ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

ইউরোপে জাতীয়তাবাদ ও কট্টরপন্থার উত্থান : পর্ব-১

রাসেল পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৯, ২৩ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইউরোপে জাতীয়তাবাদ ও কট্টরপন্থার উত্থান : পর্ব-১

রাসেল পারভেজ : ইউরোপের দেশে দেশে জাতীয়তাবাদী ও কট্টরপন্থি দলগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থান নিয়েছে এবং এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। ফ্রান্স থেকে ফিনল্যান্ড সর্বত্র তারা জনগণের আস্থা অর্জন করে এগিয়ে যাচ্ছে। অভিবাসী সংকট প্রবল হওয়ার পর থেকে এ ধারা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলেও এর সঙ্গে বিশ্বায়নবিরোধী মনোভাব ও জাতীয় পরিচয় সংকট যুক্ত করে জাতীয়তাবাদীরা রাজনৈতিক ফায়দা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ফলে বহু বছরের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণায় পরিবর্তনের ঢেউ আছড়ে পড়ছে।

ইউরোপে জাতীয়তাবাদের সুর আগে বাজলেও এ সুরে প্রথম মোহিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ। প্রবল জাতীয়তাবাদের ধূয়া তুলে মার্কিনিদের মোহিত করতে সক্ষম হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান ক্ষমতায় এলে তার পরিণতি কী হতে পারে, বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকালে আর বলার দরকার হয় না।

অভিবাসন থেকে সীমান্ত প্রাচীর- সর্বত্র ট্রাম্পের কড়া নিয়ন্ত্রণ। ‘আমার দেশে, আমাদের দেশে, তুমি বিদেশি, তুমি কে হে?’- ধাঁচের ধ্যানধারণার উৎকট প্রকাশ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এটি নিঃসন্দেহে জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। এর ফলাফল ভালো হয় না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়, সহবস্থান থাকে না, পারস্পরিক বিশ্বাস উঠে গিয়ে জাতিগত ঘৃণার সংস্কৃতি তৈরি হয়। ফলে বিশ্ব রাজনীতি, কূটনীতি ও বাণিজ্যনীতি ভেঙে পড়ে। তৈরি হয় বৈশ্বিক সংকট- হোক সে আথির্ক অথবা রাজনৈতিক। এ সংকটের দিকে হয়তো এগিয়ে যাচ্ছে ইউরোপ।

ইউরোপের যেসব দেশে জাতীয়তাবাদ ও ডানপন্থার উত্থান হচ্ছে, তার মধ্যে ফ্রান্স ও ফিনল্যান্ডের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে ধারাবাহিক এ লেখার প্রথম পর্বে।

ফ্রান্সে জাতীয়তাবাদের উত্থান
ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হচ্ছে। রোববার ভোট গ্রহণ হয়। প্রথম দফায় কেউ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয়ী হবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কিন্তু যে দেশটিতে চার বছর আগে সমাজবাদী প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোঁয়া ওলাঁদ জয়ী হয়েছিলেন, সেই ফ্রান্সে এবার ডানপন্থি জাতীয়তাবাদী প্রার্থী জয়ের স্বপ্ন দেখছেন। মাত্র চার বছরে ফ্রান্সের রাজনীতির ইউ-টার্ন হয়ে গেল!

শুধু ফ্রান্স নয়, গোটা ইউরোপের সবচেয়ে বড় জাতীয়তাবাদী ও কট্টরপন্থি রাজনৈতিক দল হিসেবে দেখা হচ্ছে ন্যাশনাল ফ্রন্টকে। ইউরোপের উদারপন্থি, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারার উজানে জাতীয়তাবাদের তরি ভাসিয়ে কূলে নোঙর করতে চলেছে অর্থাৎ সরকার গঠনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে দলটি। ন্যাশনাল ফ্রন্টের নারী নেত্রী মারি লো পেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন তিনি। অনেক বিশ্লেষক জয়ের দিকে তাকেই এগিয়ে রেখেছেন।

মারি লো পেন কতটা উগ্রপন্থি, তা তার ২০১০ সালের এক বক্তব্য থেকে পরিষ্কার হবে আশা করি। দলীয় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘রাস্তায় মুসলিমদের নামাজ পড়ার দৃশ্য আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের ফ্রান্স অধিগ্রহণ একই বিষয়।’ চরম মুসলিমবিরোধী এই নেত্রী ফ্রান্সে সন্ত্রাসী হামলার পর এ নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। এবারের নির্বাচনে সীমান্ত বন্ধ ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন করার বিষয়ে শক্তিশালী ইশতেহার দিয়েছেন তিনি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিরোধী মারি লো পেন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এ আঞ্চলিক জোটের সঙ্গে ফ্রান্সের থাকার বিষয়ে নেতিবাচক তিনি। ইইউ-এর অভিন্ন মুদ্রা ইউরো প্রত্যাখ্যান করার পক্ষে এই নেত্রী জোটের সদস্য পদ ত্যাগ করার পক্ষেও। জোটমুক্ত ফ্রান্সের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে চান তিনি।

ফিনল্যান্ডে জাতীয়তাবাদীদের উত্থান
এ দেশের জাতীয়তাবাদী দলের নাম ন্যাশনাল ফিনস পার্টি, আগে যার নাম ছিল ‘ট্রু ফিনস’। গত বছর দেশটির সাধারণ নির্বাচনে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে ফিনস পার্টি। কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ফিনস পার্টি জোট সরকারে জায়গা করে নেয়। এ দলের প্রধান টিমো সোইনি ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ফিনস পার্টি অভিবাসন বন্ধ করে দেওয়া পক্ষে। তাদের দাবি, ফিনস জাতি অভিবাসী নয়। সরকারের যেকোনো সুযোগ-সুবিধা তারাই আগে পাবে, অভিবাসীরা নয়। এ দলের ভিত্তি রচিত হয়েছে তৃণমূল পর্যায়ে ফিনসদের মধ্যে। ফলে দিন দিন আরো শক্তিশালী হচ্ছে দলটি।

(দ্বিতীয় পর্ব পড়তে চোখ রাখুন রাইজিংবিডি ডটকমে)

লেখক : সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ এপ্রিল ২০১৭/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়