ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মলিন মুখে ঈদের হাসি

জুনাইদ আল হাবিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৭, ৪ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মলিন মুখে ঈদের হাসি

জুনাইদ আল হাবিব : ঈদ মানে শৈশবের প্রাণবন্ত উচ্ছ্বাস। যারা এখন শৈশবে পা রেখে দাঁড়িয়ে আছে, ঈদটা তাদের জন্যে একটু বেশিই রঙিন।  কারণ, ঈদ এলে সবচেয়ে বেশি আনন্দ পায় শিশুরা। বেশি কিছু নয়, ঈদের নতুন জামা আর কিছু খেলনা হলেই তাদের যেন আকাশ ছোঁয়া উল্লাস চোখে পড়ে। মুসলমানদের অন্যতম এ ধর্মীয় উৎসবে বিত্তবানদের ছেলেমেয়েরা হাসি খুশিতে ঈদ করলেও আড়ালেই থেকে যায় সমাজের অনেক অসহায়, দুস্থ  ছেলেমেয়ে। যাদের কেউ দ্বীপ কিংবা চরের বাসিন্দা, নদী ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে পরিবার অন্যত্র ঠিকানা খুঁজে নিয়েছে মাথা গোঁজার। সে সব মানুষদের ঈদ আনন্দের কথা কি আমরা ভাবি?

অথচ একটু সচেতন হলেই আমরা তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারি।

সেই দৃষ্টান্ত রাখতেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। সমাজের এসব অবহেলিত শিশুদের মলিন মুখে টানা তিন বারের মতো ঈদের খুশি ছড়িয়ে দিতে পেরে সত্যিই ভালো লাগছে। যে দিন, ওদের হাতে ঈদের এই বস্ত্র তুলে দেই, সে দিনটাই যেন আমার ঈদ। ফেসবুকে স্ট্যাটাস, তারপর মেসেঞ্জারে শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে ওদের জন্য অর্থ সহায়তা চাওয়া। বলতে গেলে রমজান মাস আমার এভাবেই কাটে। সবার সহযোগিতায় সর্বশেষ ঈদের হাসি ফুটলো লক্ষ্মীপুরের সদরের দ্বীপচর রমণী মোহন ও কমলনগরের চর কালকিনির দ্বীপচর শামছুদ্দিন এবং চর মার্টিনের মেঘনাপাড়ের নদীভাঙা পরিবারের শিশুদের মাঝে। কখনো ভাবিনি, এত শিশুর মুখে ঈদের রঙিন হাসি ফুটাতে পারবো। ২০১৭ সালে যার শুরুটা ছিল মাত্র ৬৫ জনকে দিয়ে। পরের বছর সে সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়ায় ৩৩০তে। এবারো সে ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে ৩ শতাধিক শিশুর মাঝে ঈদের নতুন জামা বিতরণ করেছি।
 


শুরুতে ফেসবুক স্ট্যাটাসের পর আস্তে আস্তে মানুষের সহযোগিতা পেতে থাকি। যদিও বড় ধরনের কোনো অনুদান পাইনি, তবুও মানুষের ক্ষুদ্র দান আমার কাজে গতি এনেছে। কথায় আছে, দশের লাঠি, একের বোঝা। সে দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের ছোট ছোট দান শত শত শিশুর মুখের হাসি। অর্থ সংগ্রহ যখন বাড়তে থাকে তখন আমি প্রান্তিক জনপদের সবার ঘরে ঘরে গিয়ে অনুসন্ধান করে তালিকা তৈরি করি। এরপর বাজার থেকে কেনাকাটা শেষে শুরু করি বিতরণ। 

শুরুর গল্পটা আমাকে বলতেই হয়। শুরুতে ২০১৭ সালে যখন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেই, তখন আমাদের লক্ষ্মীপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক হোমায়রা বেগম আমাকে একটি মেসেজ দেন। এতে লেখা ছিল, I wish to donet children personality, you may come to me. মেসেজটি পেয়ে আমার ইচ্ছে শক্তি আরো বেড়ে যায়। সে থেকে এ কাজে অব্যাহত পথচলা। আমি কেন শিশুদের ঈদ বস্ত্র দেই- প্রশ্নটা অনেকের। ঈদের আগে সমাজের জনপ্রতিনিধি বা নেতৃস্থানীয় লোকজন ঈদ বস্ত্রের নামে যে বস্ত্র দেন, সেটাকে আমি ভোট বস্ত্রের চোখেই দেখি। কেননা, সেটাতে স্বার্থ জড়িত। ভোট পাবার আশায় বড়দের মাঝে ঈদ বস্ত্র বিতরণ করা হয়। আজ পর্যন্ত কখনো শুনিনি, শিশুদের মাঝে কোনো প্রতিনিধি ঈদের বস্ত্র বিতরণ করেছেন। তারা কেবল, বড়দের মাঝে বিতরণ করে, শিশুদের মাঝে নয়। সে জন্য আমার মাথায় এলো, শিশুদের জন্য কিছু করার। যেখানে থাকবে না কোনো স্বার্থ।
 


সামাজিক এ কাজটা ছড়িয়ে পড়ছে। কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপ, সাতক্ষীরার দ্বীপ গাবুরা, দ্বীপ জেলা ভোলার মনপুরা দ্বীপ এবং নিজ জেলায় বেশ কিছু সংগঠন নদীভাঙা, অসহায় শিশুদের মাঝে ঈদের জামা বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে। যারা আগে বড়দের মাঝে ঈদের পোশাক বিতরণ করতো। এখন সবার দৃষ্টি শিশুদের দিকে ফিরছে। ওই সংগঠকদের মুখ থেকেই এই পরিবর্তনের কথা শুনে নিজেকে সার্থক মনে করছি। এই যে একটা পরিবর্তন, সে পরিবর্তনের জন্য ফেসবুকের মতো একটি মাধ্যম আমার বিশাল শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। উপকূল পড়ুয়াদের সৃজনশীল ও সামাজিক সংগঠন ‘আলোকযাত্রা-কোস্টাল ইয়ুথ নেটওয়ার্ক’ লক্ষ্মীপুর টিমের দলনেতার দায়িত্বভার আমার কাঁধেই। সে সুবাদে বাংলাদেশের উপকূল সাংবাদিকতার পথিকৃৎ রফিকুল ইসলাম মন্টু ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় কাজটা শুরু করি। আমি চাই, ফেসবুককে ব্যবহার করে এমন উদ্যোগ দেশের সকল পিছিয়ে পড়া জনপদে ছড়িয়ে পড়ুক। যেখানে একটি শিশুও নতুন জামার অভাবে ঈদের আনন্দ থেকে বাদ পড়বে না।





রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ জুন ২০১৯/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়