ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মুগাবের দিন শেষ?

রাসেল পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৬, ১৫ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুগাবের দিন শেষ?

রবার্ট মুগাবে ও ফার্স্ট লেডি গ্রেস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রক্তাপাতহীন সামরিক ‘অভ্যুত্থানের’ মধ্য দিয়ে জিম্বাবুয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী। প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের সমর্থকরা দাবি করছেন, তাকে আটক করা হয়েছে। অন্যদিকে, গত সপ্তাহে বহিষ্কৃত ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়া স্বেচ্ছায় নির্বাসন থেকে দেশে ফিরেছেন।

ঘটনার পরম্পরা থেকে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে মুগাবের দিন কি শেষ? বহিষ্কৃত ভাইস প্রেসিডেন্ট নানগাগওয়াই কি ক্ষমতায় বসতে চলেছেন? নাকি অন্য কিছু ঘটতে চলেছে? আপাতত কিছু পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। তবে শেষ না জানা গেলেও ক্ষমতার পালা বদলের ঘণ্টা যে বেজে উঠেছে, তা এক প্রকার বলা-ই যায়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনাপ্রবাহ ব্যাখ্যা করা হচ্ছে- বিভিন্ন পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে।

ডেইলি মেইলের খবরে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট মুগাবে, ফার্স্ট লেডি গ্রেস ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আটক করেছে সেনাবাহিনী। তবে তারা কোথায় আছেন, তা জানা যায়নি।

মঙ্গলবার রাতে জাতীয় টেলিভিশনের দখল নেওয়া, অতঃপর সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের বিবৃতি দেওয়া এবং বুধবার সকালে রাজধানী হারারেতে সেনাবাহিনীর পার্লামেন্ট ভবনের সড়ক অবরোধ করে রাজধানীজুড়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা থেকে পরিষ্কার হচ্ছে, জিম্বাবুয়েতে মুগারের কয়েক দশকের শাসনের দিন বুঝি এবার শেষ হচ্ছে।

১৯৮৭ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মুগাবে এবং ১৯৮০-১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। এ হিসাবে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে ১৯৮০ সালে স্বাধীনতা লাভের পর জিম্বাবুয়েতে চলছে মুগাবে শাসন।

 


বহিষ্কৃত ডেপুটি প্রেসিডেন্ট নানগাগওয়া মঙ্গলবার দেশে ফিরেছেন
 

মুগাবের স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকে ডেপুটি প্রেসিডেন্ট করার জন্য গত সপ্তাহে মুগাবে ডেপুটি প্রেসিডেন্ট এমারসন নানাগাগওয়াকে (৭৫) বহিষ্কার করেন। কিন্তু নানগাগওয়া ছিলেন ১৯৭০-এর দশকে জিম্বাবুয়ের স্বাধীনতা আন্দোলনের তুখোড় নেতা। দেশের বাইরে থাকা অবস্থায় মুগাবে তাকে বহিষ্কার করেন। কিন্তু বুধবার মঙ্গলবার রাতেই তিনি দেশে ফিরেছেন। নীরব সেনা অভ্যুত্থান ও নানগাগওয়ার দেশে ফেরার মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কিনা, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে অনেকে ধারণা করছেন, তিনিই জিম্বাবুয়ের ক্ষমতার মসনদে বসতে চলেছেন।

৯৩ বছর বয়সি মুগাবে, তার স্ত্রী গ্রেস ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কোথায় আটকে রাখা হয়েছে, বুধবার সকাল থেকে এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাদের আটকে রাখা হয়েছে না কি অশুভ কিছু ঘটে গেছে, তাও পরিষ্কার নয়।

হারারেতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসা বন্ধ রাখা হয়েছে। মার্কিন ও ব্রিটিশদের ঘর থেকে বের না হওয়ার পরমার্শ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য দূতাবাসও তাদের নাগরিকদের সতর্ক করেছে।

মঙ্গলবার রাতে হারারেতে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণে শব্দ শোনা যায়। সেনাবাহিনীর ট্যাংক রাজধানীর চারপাশ ঘিরে ফেলতে শুরু করে। তখনই আশঙ্কা করা হচ্ছিল, সেনা অভ্যুত্থান ঘটতে চলেছে। ওই আশঙ্কার মধ্যেই মঙ্গরবার রাতেই জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ নেয় সেনাবাহিনী। বুধবার সকালে পুরো শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে আসতে সেনাবাহিনী নির্দেশ দেয়। অর্থাৎ বেসামরিক নিরাপত্তা বাহিনী নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে সেনারা।

মঙ্গলবার রাতে সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে দাবি করে, তাদের এ পদক্ষেপ অভ্যুত্থান নয়, দুর্নীতিবাজ অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই তারা এ উদ্যোগ নিয়েছে। এতে আরো দাবি করা হয়, মুগাবে ও তার পরিবারের সদস্যরা নিরাপদ আছেন। তাদের মিশন শেষ হলেই যত দ্রুত সম্ভব স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে। তারা শুধু মুগাবের চারপাশে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চায়। যাদের জন্য দেশের মানুষ সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চায় তারা।

 


রাজধানী হারারেতে সেনা ট্যাংকের টহল
 

সেনাবাহিনী কাদের আটক করেছে, সেই তালিকা এখনো পাওয়া না গেলেও সরকারি সূত্র জানিয়েছে, অর্থমন্ত্রী ইগনাটিয়াস চম্বোকে আটক করা হয়েছে।

ভাইস প্রেসিডেন্ট নানগাগওয়ার বহিষ্কারে মুগাবের সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল কনস্টান্টিনো চিওয়েঙ্গা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার পর থেকে জিম্বাবুয়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে শুরু করে। প্রেসিডেন্ট পদে স্ত্রী গ্রেসের জন্য পথ পরিষ্কার করতে মুগাবে এমনটি করেছেন বলে সমালোচকরা মনে করেন। সেনাবাহিনীও বিষয়টি মেনে নেয়নি।

সোমবার সেনাপ্রধান চিওয়েঙ্গা মুগাবেকে হুঁশিয়ার করে বলেন, বিরোধীদের বিরুদ্ধে মুগাবের দমনাভিযানের ইতি টানতে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী পদক্ষেপ নেবে। সেনাপ্রধানের এই হুঁশিয়ারির বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায় মুগাবে সরকার। তারা চিওয়েঙ্গার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তোলে। এরপর দিন মঙ্গলবার থেকে হারারের দিকে সেনাবাহিনীর ট্যাংক আসতে শুরু করে। বেশ কিছু বিস্ফোরণ হয় এবং জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, হয়তো সেনা অভ্যুত্থান হচ্ছে। দিন পার হতে না হতেই সেই আতঙ্ক সত্যি হয়ে দেখা দিল, দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিল সেনাবাহিনী। তবে শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনী ক্ষমতা ছাড়বে কিনা অথবা ডেপুটি প্রেসিডেন্ট নানগাগওয়াই প্রেসিডেন্ট হবেন কিনা অথবা মুগাবের হাতে সেনাবাহিনী আবার ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবে কিনা- কোনো কিছুই পরিষ্কার নয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ নভেম্বর ২০১৭/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়