ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনের চেয়ে বরাদ্দ অপ্রতুল

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৭, ১১ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনের চেয়ে বরাদ্দ অপ্রতুল

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনের চেয়ে বরাদ্দ অপ্রতুল। বাজেটে বছরে জনপ্রতি বরাদ্দ মাত্র ৭০০ টাকা। মাথাপ্রতি দৈনিক বরাদ্দ মাত্র ১ টাকা ৯২ পয়সা।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘স্বাস্থ্য বাজেট ২০১৭-২০১৮’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব তথ্য জানান বক্তারা। পাবলিক হেলথ অব বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে।

বক্তারা বলেন, গত কয়েক বছরের বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতি বছরের বাজেটে গড়ে ৫ ভাগ অর্থ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। টাকার অংকে বাড়লেও শতকরা হারের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়েনি। চাহিদা অনুয়ায়ী স্বাস্থ্য খাতে অন্তত ১৫ ভাগ বরাদ্দ দেওয়া দরকার।

তারা আরো বলেন, এমনিতেই স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল। তার ওপর সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে বরাদ্দের ৫০ ভাগ খরচ হয় না। আর যা খরচ হয় তারও অন্তত ৫০ ভাগ অপচয় এবং চুরি হয়ে যায়।

জনমুখী স্বাস্থ্য বাজেটের ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গোলটেবিল আলোচনায় বলা হয়, চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর বাংলাদেশের ৬৪ লাখ গরিব মানুষ আরো গরিব বা দারিদ্রসীমার নীচে চলে যায়। সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার সুযোগ পেলেও সেবাগ্রহিতাকে তার নিজের পকেট থেকে ৬০ ভাগ খরচ বহন করতে হয়। বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসালয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে প্রতিটি মানুষকে শতভাগ নিজের পকেট থেকেই বহন করতে হয়। পকেটের অর্থ ব্যয়ের পরেও স্বাস্থ্যসেবা-প্রত্যাশীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

গোলটেবিল আলোচনায় পাওয়ার মুখ্য আলোচক ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান (পরিকল্পনা) ডা. আ এ মোহিউদ্দিন ওসমানী। প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন, দৈনিক মানবকণ্ঠের প্রকাশক জাকারিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এ এন নাসির উদ্দিন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোস্যাল মেডিসিনের (নিপসম) অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ, দি ইউনিয়নের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন প্রমুখ। আলোচনা করেন সাংবাদিক শিশির মোড়ল, ইবনুল সাইদ রানা, ড. নাতাশা প্রমুখ।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পাবলিক হেলথ অব বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ডা. ফাতেমা আশরাফ। সঞ্চালনা করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাক্তন আঞ্চলিক উপদেষ্টা ডা. মোজাহেরুল হক।

সূচনা বক্তব্য দেন ডা. শারমিন ইয়াসমিন। ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন আয়োজক সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ডা. সমীর কুমার সাহা।

ডা. আ এ মোহিউদ্দিন ওসমানী বলেন, স্বাস্থ্যসেবা গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার, মানব উন্নয়নের সূচক। নিজের পকেট থেকে ৬০ ভাগেরও বেশি খরচ করে স্বাস্থ্যসেবা নিতে এসে প্রতি বছর দারিদ্র্যের দুষ্টুচক্রে পড়তে বাধ্য হচ্ছে ৬৪ লাখ মানুষ। 

জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের বড়লোকরা চিকিৎসা নিতে সিঙ্গাপুর ও আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, মধ্যবিত্ত মানুষ দেশের দামী হাসপাতাল  এবং গরিবরা ভারতে চিকিৎসা নিতে যায়। যাওয়া-আসা ও থাকার খরচ মিটিয়েও এ দেশের গরিব মানুষ তুলনামূলক অনেক কম খরচে ভারত থেকে সন্তোষজনক চিকিৎসা নিয়ে আসে। স্বাস্থ্য স্পর্শকাতর খাত। মানুষের জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত এই খাত। দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে এই খাত সার্বিকভাবে সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। দারিদ্র্য কমাতে দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হবে। প্রাইভেট স্বাস্থ্য সেক্টরে মনিটরিং নেই।

এন নাসির উদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নতুন করে গ্রাম নিয়ে ভাবতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের অপ্রতুলতার কারণে যদি দারিদ্র্য বেড়ে যায়, তাহলে আবার দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য বাজেটের ৬৫ শতাংশ  গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য হওয়া দরকার। কারণ, গ্রামে এখনো অধিক জনসংখার বসবাস। অথচ এখনকার বাজেটের বেশিরভাগ শহরে বরাদ্দ করা হয়। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে ধনী-গরিব সব মানুষের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার মানব উন্নয়নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক অফিস থেকে পৃথক ইউনিট গঠন করা যেতে পারে। অনেক চিকিৎসক গ্রামে যেতে চায় না। তারা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে।

ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাস্থ্যনীতির কারণে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে আমাদের স্বাস্থ্য কাঠামো দাঁড়িয়ে গেছে। এ কাঠামো দুর্যোগের মুহূর্তে বিশাল ভূমিকা রাখবে। এরপরও কিছু জায়গায় এখনো ঘাটতি আছে। স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থাপনার ঘাটতিগুলো পূরণ করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। স্কুল হেলথে কাজ করতে গিয়ে আমরা ফেল করেছি। এটা করতে পারলে শিক্ষার্থীরা শৈশব থেকেই স্বাস্থ্যসচেতন হয়ে উঠত।

সাংবাদিক শিশির মোড়ল বলেন, ক্যানসার নিরাময়ের নামে আনা ২০ কোটি টাকা দামের যন্ত্র বিগত ৫ বছর ধরে বিনা কাজে খুলনা মেডিক্যালে পড়ে আছে। বিশাল আকারের এই মেশিনটি আনার পর কখনই ব্যবহার করা হয়নি। শুধু তাই নয়, সারা দেশে অন্তত ২০০ কোটি টাকার মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। যা কাজে না লাগলেও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের চাপে আমদানি করা হয়। প্রশিক্ষণ ও কেনাকাটার নামেও স্বাস্থ্য খাতের মোটা টাকা আত্মসাৎ এবং চুরি হচ্ছে। হেলথ সেক্টরে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুরিও বেড়ে যায়।

ইবনুল সাইদ রানা বলেন, স্বাস্থ্য খাতে গত বাজেটের বরাদ্দ কোথায় কীভাবে কত খরচ হয়েছে তা জানার অধিকার জনগণের আছে। অথচ বাজেট বরাদ্দ কোথায় কোথায় খরচ হয়েছে তা কখনোই জনগণকে জানানো হয় না।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ মে ২০১৭/সাওন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়