ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

যেখানে শিশুকে বাতাস দিতে টিকার কার্ডই ভরসা

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৬, ৯ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যেখানে শিশুকে বাতাস দিতে টিকার কার্ডই ভরসা

আরিফ সাওন : রাজধানীর কদমতলীর মাতুয়াইল শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে টিকা দিতে গিয়ে শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। যেখানে শিশুদের নিয়ে মায়েরা অপেক্ষা করেন সেখানে একটি ফ্যান অকেজো।

অবশ্য আরেকটি ফ্যান আছে কিন্তু তা টিকাদান কক্ষের দরজার কাছে। সেখানে শিশু নিয়ে দাঁড়াতে দেয় না দায়িত্বরত গার্ড। তাই টিকা দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকা শিশুকে বাতাস দেওয়ার জন্য টিকার কার্ডটিই মায়েদের ভরসা।

প্রচণ্ড গরমে শিশুদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে টিকাদান রুমের আশপাশ। গরমে শুধু শিশুরাই নয়, শিশুদের অবিভাবকরাও হাঁপিয়ে ওঠেন।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় গিয়ে দেখা যায়, মাতুয়াইল শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক কোনে সিঁড়ির পাশে টিকাদান কক্ষ। এই জায়গাটা একেবারে অপ্রশস্ত। প্রায় চারপাশ থেকেই আটকানো। নেই বসার তেমন সু-ব্যবস্থা। একপাশে দেওয়াল ঘেঁসে রয়েছে ৫/৬টি চেয়ার। চেয়ারে শিশু নিয়ে বসে আছেন কয়েকজন। এ সময় লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন অন্তত ৩৫ জন। নেই কোন শৃঙ্খলা। কোন কোন শিশু গরমে কান্না করে দিচ্ছে। একটু বাতাস দিয়ে শিশুদের কান্না থামাতে ব্যস্ত অভিভাবকরা। কেউ ছোট কাগজ, কেউ পত্রিকা, কেউ ভ্যানিটি ব্যাগ, কেউ কাপড়ের আঁচল আবার কেউ টিকার কার্ড দিয়ে বাতাস দিচ্ছেন। তবে বেশির ভাগ মা’কেই দেখা গেছে টিকাদানের কার্ডটি দিয়ে বাতাস দিতে।

সকাল ১০টার দিকে একটু হৈচৈ শুরু হয়। অবিভাবকরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। অনেকেই গরম সুরে কথা বলতে শুরু করেন। কারণ, ১০টার কয়েক মিনিট আগে টিকা দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তাই টিকা দানকারী কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে অবিভাবকরা বিভিন্ন নেতিবাচক কথা বলতে থাকেন। এ সময় এখানকার দায়িত্বরত গার্ড জানান, টিকাদানকারী কর্মকর্তা তার সন্তানকে আনতে স্কুলে গেছেন। তিনি প্রতিদিন ১০টার দিকে আধাঘণ্টা থাকেন না। এ কথা শুনে অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

অভিভাবকরা বলেন, ‘এতোগুলো শিশুর কথা একটু চিন্তা করেননি যে, গরমে এদের কি অবস্থা হচ্ছে। কিন্তু নিজের সন্তানের কথা ঠিকই মনে আছে।

সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে তিনি রুমে আসেন। ততোক্ষণে লাইন আরো দীর্ঘ হয়ে গেছে। ভিড়ও বেড়েছে।

কথা হয় মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি সন্তানকে টিকা দিতে সাড়ে ৯ টার দিকে এসেছেন। সোয়া ১০টা পর্যন্ত টিকা দিতে পারেন নি। আরো আধাঘণ্টায়ও  পারবেন কিনা সন্দেহ আছে।’

তিনি বলেন, ‘এখানে এসে ভোগান্তির কোন শেষ নেই। গরমে শিশু যে ভাবে কান্না করছে তা সহ্য করা যায় না। শিশুদের নিয়ে যে এতো ভোগান্তি তা নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। গতমাসেও যখন এসেছিলাম তখনও ফ্যানটি অকেজো দেখেছিলাম।’

এ সময় তার পাশে থাকা আরেক ব্যক্তি জানান, তিনি দীর্ঘ ছয়মাস ধরে ফ্যানটি অকেজো দেখছেন।

এখানে কোন শৃঙ্খলা নেই- এ অভিযোগ অনেকের। তারা বলেন, প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মী সিরিয়াল না মেনে অনেককে নিয়ে এসে টিকা দিয়ে নিয়ে যায়।

শিশুকে কোলে নিয়ে লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে মায়েদের অনেক কষ্ট হয়। তাই অনেকের দাবি পর্যাপ্ত চেয়ার বসানোর। এক মা বলেন, একভাবে এক থেকে দেড় ঘন্টা গরমে শিশু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কী সম্ভব? এ জন্য বসার ব্যবস্থা করা দরকার।

টিকার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনার ব্যাপারে শিশু নিয়ে আসা এক মা বলেন, মোহাম্মদপুরে দেখেছি টিকা দিতে গেলে আগে কার্ড জমা নেয়। তারপর রুমের সামনে চেয়ার বসে অপেক্ষা করতে বলে এবং পর্যায়ক্রমে সিরিয়াল অনুযায়ী ডেকে নিয়ে টিকা দেয়। এখানেও যদি সেই ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে ভোগান্তি অনেক কমে যাবে।

গরমে শিশুদের কি ধরনের সমস্যা হতে পারে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেলা আখতার বলেন, ‘গরমে শিশুরা ঘেমে যায়। ঘাম থেকে ঠাণ্ডা লাগতে পারে, নিউমোনিয়া হতে পারে। তাই শিশুর যাতে গরম না লাগে আর গরম লেগে ঘেমে গেলে ঘাম মুছে দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।’

গরমে শিশুদের রোগ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, এখন শিশুদের ক্ষেত্রে চিকনগনিয়া ভাইরাসের প্রকোপ চলছে। একে শুধু নিউমোনিয়া বলে ছেড়ে দিলে চলবে না, চিকনগনিয়া বা ভাইরাল ফিভার কিনা সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে জানা যায়, তিনি মন্ত্রণালয়ে গেছেন।

পরে কথা বলা হয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আপনি যে সমস্যাগুলোর কথা বলেছেন, আমরা দ্রুত সেগুলো সমাধান করবো। ফ্যান ঠিক করা হবে এবং শিশুদের নিয়ে মায়েদের বসার জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা করে দেবো।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ মে ২০১৭/সাওন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়