ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বেঁধে দেওয়া সময়ে জবাব দিল না কাতালোনিয়া

রাসেল পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৯, ১৯ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বেঁধে দেওয়া সময়ে জবাব দিল না কাতালোনিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রশ্নে কোনো জবাব দিলেন না কাতালোনিয়ার নেতা।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মধ্যে (বাংলাদেশ সময় ২টা) স্বাধীনতা ঘোষণা করা না-করার বিষয়টি পরিষ্কার করতে কাতালান নেতা পুজদেমনকে আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয়।

কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা না করতে পুজদেমনকে চাপে রাখে স্পেনের মাদ্রিদ সরকার। প্রথম দফায় একই কায়দায় সময় বেঁধে দিয়েছিল কিন্তু তখনো বিষয়টি পরিষ্কার করতে ব্যর্থ হন তিনি। পুজদেমন কোনো জবাব না দিলেও এখনো পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার।

স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয় হুঁশিয়ারি দিয়ে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে কাতালোনিয়ার স্বায়ত্তশাসিত আঞ্চলিক সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়া হবে।

গণমাধ্যমে বলাবলি হচ্ছে, কাতালোনিয়ায় সরাসরি কেন্দ্রীয় শাসন জারি করলে আঞ্চলিক সরকারের প্রেসিডেন্ট কাতালান নেতা চার্লস পুজদেমন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দেবেন।

এ অবস্থায় উভয় সংকটে আছে কাতালোনিয়া। কী জবাব দেবে তারা? স্বাধীনতার ঘোষণা নাকি গণভোটের রায় উপেক্ষা করে স্পেনের সঙ্গে থেকে যাওয়া? টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে পুরো স্পেন জুড়ে। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায়ও নীরব রইলেন পুজদেমন।

পুজদেমন যদি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং মাদ্রিদ যদি কাতালোনিয়ায় সাংবিধানিক কেন্দ্রীয় শাসন জারি করে, তাহলে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা বলা মুশকিল। কাতালোনিয়া পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন, এমন অনেক বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন, গৃহযুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে!

স্পেন থেকে আলাদা হয়ে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা প্রশ্নে ১ অক্টোবর গণভোট হয়, যেখানে স্বাধীনতার পক্ষ জয়ী হয়। এরপর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরও করেছিলেন চার্লস পুজদেমন কিন্তু তা ঘোষণা না করে স্থগিত রাখেন এবং মাদ্রিদ সরকারের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব দেন। কিন্তু মারিয়ানো রাজয়ের সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে এবং স্বাধীনতার দাবি থেকে সরে আসতে কাতালানদের আল্টিমেটাম দেয়।

প্রথম আল্টিমেটামের কোনো জবাব না দেওয়ায় সোমবার রাতে দ্বিতীয় দফায় তিন দিনের আল্টিমেটাম দেন মারিয়ানো রাজয়। এ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে দেশটিতে।

১৯৭৮ সালে প্রণীত স্পেনের সংবিধানের ১৫৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংকটকালে যেকোনো রাজ্যে সরাসরি কেন্দ্রীয় শাসন জারি করার বৈধতা আছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক স্পেনে এমনটি কখনো হয়নি। তা ছাড়া এ ধরনের শাসন সরাসরি জারি করার ক্ষেত্রেও আগে-পিছে কিছু প্রক্রিয়া আছে। তার মধ্যে রয়েছে, সংকট সমাধানের জন্য বিদ্যমান সরকার ভেঙে দিয়ে অন্যদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা। অথবা নতুন নির্বাচন দিয়ে সরকার গঠনে কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য করা। তাও যদি না হয়, তখন সংকটে থাকা রাজ্যে সরাসরি শাসন জারি করতে পারে কেন্দ্র।

কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের দুই নেতাকে হেফাজতে নিয়েছে কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী। প্রধানমন্ত্রীর আল্টিমেটামকে সামনে রেখে তাদের মুক্তির দাবিতে হাজার হাজার কাতালান পথে নেমে বিক্ষোভ করছে।

