ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বেড়েছে শিশুদের সাইকেল স্টান্ট গ্যাং

মহিউদ্দিন অপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৬, ৯ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বেড়েছে শিশুদের সাইকেল স্টান্ট গ্যাং

মহিউদ্দিন অপু : সাইকেলের সঙ্গে আমরা সকলেই পরিচিত। পায়ে চালানো দুটি চাকা বিশিষ্ট এই বাইনকে ইংরেজিতে বাইসাইকেল বলা হলেও বাংলায় শুধু সাইকেল বলেই অভিহিত করা হয়। বাহনটি যথার্থ পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানিমুক্ত। নিয়মিত সাইকেল চালানোর মাধ্যমে সুস্থতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করাসহ সাইকেলে রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা। বিশ্বজুড়ে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে সাইকেল ও এর ব্যবহারকারী সাইক্লিস্টদের সংখ্যা।

এই সাইক্লিস্টদের কেন্দ্র করে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি গ্রুপ বা সাইকেল প্ল্যাটফর্ম। সাইকেল নিয়ে বিভিন্ন অনুশীলনের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে সাইকেলকেন্দ্রিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানও করছে তারা।

জাদুশিল্পীদের জাদুর মায়াজালে মোহিত হওয়ার মতো সাইক্লিস্টদের কাছেও রয়েছে আনন্দদায়ক বেশকিছু বিষয়। তেমনি জনপ্রিয় একটি বিষয় হলো সাইকেল স্টান্ট। সাইকেল স্টান্ট শুধু আনন্দদায়ক বিষয়ই নয়, সাইকেল স্টান্ট একটি শিল্পও। শিল্পটি আয়ত্ত করতে কঠোর অনুশীলন করতে হয়। সাইকেল স্টান্ট মূলত সাইকেল নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কসরত দেখানো। যারা স্টান্ট করে তাদের বলা হয় স্টান্টার। সাধারণত স্টান্টারদের সাইকেলের ওপর নিয়ন্ত্রন সাধারণ সাইকেল আরোহীর থেকে বেশি থাকে। যারা এটি করতে পারে তারা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।

 



জানা যায়, ১৮৮০ সালে প্রথম এই ধরনের কসরত করেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাইকেল আরোহী ড্যানিয়েল জে ক্যানারি। তিনি পুরোনো সাইকেলের বৃহদাকৃতির চাকার সাহায্যে হুইলি নামক এক ধরনের সাইকেল স্টান্টের উদ্ভাবন করেছিলেন। তখন থেকেই ওই আশ্চর্যজনক কসরত জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে। বাংলাদেশে সাইকেল নিয়ে কসরত বা স্ট্যান্ট শুরু হয় ২০০৯ সালে। ঢাকার গাজীপুরে আকিব জাভেদ নামের এক যুবক বাংলাদেশে প্রথম সাইকেল স্টান্ট শুরু করে বিভিন্ন প্রকার খেলা দেখান। বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০০ রকম সাইকেল খেলা আছে এবং এর মধ্যে ২০টি খুবই জনপ্রিয়। যেমন- হুইলিতে পেছনের চাকা মাটিতে থাকবে এবং সামনের চাকা ওপরে। এক্ষেত্রে স্টান্টার পেছনের চাকায় ভর করে সাইকেল চালিয়ে যাবে। জনপ্রিয় আরেকটি খেলা হচ্ছে সার্ফিং। সার্ফিং হলো দুই হাত ছেড়ে চলন্ত সাইকেলের ওপর দাঁড়ানো। এছাড়াও জনপ্রিয়তায় রয়েছে বানি হপ খেলা। বানি হপ খুবই মজার একটি খেলা। বানি হপে স্টান্টার সাইকেল চালিয়ে এসে প্রথমে সামনের চাকা তুলে এবং পরে পেছনের চাকা তুলে কোনো প্রতিবন্ধকতা পার হবেন। জনপ্রিয় আরেকটি খেলা হচ্ছে ফ্লাইং মিঙ্গে। সিটের ওপর এক পা দিয়ে সামনের চাকা উপরে তুলে সাইকেল চালিয়ে যাওয়াই হচ্ছে ফ্লাইং মিঙ্গে। আরেকটি খেলা হলো সাইক্লোন। চলন্ত সাইকেলে একেবারে খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার নাম সাইক্লোন। আরেকটি খেলা হলো নো ফ্রন্ট। এক্ষেত্রে চলন্ত সাইকেলে হঠাৎ করেই স্টান্টার সামনের চাকা খুলে শুধু পেছনের চাকা দিয়েই চলতে থাকে। অন্য একটি খেলা হলো রোলিং স্টপিং। জনপ্রিয় হলেও রোলিং স্টপিং সবচেয়ে কঠিন খেলা। রোলিং স্টপিং খেলায় পেছনের চাকা উপরে থাকবে এবং সামনের চাকায় ভর দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাওয়াসহ ২৭০ ডিগ্রি কোনে ঘোরা। এছাড়াও বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তায় রয়েছে রোলিং, স্টপিং, নিকন্যাক রোলিং, সুইচব্যাক সার্ফিং, সেমি চেয়ার হুইলিসহ বেশ কয়েকটি খেলা।

অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এখনও মানুষ স্টান্ট করাকে ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। সাধারণ মানুষের ধারণা, স্টান্টারদের মধ্যে অনেক তরুণই উচ্ছৃঙ্খল। ব্যস্ত রাস্তার মধ্যে বিপজ্জনক গতিতে তারা সাইকেল স্টান্ট করে এবং সব স্টান্টারই একই স্বভাবের। যদিও ইদানিং বাংলাদেশে তরুণদের থেকেও শিশু-কিশোরদের মধ্যে সাইকেল স্টান্ট করার আগ্রহ বেশি লক্ষণীয়। রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন ছোট শহরে, পাড়া মহল্লায়ও এখন কমবেশি শিশুদের সাইকেল স্টান্ট দল বা গ্যাং দেখা যায়। উপকূলীয় বরগুনার সার্কিট হাউজ মাঠে অনুশীলন অবস্থায় কথা হচ্ছিল তেমনি একটি ক্ষুদে গ্যাং ‘বরগুনা সাইকেল স্টান্ট’ এর কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে।

বরগুনা সাইকেল স্টান্ট গ্যাং এর স্কুলপড়ুয়া স্বাধীন, ধ্রুব, রূপম, শয়ন, মুহিব ও সিফাত বললো, ‘সাইকেল স্টান্ট আমাদের খুবই ভালো লাগে। প্রতিদিনই আমরা দু-তিন ঘণ্টা সাইকেল খেলা অনুশীলন করি। না পারলে ইলহাম আমাদের শিখিয়ে দেয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সাইকেলের দাম নিয়ে। স্টান্ট করার সাইকেলের দাম অনেক বেশি। মা-বাবা এত টাকা দিয়ে সাইকেল কিনে দিতে চান না। তাই সাধারণ সাইকেল দিয়ে সব খেলা অনুশীলন করতে পারিনা আমরা।’

 



বরগুনা সাইকেল স্টান্ট গ্যাং এর সমন্বয়ক ৭ম শ্রেণী পড়ুয়া আমতলার পারের ইলহাম বললো, ‘ইউটিউব দেখে সাইকেল খেলার আগ্রহ হয়। মোহাম্মদপুর এস.এস.জিই গ্রুপের সদস্য ঢাকার কেরানীগঞ্জের সিনিয়র স্টান্টার রাকিবের স্টান্ট দেখে উৎসাহ পাই। হুইলি, স্টপি, বনি হপ খেলা ইতোমধ্যে আয়ত্ত করতে পেরেছি। বাকি খেলাগুলো শেখার জন্য দলগত ভাবে আমরা অনুশীলন করছি।’

তবে আক্ষেপ করে সে বললো, ‘স্টান্ট করার মতো জায়গার খুবই অভাব রয়েছে। ফাঁকা রাস্তা পেলে আমরা স্টান্ট করে থাকি। তবে দেখা যায় রাস্তা ফাঁকা পাওয়াটাও খুব কঠিন হয়।’

বরগুনা সাইকেল ক্লাবের সভাপতি রাকিব ইসলাম বলেন, ‘বেশিরভাগ সাইকেল স্টান্টাররা সেফটি গিয়ার পড়ে স্টান্ট করে না। হেলমেট ও সেফটি গার্ড ব্যবহার না করায় স্টান্টাররা প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। দেশে স্টান্ট করার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি ভাবে এখনো তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা হয়ে ওঠেনি। হলে স্টান্টের মাধ্যমে স্টান্টাররা বাংলাদেশকে আরো ভালোভাবে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে পারতো।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ জুন ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়