ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

চিকিৎসার জন্য ঢাকা যাচ্ছে তমা

100,32 || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৩, ১৭ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চিকিৎসার জন্য ঢাকা যাচ্ছে তমা

শাহরিয়ার সিফাত, টাঙ্গাইল: মুখে বিশাল আকৃতির টিউমার নিয়ে ভোগান্তিতে থাকা কিশোরী তমা আক্তার চিকিৎসার জন্য আগামী বুধবার ঢাকা যাচ্ছে।

তাকে ঢাকায় চিকিৎসক দেখানোর সুযোগ করে দিচ্ছে অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি.কম। আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারে জন্ম নেওয়া তমাকে ঢাকায় নেওয়ার প্রাথমিক খরচ দিচ্ছেন বাসাইলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সায়মা আক্তার।

মুখে টিউমার নিয়েই জন্মেছেন টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার জশিহাটি পশ্চিমপাড়ার দরিদ্র কৃষক আতাহার আলী মেয়ে তমা আক্তার। বয়স বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে টিউমারের আকৃতি।

বৃহস্পতিবার তমার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জীর্ণ ছোট্ট ঘরে চোখের পানি ফেলছে সদ্য দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেওয়া তমা। তার জীবনের ১৬টি বছর কেটেছে লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে। তমার বিষণ্ন চোখের চাহনি যেন মনে করিয়ে দেয়- তার একেকটি দিন শুরু হয় অনিশ্চয়তা আর হতাশা নিযে।

বারান্দায় বসে বাড়ির উঠোনে বোনা লাউ শাক কুটছিলেন তমার মা শারমিন বেগম। সংবাদকর্মী আসার খবর পেয়ে বাড়ির পাশের বাজার থেকে ছুটে আসেন কৃষক আতাহার আলী। তমাকে রাইজিংবিডির পক্ষ থেকে ঢাকায় চিকিৎসক দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে, এ তথ্য জানানোর পর তৈরি হয় এক আবেগঘন দৃশ্য। ততক্ষণে প্রতিবেশীরাও এসে জড়ো হন।

তমার মা শারমিন বেগম জানান, পাঁচ সন্তানের মধ্যে তমা সবার ছোট। বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে পাশের গ্রামে। তাদের দুজনের স্বামীই সৌদি আরব প্রবাসী। বড় ছেলে শরীফ বিয়ে করে ঢাকায় থাকেন। সেখানে তিনি একটি কাঠের আসবাবের দোকানে কাজ করেন। অপর ছেলে সাদ্দাম বাড়িতে থেকে বাবার সঙ্গে কৃষি কাজ করেন। আর সবার ছোট মেয়ে তমা এবার দাখিল পরীক্ষা দিয়েছে।

তিনি জানান, জন্মের পর তমার মুখের বাম পাশে একটি ছোট্ট কালো দাগ দেখা যায়। সেদিনই স্থানীয় হোমিও চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হলে তার তত্ত্বাবধানে কিছুদিন চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু অর্থের অভাবে অল্প কিছুদিন পরই সেই চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় হতে থাকে তমার মুখের বাম পাশের মাংসপিণ্ড। তিন বছর বয়সে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় টাঙ্গাইলের মির্জাপুর কুমুদিনি হাসপাতালে। সেখানে তিন মাস রাখা হয় তমাকে। সেখানে সপ্তাহে একটি করে ইঞ্জেকশন দেওয়া হতো। প্রতিটি ইঞ্জেকশনের দাম ছিল ৩৫০ টাকা। কিন্তু দরিদ্র বাবার পক্ষে সেই চিকিৎসাও বেশি দিন করানো সম্ভব হয়নি।

 


৬ বছর বয়সে পা পিছলে পড়ে তমার মুখ কেটে যায়। তখন তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ১৫ দিন চিকিৎসা দেওয়ার পর চিকিৎসকরা তমাকে সুস্থ করতে ব্যর্থ হয়ে ভারতের মাদ্রাজে নিয়ে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু দরিদ্র আতাহার আলীর পক্ষে তা সম্ভব হয়নি।

মুখে বড় আকৃতির টিউমার নিয়ে অস্বস্তিতে থাকে তমা। লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে বড় হতে থাকে সে। কিন্তু শিক্ষাগ্রহণের আগ্রহ আর অদম্য মনোবল নিয়ে বাড়ির পাশের ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে এবার দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয় তমা।

তমার মা শারমিন বেগম রাইজিংবিডিকে জানান, বয়স বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তমার মুখের মাংসপিণ্ড। ছোটবেলায় চিকিৎসকরা দেশের বাইরে নিয়ে যেতে বললেও পরিবারের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি।

তমার মা বলেন, রাইজিংবিডির পক্ষ থেকে তমাকে চিকিৎসক দেখানোর যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে যদি সবার সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়া যায় তাহলে হয়তো তমা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে।

তমার বাবা আতাহার আলী রাইজিংবিডিকে বলেন, বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিলেও ছোট মেয়েকে কোথাও বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবতে পারি না। কঠিন এই রোগ নিয়ে সেটা হয়তো কোনোদিন সম্ভবও হবে না। এখন দেশের মানুষ যদি সাহায্য-সহযোগিতা করে, তবেই হয়তো তমার ভবিষ্যত ভালো হবে। আর্থিক অবস্থা খারাপ হলেও ধার-দেনা করে তমাকে দাখিল পর্যন্ত লেখাপড়া করিয়েছি। কিন্তু এখন সেটা চালানোও আর সম্ভব হচ্ছে না।

এ সময় অশ্রুসিক্ত চোখে তমা রাইজিংবিডিকে বলেন, মাঝে মাঝে মুখে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। ঠিকভাবে কথা বলতে কিংবা খেতে পারি না। মুখে এমন মাংস নিয়ে কোথাও যেতে পারি না। কারো সাথে মিশতে পারি না। স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করব। কিন্তু যেখানে ঘর থেকে বের হওয়াই অসম্ভব হয়ে গেছে সেখানে লেখাপড়া তো আর হবে না। আমাকে সুস্থ করার সামর্থও বাবার নেই। শুনেছি মানুষের সাহায্য নিয়ে আমার মতো কঠিন রোগে আক্রান্তরা সুস্থ হচ্ছে। জানি না আমার দিকে কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে কি না।

এদিকে তমার এমন অবস্থার কথা জানতে পেরে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বাসাইলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সায়মা আক্তার। রাইজিংবিডির পক্ষ থেকে চিকিৎসক দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে জেনে তমাকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

রাইজিংবিডিকে সায়মা আক্তার বলেন, নানা প্রতিকূলতার পরও তমা এবার দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে, এটা যে কারোর জন্যই অনুপ্রেরণার। আমাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তমার সুস্থ হওয়ার জন্য যত প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করা সম্ভব, আমরা তা করব। পাশাপাশি দেশের বিত্তবান ব্যক্তি, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।

তমার চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য পেতে খোলা হয়েছে বিকাশ অ্যাকাউন্ট। তমার বাবার ব্যবহৃত ০১৭৪৭২৪৪৯০৬ নম্বরে বিকাশ করে তাকে সাহায্য করতে পারবেন যে কেউ।

উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ রাইজিংবিডিতে ‘মাংসপিণ্ডে ঢাকা তমার মুখ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই দিন রাইজিংবিডির পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান ডা. ইকবাল মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি তমাকে বিএসএমএমইউতে আনার পরামর্শ দেন। এরপরই তমাকে ঢাকায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ মার্চ ২০১৭/শাহরিয়ার সিফাত/সাওন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়