ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

লুপাস রোগ সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪২, ৯ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লুপাস রোগ সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদেক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেছেন, লুপাস বা এসএলই রোগ সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে। এ সম্পর্কিত চিকিৎসা সেবা শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক নয়, ছড়িয়ে দিতে হবে দেশব্যাপী। লুপাস রোগ সম্পর্কে মানুষ খবুই কম জানেন। লুপাস রোগীদের চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি পুনর্বাসনও জরুরি।

বিশ্ব লুপাস দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিলন হলে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।  বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমাটোলজি বিভাগ, লুপাস ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ রিউমাটোলজি সোসাইটি যৌথভাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রশান্ত মজুমদার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, দিবসটি উপলক্ষে র‌্যালি এবং রোগীদের মাঝে সচেতনতামূলক লিফলেট, লুপাস গাইড বই বিতরণ করা হয়। রোগীদের সাথে সচেতনতামূলক পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া সেশন বা মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়।

দিবসটির আলোচনায় বক্তারা জানান, লুপাস হলো বিশ্বের অন্যতম রহস্যময় ও বিনাসী এক রোগ। যা মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি সাধন করতে পারে।

লুপাসের সাধারণ উপসর্গগুলো হলো চুল পড়া, মাথা ব্যাথা, নাক ও গালের উপর প্রজাপতির পাখার মত লাল চাকা, চরম ক্লান্তি বা অবসাদ, জ্বর, মুখে বা নাকে ঘা, গিরায় ব্যাথা বা ফোলা, অস্বাভাবিক রক্ত জমাট, রক্তশূন্যতা, বুকে গভীর নিশ্বাসের সময় ব্যাথা, রোদ বা আলোয় শরীরের চামড়ায় প্রভাব বা জ্বালাপোড়া, ঠাণ্ডায় আঙুল সাদা বা নীলাভ হয়ে যাওয়া এবং হাত, পা ও চোখের চারপাশে ফোলা ইত্যাদি।

প্রকৃতপক্ষে, লুপাস বা এসএলই মানে সিস্টেমিক লুপাস ইরাথেমেটোসাস। এসএলই রোগে রোগীর রোগ প্রতিরোধকারী সিস্টেম নিজের শরীরের বিরুদ্ধে কাজ করা শুরু করে। এই রোগকে সিস্টেমিক বলা হয়, কারণ, এই রোগটি শরীরে বিভিন্ন সিস্টেম (যেমনঃ চর্ম, স্নায়ুতন্ত্র, রক্তসঞ্চালন তন্ত্র, কিডনী ইত্যাদি)-এর ওপর আক্রমণ করে। ইরাথেমেটোসাস শব্দটির অর্থ ত্বকের কিছু অংশ লাল হয়ে যাওয়া।

লুপাস একটি গ্রিক শব্দ যার অর্থ নেকড়ে। যেহেতু এই রোগের আক্রমণ অনেকটা নেকড়ের আক্রমণের মত আকস্মিক, তাই একে লুপাস বলা হয়। আজ পর্যন্ত এই রোগের সঠিক কোন কারণ সম্পূর্ণ জানা যায়নি।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, ‘বিশ্বে ৫০ লাখ লুপাস রোগে আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। এ রোগ প্রতি এক লাখে ২০ থেকে ১৫০ জনের হতে পারে। লুপাস রোগীদের ৯০ ভাগই কমবয়সী মহিলা। ৬৫ ভাগ রোগীর বয়স ১৬ থেকে ৫৫ এর মধ্যে, ২০ ভাগ ১৬ বছরে নীচে এবং ১৫ ভাগ ৫৫ বছরের বেশী। ছেলেদের এই রোগের প্রকোপ মেয়েদের চেয়ে অনেক কম। এ রোগের চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি বিশেষ করে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন পদ সৃষ্টি ও গবেষণার সুযোগ-সুবিধার উপর গুরুত্বরোপ করেন তারা।

আলোচনা অনুষ্ঠানে জানানো হয়, লুপাসের মতো দীর্ঘমেয়াদী রোগের ক্ষেত্রে করণীয় হলো রোগের ইতিহাস ও গতি প্রকৃতি সম্পর্কে সকল তথ্য ধারাবাহিকভাবে সংরক্ষণ করা ও ডাক্তারের সাথে পরামর্শের সময় সঠিকভাবে তুলে ধরা। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় ও তা উপশম বা নিরাময়ের জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা নির্ধারণে এসব তথ্য অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

লুপাস ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ-এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এন আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, রিউমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মিনহাজ রহিম চৌধুরী, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ আব্দুর রহিম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন লুপাস ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ-এর মহাসচিব ফারহানা ফেরদৌস। রোগীদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদা ফাতেমা ইতি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ মে ২০১৭/সাওন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়