ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বজ্রপাত আতঙ্ক- ৪

বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে নানা উদ্যোগ ও প্রকল্প

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ১২ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে নানা উদ্যোগ ও প্রকল্প

আসাদ আল মাহমুদ : দেশে বজ্রপাতের ঝুঁকি ভয়ানকরূপ ধারণ করেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন কার্যক্রম থেকে সহায়তা নেওয়ারও পরিকল্পনা করা হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বজ্রপাত বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে ইতিমধ্যে ভিয়েতনাম থেকে কিছু কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা রাজধানী ঢাকা ও দেশের কোন কোন জায়গায় এবং বাড়ির ছাদে বজ্র নিরাপত্তা টাওয়ার স্থাপন করা যায় তার একটি তালিকা তৈরি করেছেন। শিগগিরই টাওয়ার স্থাপনের কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি হাওর ও বিভিন্ন এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে একতলা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের তালিকা করা হয়েছে। শিগগিরই আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

এছাড়া ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডের আওতায় বজ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করার নির্দেশনা দিতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবে মন্ত্রণালয়।

এ ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মোহসীন বলেন, ‘বজ্রপাতে প্রাণহানি কমিয়ে আনতে সামাজিক ও টেকনোলজি উভয় দিক থেকেই কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া আবহাওয়া অধিদপ্তর বড় গাছ লাগানোর কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় হাওর অঞ্চলে একতলা বিশিষ্ট টাওয়ার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হঠাৎ বজ্রবৃষ্টি শুরু হলে হাওরে কাজ করা লোকজনের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতেও বেশ সময় লাগে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মানুষ দ্রুত গরু-ছাগলসহ নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর যে দেশগুলোতে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কম তারা কি ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে তা আমরা দেখছি। এ বিষয়ে ভিয়েতনাম বেশ এগিয়েছে। আমাদের একটি প্রতিনিধি দল প্রাথমিকভাবে ভিয়েতনামে ব্যবহৃত প্রযুক্তি দেখে এসেছে। তারা (ভিয়েতনাম) ভবন নির্মাণে লাইটনিং অ্যারেস্টারের মতো এক ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করে। তারা কিছু টাওয়ারও করেছে। ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডকে অনুসরণ করে দেশে বজ্র নিরাপত্তা টাওয়ার নির্মাণ করা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের দেশে বাড়ি নির্মাণের সময় বজ্র নিরোধক দণ্ড ব্যবহার করা হচ্ছে না। নতুন যে বিল্ডিং কোড হচ্ছে সেখানে এটা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। সোলার ব্যবস্থা না থাকলে ভবন নির্মাণে যেমন অনুমোদন দেওয়া হয় না, সে জন্য যা করা প্রয়োজন তা করা হবে।’

দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল বলেন, ‘অধিকমাত্রায় বজ্রপাত প্রাকৃতিক দুর্যোগে নতুন মাত্রা। যেটি আমাদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বজ্রপাতের মতো পরিবেশ যেমন আকাশ মেঘাছন্ন হয়ে আসা, বৃষ্টি হতে পারে এমন আবহাওয়া তৈরি হতে দেখলে নিরাপদ অবস্থান গ্রহণ করা শ্রেয়। দ্রুত ফাঁকা জায়গা ত্যাগ করা, কোনো ধরনের গাছগাছালির নিচে অবস্থান না করা, উঁচু ভবনের ফাঁকা ছাদে না থাকা, অপেক্ষাকৃত নিচু ঘরে অবস্থান করা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হতে পারে।’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘ভিয়েতনাম থেকে বজ্রপাত নিরাপত্তা ও আগাম সংকেত প্রদানযোগ্য যন্ত্র আনার পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া ব্যাপক বনায়নও বজ্রপাতের ঝুঁকি হ্রাসে কার্যকর বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। সে ব্যাপারে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় কাজ করছে। দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকেও বনায়নে কাজ করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘বজ্রপাত উঁচু স্থানে প্রথম আঘাত করে। এ জন্য এ বছর সারা দেশে ১০ লাখ তালগাছ রোপণ করা হচ্ছে। এবার টিআরের বরাদ্দে তালগাছ রোপণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকারকে তাদের রাস্তার পাশে ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে তাদের বাঁধের পাশে উঁচু গাছ লাগানোর জন্য বলা হয়েছে।

 

 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ আগস্ট ২০১৭/আসাদ/হাসান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়