ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সারে বছরে মারা যায় ১৪ হাজার

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৯, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সারে বছরে মারা যায় ১৪ হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক : জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সারে বছরে মারা যায় ১৪ হাজার নারী। এদের মধ্যে ৬৫৮২ জন জরায়ুমুখ ক্যান্সারে এবং ৭১৪২ জন স্তন ক্যান্সারে মারা যায়। এছাড়া বছরে নতুন আক্রান্ত হয় ২৬৭৯২ জন। এর মধ্যে ১১৯৫৬ জন নারী জরায়ু-মুখ ক্যান্সারে এবং ১৪৮৩৬ জন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।

মঙ্গলবার সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) এ-ব্লকের মিলনায়তনে এক সেমিনারে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় পরিচালিত বিএসএমএমইউর ‘জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং ও প্রশিক্ষণের জন্য জাতীয় কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প’-এর উদ্যোগে প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনার লক্ষ্যে আয়োজিত ডেসিমিনেশন সেমিনার ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দেশে তৃণমূল পর্যায়ে জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার কমিয়ে আনাই এ প্রকল্পের লক্ষ্য।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার অন্যতম প্রধানতম ক্যান্সার। ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩২ লাখ ভায়া ও সিবিই স্ক্রিনিং পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ১৬,৪৭,৩৮০ জন নারীর ভায়া স্ক্রিনিং করা হয়েছে। ১৬,৪৭,৩৮০ জন নারীর মধ্যে ১৫,৪৪,২৮৬ জনের সিবিই স্ক্রিনিং সম্পন্ন করা হয়েছে। পজিটিভ প্রায় ১ লাখ। এর মধ্যে জরায়ু-মুখ ক্যান্সার নির্ণয়ের পরীক্ষায় ৭৫২২৭ জন নারীর ভায়া পজিটিভ ও স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ের পরীক্ষায় ২১,২৫০ নারীর সিবিই পচিটিভ শনাক্ত হয়েছে। ২৩৫৮৮ জন নারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগ ও সার্জারি বিভাগ থেকে কল্পোস্কোপি পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন।

এই অনুষ্ঠানে ভায়া ও সিবিই স্ক্রিনিংসহ জারায়ু-মুখ ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সার নির্ণয়সহ চিকিৎসা সেবায় অবদান ও ভূমিকা রাখায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিবর্গ, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা, সিভিল সার্জন, উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, কল্পোস্কপিস্ট ও সিনিয়র স্টাফ নার্সবৃন্দকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মিসেস বদরুন্নেসা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তন্দ্রা শিকদার।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. পারভীন ফাতেমা।

বাংলাদেশে জরায়-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং ও প্রতিরোধ কার্যক্রম উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মেম্বার ও সর্জারি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ।

জাহিদ মালেক বলেন, ভেজাল খবার, শস্য উৎপাদনে কীটনাশকের ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ, ধূমপানসহ নানা কারণে মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। জরায়ু ও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অনেক মা-বোন মারা যান, তারা জানেনই না যে তাদের জরায়ু বা স্তনে ক্যান্সার হয়েছে। এজন্য এই প্রাণঘাতী রোগের বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ প্রতিরোধে পর্যায়ক্রমে দেশের সব উপজেলা পর্যায়ে যাতে মা-বোনেরা জরায়ু ও স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ের বিশেষ করে স্ক্রিনিংয়ের সুবিধা পান তা নিশ্চিত করা হবে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হবে।

অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, ক্যান্সারের প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যা সত্যিই উদ্বেগজনক। জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সারসহ সব ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন সংবাদপত্রসহ গণমাধ্যমের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। যেকোনো ধরনের ক্যান্সার আগেভাগে চিহ্নিত হলে তা নিরাময়, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সেমিনারে জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের দরিদ্র নারীদের জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচির মাধ্যমে সেবা প্রদানসহ চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি হাসপাতালসমূহে এ জাতীয় সেবা প্রবর্তন, জনসচেনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম এবং ক্যান্সার আক্রান্ত নারীদের রেফারাল পদ্ধতি, ফলোআপ ও চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। দেশের ১৮০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচি সম্প্রসারিত করা হয়েছে। জেলা হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই সেবার সুবিধাদি শক্তিশালী করা হয়েছে। ভায়া ও সিবিই ক্যাম্প পরিচালনা করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত সেবা প্রণয়নে সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসক ও নার্সকে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। দেশের প্রায় ৪১১০টি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে (মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে ও নির্বাচিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে এবং ১৪টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার সুবিধাদির ব্যবস্থা করা হয়েছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ জানুয়ারি ২০১৮/সাওন/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়