ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

বিনামূল্যে ফ্যাক্টর ইনজেকশন ও ওষুধের দাম কমানোর আহ্বান

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৬, ১৭ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিনামূল্যে ফ্যাক্টর ইনজেকশন ও ওষুধের দাম কমানোর আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেছেন, ‘হিমোফিলিয়াকে জাতীয় নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা, বিনামূল্যে ফ্যাক্টর ইনজেকশন সরবরাহসহ হিমোফিলিয়া চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের দাম কমানো প্রয়োজন।’

বুধবার হিমোফিলিয়া দিবসের আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস উদযাপন উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য রালি বের হয়।  এ ছাড়া, দিবসটি উপলক্ষে প্রবন্ধ লিখন, চিত্রাঙ্কন ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

এ বছর এই দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘প্রচার-উপযুক্ত চিকিৎসার প্রথম পদক্ষেপ’।  দেশের প্রান্তিক ও দুগর্ম অঞ্চলে হিমোফিলিয়া রোগ সম্পর্কে প্রচার এবং রোগী শনাক্তকরণই হচ্ছে এই রোগ নির্ণয় ও উপযুক্ত চিকিৎসার প্রথম পদক্ষেপ।

দিবসটি পালন উপলক্ষে ঢাকায় হেমাটোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ এবং হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়েছে।

আলোচনা সভায় বক্তারা বাংলাদেশে রক্তরক্ষণজনিত রোগ হিমোফিলিয়া রোগীদের ভোগান্তি ও দুঃখ দুর্দশা লাঘব এবং চিকিৎসার সুবিধার্থে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় (ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল) হিমোফিলিয়াকে জাতীয় নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করে রোগীদের চিহ্নিত করে নূন্যতম পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভাগীয় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সরকারিভাবে বিনামূল্যে ফ্যাক্টর ইনজেকশন সরবরাহসহ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।

আলোচনা সভায় দুই শতাধিক হিমোফিলিয়া রোগী ও পরিবারের সদস্য, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ, অতিথি এবং টিভি ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভায় বলা হয়, ১৯৮৯ সালে সর্ব প্রথম কানাডার একজন হিমোফিলিয়া রোগী ফ্রাংক কেনবল হিমোফিলিয়া ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার জন্মদিনকে বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।  আজ বিশ্বের ১১৮টি দেশে বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস পালিত হচ্ছে।  এর একটিই উদ্দেশ্য দেশবাসী, রোগী ও তাদের অভিভাবকবৃন্দকে সচেতন করা এবং সরকারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিত্তবান ব্যক্তি সবাই যেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় এবং তাদের সকলের জন্য সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে।

হিমোফিলিয়া এক ধরনের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণজনিত রোগ।  যার কারণ হলো জন্মগতভাবে তাদের শরীরে রক্ত বন্ধ হওয়ার উপাদান ফ্যাক্টর এইট/নাইন এর ঘাটতি।  বর্তমান বিশ্বে এ রোগের একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে ঘাটতি ফ্যাক্টর পূরন করা।  নিয়মিত চিকিৎসা করে চললে রোগের জটিলতা কমিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব।

বাংলাদেশে ফ্যাক্টর ইনজেকশন অত্যন্ত ব্যায়বহুল ও দুষ্প্রাপ্য হওয়ায় অধিকাংশ রোগী এই ইনজেকশন ক্রয় করে চিকিৎসা করতে পারেন না।  ফলশ্রুতিতে রোগীরা ধীরে ধীরে পঙ্গু হয়ে যায়, সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অকালে মৃত্যুবরণ করে থাকে।  পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই সরকারিভাবে হিমোফিলিয়া রোগীদের বিনামূল্যে ফ্যাক্টর ইনজেকশন সরবরাহ করা হয়।

আন্তর্জাতিক হিসাব অনুযায়ী, প্রতি ১০,০০০ জনে ১ জন হিসাবে বাংলাদেশে ১৬,০০০ জন হিমোফিলিয়া রোগী রয়েছে।  এ পর্যন্ত মাত্র ১৭০০ জন রোগী শনাক্ত ও নিবন্ধন করা হয়েছে।

তাদের চিকিৎসার জন্য ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব হিমোফিলিয়া-এর হিউম্যানিটারিয়ান এইড প্রোগ্রাম-এর আওতায় অনুদান প্রাপ্ত ফ্যাক্টর ইনজেকশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও চট্রগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের মাধ্যমে সরবরাহ করে বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।  যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

তবে সরকারি ব্যয়ে হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আশ্বাস আজও বাস্তবায়িত হয়নি।

এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার সহায়তা চেয়ে বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়েছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ এপ্রিল ২০১৯/সাওন/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়