ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আজ হুমায়ূন দিন

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ১৩ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আজ হুমায়ূন দিন

শাহ মতিন টিপু : ‘তিনি এসেছিলেন অসামান্য সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে। এইসব দিনরাত্রি বা বহুব্রীহি বা কোথাও কেউ নেই-এর মতো জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল আর কখনো নির্মিত হবে এমনটা ধারণা করি না।’

হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে অজয় দাশগুপ্ত’র এমন মন্তব্যের সঙ্গে একমত হবেন অনেকেই।খ্যাতিমান এই কথাশিল্পী, জনপ্রিয় চলচ্চিত্র-নাটক নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ৭০তম জন্মদিন আজ। অর্থাৎ আজ হুমায়ূন দিন।

‘হুমায়ূন আহমেদ তার ভিন্নধর্মী লেখনীর কারণে পাঠকদের মাঝে চিরকাল বেঁচে থাকবেন। জনপ্রিয়তা ও সাহিত্যের গভীরতা নাকি একইসঙ্গে আসে না কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তার সাহিত্যে গভীরতা যেমন রয়েছে, তেমনি পাঠক সমাজেও তিনি সমান জনপ্রিয়।’

এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭ প্রদান অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।যিনি হুমায়ূন নাটকে ‘বাকের’ চরিত্রে অভিনয় করে অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।তার আরেকটি মন্তব্য ‘হুমায়ূন আহমেদ যদি না থাকতেন, তবে হয়ত আমি আজকের আসাদুজ্জামান নূর হতে পারতাম না।’

হুমায়ূন আহমেদের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জে । বাবা ফয়েজুর রহমান ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। একাত্তরে হানাদার বাহিনী তাকে হত্যা করে। মা আয়েশা ফয়েজ। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই বাংলা সাহিত্যের এই জনপ্রিয় লেখক নিউইয়র্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।

স্কুল জীবনে হুমায়ূন আহমেদকে পিতার চাকরির সুবাদে কুমিল্লা, সিলেট, বগুড়া, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলায় বসবাস করতে হয়। তিনি ১৯৬৭ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা  (রাজশাহী বিভাগে মেধাতালিকায় দ্বিতীয়), ১৯৬৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্র জীবনেই তার লেখালেখি শুরু।  তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশ পায় ১৯৭২ সালে । তখন তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় উপন্যাস‘ শঙ্খনীল কারাগার।  এই দুটি বই প্রকাশের পর হুমায়ূন আহমেদ একজন শক্তিশালী কথাশিল্পী হিসেবে পাঠকমহলে সমাদৃত হয়ে ওঠেন।  সেই থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার দুই শতাধিক বই প্রকাশিত হয়।  সাহিত্যে অবদানের জন্য হুমায়ূন আহমেদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন।

দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশক তিনি লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।  তার লেখায় বাঙালি সমাজ ও জীবনধারার গল্পমালা ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন হয়েছে। রসাত্মক ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে উপস্থাপনই ছিল তার গল্পের বৈশিষ্ট। গল্প বলায় ভাষার ব্যবহারে নিজস্ব একটা কৌশল এবং বর্ণনায় লোকজধারাকে প্রাধান্য দেন। বাস্তবতা থেকেই উঠে এসেছে তার প্রতিটি সৃষ্টিকর্ম। বাংলা সাহিত্যের কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যে তাকে পথিকৃৎ বলেছেন অনেকেই। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার লেখা বেশ কয়েকটি উপন্যাস, কয়েকটি নাটক, কয়েকটি চলচ্চিত্র কালজয়ী কর্ম হিসেবে বিবেচিত ।  তার নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- শঙ্খনীল কারাগার, শ্রাবণ মেঘের দিন, আগুনের পরশমণি, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, আমার আছে জল, নয় নম্বর বিপদ সংকেত, ঘেটুপুত্র কমলা, শ্যামল ছায়া।

শিক্ষকতায় ছিলেন দীর্ঘদিন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরববর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। লেখালেখিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে শিক্ষকতা থেকে তিনি অবসর নেন। শিল্প-সংস্কৃতির প্রসারে হুমায়ূন আহমেদ গাজিপুরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘নুহাশ পল্লী’ ।

আজ বিভিন্ন স্থানে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উদযাপিত হচ্ছে। সংবাদপত্রে তাকে বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়েছে।রেডিও-টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে স্মৃতিধর্মী নানা অনুষ্ঠান।নুহাশ পল্লীতে রয়েছে দিনব্যাপী কর্মসূচী।বিকালে চ্যানেল আই চত্বরে আয়োজন করা হয়েছে ‘হুমায়ূন মেলা’।

হুমায়ূন আহমেদের ৭০তম জন্মদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ নভেম্বর ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়