মাদ্রিদের অবস্থান কী?
প্রধানমন্ত্রী রাজয় পুজদেমনের কাছ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার প্রশ্নে সুনির্দিষ্ট উত্তর চেয়েছেন এবং তাকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজ করতে বলেছেন। বুধবার তিনি স্প্যানিশ পার্লামেন্টে বলেন, ‘এমটি নয় যে, প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন : কাতালোনিয়া কি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে? যদি তাই হয়, তাহলে সরকার একটি উপায় বেছে নিতে বাধ্য। আর যদি তা না হয়, তাহলে আলোচনা হতে পারে।’

পুজদেমন দৃঢ় অবস্থান নিলে তখন কী হবে?
প্রধানমন্ত্রী রাজয় যদি সিদ্ধান্ত নেন, তার সরকার কাতালোনিয়ায় হস্তক্ষেপ করবে, তখন সুনির্দিষ্ট কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করতে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকবেন তিনি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে যাওয়ার কথা রয়েছে রাজয়ের। যেহেতু সকাল ১০টার মধ্যে পুজদেমনের জবাব দেওয়ার কথা ছিল, সেহেতু যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে বিকেলের আগেই তিনি বৈঠক করতে পারবেন অথবা শুক্রবার পর্যন্ত স্থগিত রাখতে পারবেন।

বৈঠক হতে পারে সিনেটে। প্রধানমন্ত্রী রাজয়ের রক্ষণশীল দল পপুলার পার্টি (পিপি) সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ। ১৫৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কাতালোনিয়ার কাছ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে সিনেট। যদি এমনটি হয়, তাহলে তারা কাতালোনিয়ার আঞ্চলিক পুলিশ বাহিনী ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেবে এবং আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেবে। তবে কত দিনের মধ্যে এই আগাম নির্বাচন করতে হবে, তার কোনো সময়সীমা উল্লেখ নেই।

কাতালানদের অবস্থান কোন দিকে?
কাতালোনিয়া ও স্পেনের গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী রাজয় যদি সংলাপের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে সমৃদ্ধ কাতালোনিয়া রাজ্যের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেয়, তাহলে পুজদেমন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দেবেন। এ ছাড়া স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র স্থগিত না করে তা ঘোষণা করার জন্য পুজদেমনের ওপর স্বাধীনতাকামীদের একাংশের প্রচণ্ড চাপ রয়েছে।  তবে আল্টিমেটামের সময় পার করে গেলেও মুখ খোলেননি পুজদেমন। এ বিষয়ে তিনি কী করতে চাইছেন, তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বুধবার চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রিসের অলিম্পিয়াকোস দলের সঙ্গে বার্সেলোনার ম্যাচ চলার সময় কয়েকজন বার্সাভক্ত বিশাল ব্যানার প্রদর্শন করে, যাতে লেখা ছিল, ‘ডায়ালগ, রেসপেক্ট, স্পোর্টস’।

আরেকটি উপায় আছে পুজদেমনের হাতে। তিনি নিজেই কাতালোনিয়ায় আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিতে পারেন। কাতালোনিয়া রেডিওর সাংবাদিক আলবার্ট কালাতরাভা স্পেন সরকারের সূত্রের বরাত দিয়ে বলেন, পুজদেমন যদি আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন, তাহলে ১৫৫ অনুচ্ছেদ কার্যকর করতে পারবেন না প্রধানমন্ত্রী রাজয়। তবে কাতালোনিয়ার আঞ্চলিক সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান রাউল রমেভা বুধবার এ বিষয়ে বলেন, ‘এখন আলোচনায় নির্বাচনের বিষয়টি নেই।’

এদিকে, স্পেনের বামপন্থি দলগুলো অভিযোগ করেছে, রাজয়ের কেন্দ্রীয় সরকার সহজ পথ ছেড়ে নির্যাতন, নিপীড়ন ও অন্যায়ের পথ বেছে নিয়েছে। কাতালোনিয়া সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়ে আটক করা কাতালান নেতাদের মুক্তি দাবি করেছে দলগুলো।

এখন বিশ্বের দৃষ্টি কাতালোনিয়ায়- গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাবে না তো?


তথ্যসূত্র : বিবিসি অনলাইন

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ অক্টোবর ২০১৭/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়