ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে মিয়ানমার : অ্যামনেস্টি

রাসেল পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০৯, ১৮ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে মিয়ানমার : অ্যামনেস্টি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, তাদের কাছে শক্ত প্রমাণ রয়েছে যে, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে।

লন্ডনভিত্তিক অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বুধবার রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতির ওপর একটি বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। নির্যাতিত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও জোর করে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিতাড়নের বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে এই প্রতিবেদনে।

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অস্ত্র অবরোধ এবং বাছাই করে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাজার হাজার রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশু ব্যাপকভিত্তিক ও সিস্টেমেটিক হামলার শিকার হয়েছে এবং মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ওই অঞ্চলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে। আরো বলা হয়েছে, দেশটির সেনাবাহিনীর ওয়েস্টার্ন কমান্ড ন্যক্কারজনক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী।

গত আগস্ট মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল নামার সময় থেকে এ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ উঠে এসেছে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে। প্রায় দেড় শতাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি, স্যাটেলাইটের তথ্য-উপাত্ত, ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে বিস্তারিত ও ব্যাপকভিত্তিক বিশ্লেষণে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ দেওয়া হয়েছে।

অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এর আগে দেশটির কর্মকর্তারা সিস্টেমেটিক নির্যাতনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। তাদের মতে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী।

অ্যামনেস্টির মিয়ানমারবিষয়ক গবেষক লরা হাইগ বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধের যেসব তথ্য-প্রমাণ তারা নথিভুক্ত করেছেন, তা অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে করা দেশটির সেনবাহিনীর নির্যাতনের সঙ্গে তুলনীয়। কাচিন, শান ও পালংসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধেও তারা একই ধরনের অপরাধ করেছে।

তিনি বলেছেন, ‘এক্ষেত্রে একই চিত্র সেখানে : সেনাবাহিনী পুরোপুরি জবাবদিহির বাইরে, প্রায়ই বেপরোয়া এবং তারা দায়মুক্ত, যা তাদের আরো দায়মুক্তির পথ করে দেয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘এসব বন্ধ করার সময় এখন।’

২৫ আগস্ট মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকটি আউটপোস্টে আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) হামলা চালালে এই অজুহাতে রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে ভয়াবহ অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। বর্বর এ অভিযানের মুখে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এ অভিযানকে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ‘জাতিগত নিধন’ বলে উল্লেখ করেছে।

অ্যামনেস্টির হিসাবমতে, সাম্প্রতিক সহিংসতায় জীবন বাঁচাতে মিয়ানমার ছেড়ে পালিয়েছে প্রায় ৫ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা। মঙ্গলবার জাতিসংঘ জানায়, এখনো হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসার জন্য সীমান্তের অভিমুখে ছুটছে।

‘আমার পৃথিবী শেষ : মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের লক্ষ্যে পরিণত’ শীর্ষক প্রতিবেদনে পাতার পর পাতা বর্ণনায় গণহত্যা, ধর্ষণ, খুন, নির্যাতন ও গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে অ্যামনেস্টি।

তথ্যসূত্র : আলজাজিরা অনলাইন




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ অক্টোবর ২০১৭/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়