোনো চাকরি বা কোনো বড় ব্যবসায় অংশ নেয়া তাদের হয়ে ওঠে না।

সোনারগাঁয়ের নৌকোবহরে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন কবি শাহেদ কায়েস। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা পাচ্ছে কিছু বেদে ছেলেমেয়ে। আশার কথা হলো ২০০৮ সালে বেদেদের একটি অংশকে ভোটাধিকার দেয়া হয়েছে। তবে তাদের মৌলিক অধিকার এখনো নিশ্চিত হয়নি। এদের নিজস্ব ভাষাও রয়েছে। এরা নিজেদের মধ্যে কথা বলবার সময় ঠেট বা ঠের ভাষা ব্যবহার করে। এ ভাষার সাথে বাংলার মিল রয়েছে। কারণ এ ভাষাও প্রাকৃত থেকে সৃষ্টি। ১৯৯১ সালের জরিপ অনুযায়ী ঠেরভাষী বাংলাদেশির সংখ্যা ৪০ হাজার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেদে মেয়েদের সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন: ‘বেশ অসংকোচ চাল-চলন, নড়াচড়ার মধ্যে সহজ সরল দ্রুততান আছে- আমার তো ঠিক মনে হয় কালো ইংরেজের মেয়ে।’ এই তুলনা স্বভাবের জন্য সন্দেহ নেই। ‘ছিন্নপত্র’য় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন: ‘... কী-একটা সন্দেহের কারণে পুলিসের দারোগা এসে বেদেদের উপর উপদ্রব বাঁধিয়ে দিয়েছিলো। তখন একজন কর্তা বেদে পুলিসের সামনে ভীতভাবে দাঁড়িয়ে কৈফিয়ত দেওয়ার চেষ্টা করছিলো। এ সময় একটি মেয়ে আপন মনে বাঁখারি ছুলে যাচ্ছিলো। দেখা গেলো দারোগা যখন থামছে না, তখন হঠাৎ দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো মেয়েটি। এবং নির্ভিকভাবে আঙ্গুল তুলে উচ্চকণ্ঠে কথা বলতে শুরু করেছিলো। এতে দারোগার তেজ কমে এসেছিলো এবং সে চলে গিয়েছিলো।’

বেদে মেয়ের এমন সাহসী বৈশিষ্ট্য দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন। বোঝা যাচ্ছে বেদেমেয়েরা বাংলার প্রথম স্বাধীনচেতা-অস্তিত্ববাদী নারী; এবং প্রতিবাদীও।

লেখক : নাট্যকার, গবেষক

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ মে ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়