তিন জেলা এখনো ম্যালেরিয়া ঝুঁকিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে সাফল্য এলেও তিন জেলা এখনো ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইইডিসিআর ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক গবেষণা থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

আগামী ২৫ এপ্রিল ‘বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস-২০১৭’ উপলক্ষে ম্যালেরিয়া নির্মূলে ভবিষ্যৎ করণীয়, ঝুঁকি মোকাবেলায় চ্যালেঞ্জ, সুপারিশ এবং ম্যালেরিয়া সম্পর্কিত বার্তা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি ও ব্র্যাক যৌথভাবে এ সংবাদ  সম্মেলনের আয়োজন করে।

এবারের বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘চিরতরে ম্যালেরিয়া হোক অবসান’।

গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে সাফল্য আশাব্যঞ্জক। জনসচেতনতা এবং সরকারের সহযোগিতায় ব্র্যাকসহ অন্যান্য বেসরকারি সংস্থার সমন্বিত কর্মসূচি ও কার্যকর উদ্যোগের কারণেই এ সাফল্য এসেছে। তবে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে এলেও এর ঝুঁকিও একেবারে কম নয়। বিশেষত পাহাড় ও বনাঞ্চলবেষ্টিত হওয়ায় দেশের বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি- এই তিন জেলায় ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি এখনো অনেক বেশি।

প্রতিবছর দেশে মোট ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে ৯৩ শতাংশ রোগীই হচ্ছে এই তিন জেলার। এই তিন জেলাসহ ২০১৬ সালের ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৭ হাজার ৭৩৭ জন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ম্যালেরিয়া বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা। দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ১৩টি জেলার ৭১টি উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব রয়েছে। প্রতি বছর দেশে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর মধ্যে প্রায় ৯৮ শতাংশ সংঘটিত হয়ে থাকে এই ১৩টি জেলায়। জেলাগুলো হচ্ছে : রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর এবং কুড়িগ্রাম।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে গত তিন বছরে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের হার ক্রমান্বয়ে কমেছে। ২০১৪ সালে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার ৪৮০ জন। ২০১৫ সালে তা কমে ৩৯ হাজার ৭১৯ জনে এবং ২০১৬ সালে আরো কমে ২৭ হাজার ৭৩৭ জনে দাঁড়ায়। তবে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর হার আটজন বেড়েছে। ২০১৫ সালে যেখানে এ রোগে মৃত্যু হয়েছিল ৯ জনের, সেখানে ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ জনে। তবে জনসেচতনতা, সরকারের কার্যকর উদ্যোগ এবং ব্র্যাকসহ অন্যান্য বেসরকারি সংস্থাগুলোর যৌথ প্রয়াসে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু ২০১৪ সালে ৪৫ জন থেকে ব্যাপকভাবে কমে ৯ জনে নেমে এসেছিল।

মূল প্রবন্ধে গত ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সালে অর্থাৎ গত ছয় বছরের ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে সাফল্যের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, ২০১০ সালে যেখানে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৫ হাজার ৮৭৩ জন, সেখানে ২০১৬ সালে তা কমে ২৭ হাজার ৭৩৭ জনে এসে দাঁড়ায়। শতকরা হিসাবে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে ৫০ শতাংশ কমেছে। একই সঙ্গে ২০১০ সালে যেখানে ৩৭ জন রোগী মারা যায়, সেখানে ২০১৬ সালে এই রোগে ১৭ জন রোগী মারা যায়। শতকরা হিসেবে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত মৃত্যুর হার গত  ছয় বছরে ৫৪ শতাংশ কমেছে। 

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সরকারের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলকরণ। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঠিক অবস্থান নিশ্চিত করা এবং দেশের উন্নতি ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অবদান রাখা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলে আমরা বদ্ধপরিকর। গত ছয় বছরে মৃত্যুর হার ওঠা-নামা করলেও আক্রান্তের হার প্রায় ৫৪ শতাংশ কমেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই আশাব্যঞ্জক।

মূল প্রবন্ধে ম্যালেরিয়া নির্মূলকরণে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করা হয়। এগুলো হচ্ছে : দুর্গম এলাকায় দক্ষ চিকিৎসকের স্বল্পতা ও সহজে চিকিৎসা দিতে না পারা, নগরায়ন ও সময়ের পরিবর্তিত বাস্তবতায় মানুষের দ্রুত অবস্থানগত পরিবর্তন, সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া, জলবায়ুগত পরিবর্তন ইত্যাদি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের লাইন ডিরেক্টর ও রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এম এ ফয়েজ, সাবেক কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের লাইন ডিরেক্টর ও রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ, বাংলাদেশের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার (এনপিও) ডা. এ মান্নান বাঙ্গালী  প্রমুখ।



রাইজিংবিডি/ ঢাকা/২৩ এপ্রিল ২০১৭/হাসিবুল/মুশফিক