ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

হারিয়ে যাচ্ছে নান্দনিক ঈদ কার্ড

মহিউদ্দিন অপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ৭ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হারিয়ে যাচ্ছে নান্দনিক ঈদ কার্ড

মহিউদ্দিন অপু : একজন কাঁচি দিয়ে সাদা অফসেট কাগজ কাটছে। কাগজে আঠা লাগিয়ে খাম বানাচ্ছে আরেকজন। অন্যজন রঙিন কলমে টুকরো কাগজ ও খামের ওপর লিখছে: ‘ঈদ মোবারক, ঈদের দাওয়াত রইল’।  লেখা শেষে খামগুলো একে অন্যদের দিয়ে পরস্পর ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছিল। এতক্ষণ শিশু প্রিয়ম, তাহসিন, সিহাব, আহাদ ও জনির কথা বলছিলাম। ওদের কাণ্ড দেখে কৌতূহল হলো। কথা বলে বুঝলাম, ওরা ঈদ কার্ডের গল্প শুনেছে কিন্তু ঈদ কার্ড দেখেনি। উপকূলীয় ছোট শহর বরগুনার বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরেও পায়নি ঈদ কার্ড। তাই নিজেরাই তৈরি করে নিয়েছে ঈদ কার্ড।

একটা সময় আবেগ, ভালোবাসার বিভিন্ন রকম বার্তায় ঈদ কার্ডের মাধ্যমে বন্ধু-বান্ধব ও প্রিয়জনদের মধ্যে ঈদের শুভেচ্ছা আদান-প্রদান করার প্রচলন ছিল। যাতে লেখা থাকতো, ‘ওই দেখা যায় ঈদের চাঁদ, বাড়িয়ে দিলাম দুটি হাত। মিষ্টি মুখের হাসিতে, দাওয়াত দিলাম আসিতে।’ কিংবা ‘ঈদের দাওয়াত তোমার তরে, আসবে তুমি আমার ঘরে, কবুল করো আমার দাওয়াত, না করলে পাবো আঘাত, তখন কিন্তু দিবো আড়ি, আর যাবো না তোমার বাড়ি..’ ইত্যাদি। তখন রমজান মাস আসতেই নতুন জামা জুতার পাশাপাশি জমে উঠতো ঈদ কার্ডের বাজার। ঈদ কার্ড ছাড়া যেন অপূর্ণ থাকতো সেসময়ের ঈদের আনন্দ। সময়ের বিবর্তনে আমরা ডিজিটাল যুগে এখন। সময়ের এই বিবর্তনের সঙ্গে আমাদের আবেগ, ভালোবাসা ও অনুভূতি প্রকাশের অনেক পরিবর্তন ঘটেছে।

ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানো ও ঈদ আনন্দের বড় একটা অংশ ঈদ কার্ড থাকায় কার্ডের দোকান ছাড়াও তখন লাইব্রেরি, গিফট শপগুলোর একটা বড় অংশ জুড়ে থাকতো ঈদ কার্ড। নকশা ও আকার ভেদে ৫ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকায়ও বিক্রি হতো। শহর কিংবা গ্রাম, পাড়া মহল্লার অলিগলিতেও বসতো ঈদ কার্ডের ছোট ছোট দোকান। বেশিরভাগ সময় বিক্রেতা থাকতো পাড়ার যুবক-কিশোর। সুতা টাঙিয়ে দোকানগুলোতে সাজিয়ে রাখা হতো নানা বর্ণের ঈদ কার্ড। ফুল, পাখি, সবুজ ঘাস, প্রজাপতি কিংবা মসজিদের ছবি আঁকা থাকতো সেসব কার্ডের ওপর। আবার নানা বর্ণের কলম দিয়ে কার্ডের উপরে লেখা থাকতো ‘ঈদ মোবারক’। পছন্দ অনুসারে প্রত্যেকেই তখন প্রিয়জনের জন্য কিনতো এসব ঈদ কার্ড।

 



ঈদ যায়, ঈদ আসে। প্রিয়জনকে আধুনিক প্রযুক্তিগত পদ্ধতিতে ঈদ শুভেচ্ছা পাঠালেও এখন আর কেউ আগের সেই ঈদ কার্ড পাঠায় না। শিশু-কিশোর, তরুণ প্রজন্মের কাছে অপরিচিত হয়ে যাচ্ছে একসময়ের জনপ্রিয় শুভেচ্ছা মাধ্যম ‘ঈদ কার্ড’। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এসএমএস, ই-মেইল, মেসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুক ও টুইটারে ই-কার্ড, অডিও, ভিডিওতে ঈদ শুভেচ্ছা আদান-প্রদান করা হলেও এখনো অনেক মানুষের কাছে ঈদ কার্ডের আবেদন রয়েছে। বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এখনো পরিচিতজনদের ঈদ কার্ড পাঠান। ঈদ কার্ডের মতো আন্তরিকতা ও ভালবাসার ছোঁয়া ডিজিটাল শুভেচ্ছা বার্তায় পাওয়া যায় না বলেও অনেকে মন্তব্য করেন।

কবি ও সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম রিয়াজ বলেন, ‘আমাদের দেশে সরকারি ও বেসরকারি বেশকিছু প্রতিষ্ঠান এখনো ঈদ কার্ডের প্রচলন অব্যাহত রেখেছে। তবে সাধারণ মানুষের মধ্য ঈদ কার্ডে আগের সেই আবেদন এখন আর নেই। বাঙালি সংস্কৃতির সুন্দর এই ঐতিহ্য বলতে গেলে এখন বিলুপ্তির পথে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ জুন ২০১৯/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়