ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

২০০ টাকায় ক্যানসার রোগীর থাকা-খাওয়া

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫০, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
২০০ টাকায় ক্যানসার রোগীর থাকা-খাওয়া

আরিফ সাওন : প্রতিদিন মাত্র ২০০ টাকায় রাজধানী ঢাকায় ক্যানসার রোগীর থাকা-খাওয়া, হাসপাতালে আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

দিগন্ত মেমোরিয়াল ক্যানসার ফাউন্ডেশন-২০০৩ সাল থেকে ক্যানসার রোগীদের আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করে আসছে।

গ্রামের অনেক মানুষই জানে না তারা ঢাকায় এসে কোথায় থাকবেন, কী করবেন। তাদের জন্য এই প্রতিষ্ঠান অনেকটা সুখবর বলে মনে করেন অনেকে।

১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এই ফাউন্ডেশনে অবস্থান করে মহাখালী ক্যানসার হাসপাতালে চিকিৎসা করাচ্ছেন বাগেরহাটের সাইফুল ইসলাম (৪২)। তিনি জানান, ২০১৭ সাল থেকেই চিকিৎসার জন্য ঘুরছেন। কিন্তু কোনো কূল-কিনার করে উঠতে পারছিলেন না। কয়েকদিন আগে এই ফাউন্ডেশনের খোঁজ পান।

সাইফুল বলেন, ‘এখানে আসার পর শুধু থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাই নয়, অন্যান্য সুবিধাও পাচ্ছি। ফাউন্ডেশন থেকে নিজস্ব গাড়িতে করে নিয়ে যায়, হাসপাতালে চিকিৎসাসংক্রান্ত কাজ শেষে আবার নিয়ে আসে। আমার দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থাও করে দিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যবস্থা না করা হলে তাড়াতাড়ি হয়ত সিরিয়াল পেতাম না। আমি আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। এখান থেকে আমাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতাও করেছে।’

এই ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘সাইফুলের চিকিৎসা যাতে বিনামূল্যে করা যায়, আমরা সেজন্যও হাসপাতালে আবেদন করেছি।’

ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রফেসর ডা. নওফেল ইসলাম ২০০৩ সালে এই প্রতিষ্ঠান করেন। তার ছেলের নাম ছিল দিগন্ত। সে ছয় বছর বয়সে বোন-ম্যারো ক্যানসারে সিঙ্গাপুরে বসে মারা যায়। এরপর ডা. নওফেল ইসলাম ক্যানসার রোগীদের জন্য কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি করেন। দিগন্তের নামে নামকরণ করা হয় দিগন্ত ক্যানসার মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন।’

শুরুতে শিশুদের জন্য করা হলেও ধীরে ধীরে জেনারেল করা হয় জানিয়ে ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শিশুদের জন্য কোনো টাকা নেওয়া হয় না। শুরুতে ২০ জন শিশু রাখার ধারণ ক্ষমতা ছিল। এখন নারী-পুরুষ সবাই থাকতে পারেন। ৩০ জনের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। তবে শিশুদের সাথে অভিভাবক থাকলে সেক্ষেত্রে দিনে ২০০ টাকা করে নেওয়া হয়।’

 


ম্যানেজার বলেন, ‘থাকা-খাওয়া, হাসপাতালে যাওয়া-আসার জন্য দৈনিক ২০০ টাকা করে নেওয়া হয়। স্বাভাবিক খাবারের সাথে রোগীদের পুষ্টিকর খাবার বলতে দুধ, ডিম, ফলমূল এসব খাওয়ানো হয়। যারা একেবারেই গরিব রোগী, যাদের চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই, তাদেরও রেখে চিকিৎসা করাই। কিছু টাকা-পয়সা দিয়েও সহযোগিতা করি।’

তিনি বলেন, ‘দিনে রোগী নিয়ে গাড়ি তিনবার হাসপাতালে পাঠানো হয়। আমরা রোগী পাওয়ার পর দেখি তার কখন কী আছে। সেই সময় হিসাবে তাকে নিয়ে যাই। কারণ যার রেডিও দেওয়ার সময় বিকেলে তাকে তো সকালে নিয়ে বসিয়ে রাখার মানে হয় না। রোগীদের সুবিধা মতোই আনা-নেওয়া করা হয়।’

কীভাবে বা কারা এই ফাউন্ডেশন চালায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ফাউন্ডেশনের সরকারি বা বেসরকারি কোনো ফান্ড নেই। কয়েকজন চিকিৎসক আর ব্যবসায়ীর দেওয়া সহযোগিতায় এই প্রতিষ্ঠান চলে। এখন ৫৩ জন সদস্য রয়েছেন, তারা সহযোগিতা করেন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে থাকা অবস্থায় যদি কোনো রোগী মারা যায় আমরা তাদের দাফনের টাকা-পয়সা সব দিয়ে দেই। এখানে শিশুদের খেলাধুলা ও রোগীদের বিনোদনেরও ব্যবস্থা আছে।’

মঙ্গলবার ২০ ফেব্রুয়ারি আদাবরে দিগন্ত মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনে গিয়ে জানা যায়, সেখানে ১৮ জন রোগী ছিল। এর মধ্যে ১২ জন নারী ও ছয়জন পুরুষ।

এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অনেকে। তারা মনে করছেন, এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে গ্রামের রোগীরা জানে না, তাই কোথায় থাকবে কী করবে সেই ভয়ে চিকিৎসা করাতে অনেকেই রাজধানীতে আসতে চান না। সেজন্য এটার প্রচার বাড়ানো, সেইসঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানের পরিসরও আরো বাড়ানো প্রয়োজন।’

এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিদিন ক্যানসার হাসপাতালের রেডিওথেরাপি রেজিস্ট্রেশনের রুমের (রুম নং ১৫৩) সামনে লিফলেট বিতরণ করা হয়। রোগীদের আনা-নেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন সেলিম। তিনি অসুস্থ থাকায় এই কাজটি করছেন ওই প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী মো. সোহেল (০১৯১০ ৪১২৮১৯)।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/সাওন/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়