ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

নওয়াজ শরিফ ‘না দোষী, না নির্দোষ’

রাসেল পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৩, ২০ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নওয়াজ শরিফ ‘না দোষী, না নির্দোষ’

রায়ের পর নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়মের টুইট করা তাদের পরিবারের হাস্যোজ্বল ছবি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পানামা পেপার্স দুর্নীতি মামলায় পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট দেশটির প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে যে রায় দিয়েছেন, তাতে তিনি ‘না দোষী, না নির্দোষ’।

নওয়াজ শরিফের পরিবারের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ খারিজ না করে তা খতিয়ে দেখতে ‘যৌথ তদন্ত কমিটি’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী দুই মাসের মধ্যে এ কমিটিকে তদন্ত শেষ করতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার আদালত মূলত বিভক্ত রায় দিয়েছেন। দুজন বিচারক নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে রায় দেন। কিন্তু বাকি তিনজন যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি আবারও খতিয়ে দেখার পক্ষে রায় দেন। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের রায়ের ভিত্তিকে চূড়ান্ত রায় নির্ধারিত হয়েছে। যে কারণে খাদের কিনার থেকে বেঁচে গেলেন নওয়াজ শরিফ। না হলে প্রধানমন্ত্রীর পদে তাকে অযোগ্য ঘোষণার যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তাই সত্যি হতো।

আদালতের এ রায়কে বিজয় হিসেবে দেখছে নওয়াজ শরিফের পরিবার। রায়ের পর তার মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ পরিবারের সদস্য ও দলের শীর্ষ নেতাদের হাস্যোজ্বল ছবি টুইট করেছেন।

কথা বলছেন নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ

বৃহস্পতিবার পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন। ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই), জামাত-ই-ইসলামি, ওয়াতান পার্টি ও অল পাকিস্তান মুসলিম লিগ সুপ্রিম কোর্টে এ মামলা দায়ের করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায় দিলেন সর্বোচ্চ আদালত।

এ মামলায় বিবাদী করা হয় নওয়াজ শরিফ, তার মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ, দুই ছেলে হাসান নওয়াজ ও হুসেইন নওয়াজ, জামাতা ক্যাপ্টেন (অব.) মুহাম্মদ সাফদার ও অর্থমন্ত্রী ইশাক দারকে।

২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব র্নালিস্টস-এর প্রকাশিত বিদেশি কোম্পানির নামে বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অর্থ পাচারের নথির ওপর ভিত্তি করে এ মামলা দায়ের করে অভিযোগকারীরা। অভিযোগে বলা হয়, পানামা পেপার্স নিয়ে নওয়াজ শরিফ পার্লামেন্টে যে বক্তব্য দেন, তাতে তিনি মিথ্যাচার করেন।

নওয়াজ শরিফ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের ১ নম্বর আদালত কক্ষে এ রায় পড়ে শোনান বিপারপতি হাফিজ সাইদ খোসা। গণমাধ্যমের খবরমতে, ৪৫০ পৃষ্ঠার এই রায় লিখেছেন বিচারপতি এজাজ আফজাল।

বিচারপতি খোসা বলেছেন, কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফআইএ) এবং জাতীয় জবাবদিহি ব্যুরো (এনএবি) যথাযথভাবে তাদের ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। যে কারণে যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে।

যৌথ তদন্ত কমিটিতে থাকবেন এফআইএ, এনএবি, আইএসআই, স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান, সামরিক গোয়েন্দার সদস্য এবং কমিটির নেতৃত্ব দেবেন এফআইএ-এর মহাপরিচালকের সমমর্যাদার কোনো কর্মকর্তা।

আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, সাত দিনের মধ্যে যৌথ তদন্ত কমিটির সদস্যদের নাম প্রকাশ করতে হবে। ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে এবং প্রতি সপ্তাহে তদন্তের অগ্রগতি সুপ্রিম কোর্টকে অবহিত করতে হবে। সংবিধানের ১৮৪/৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ মামলাটি তদারক করবে।

কাতারের রাজপরিবারের পক্ষ থেকে পাঠানো একটি চিঠি প্রমাণ হিসেবে আদালতে হাজির করেন নওয়াজ শরিফের আইনজীবী। কিন্তু বিচারিক বেঞ্চ তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, কাতারে অর্থ পাঠানোর বিষয়টি আদালত খতিয়ে দেখবে।

এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সাংবিধানিক কমিশন গঠন করার কথা বলেছেন। যেকোনো ধরনের তদন্তের জন্য তারা প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ।

অন্যদিকে, এ রায়কে কেন্দ্র করে ইসলামাবাদে লোক সমাগম ঘটায় ইমরান খানের পিটিআই। এ দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আদালতের রায়কে সম্মান করে পিটিআই। তবে তারা এ বিষয়ে সজাগ থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।

বৃহস্পতিবার রায়কে কেন্দ্র করে পাকিস্তানজুড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আদালত কক্ষ কনায় কানায় ভরে যায়। অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে আদালতে সাংবাদিকদের উপস্থিতি দ্বিগুণ ছিল। আদালত ভবনের বাইরে সরকার ও বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ এপ্রিল ২০১৭/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়