ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সঙ্গে শিগগিরই চুক্তি : সু চি

রাসেল পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ২১ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সঙ্গে শিগগিরই চুক্তি : সু চি

অং সান সু চি (মাঝে)

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে শিগগিরই চুক্তি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো সরকারপ্রধান অং সান সু চি।

মঙ্গলবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে চলমান এশিয়া-ইউরোপ মিটিংয়ের (আসেম) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন শেষে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য চুক্তির কথা জানিয়েছেন তিনি।

সু চি বলেন, এ সপ্তাহে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা শেষে গত তিন মাসে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের ‘নিরাপদ ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত প্রত্যাবাসনের’ বিষয়ে চুক্তি হবে।

গত আগস্ট মাসে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর বর্বর অভিযানের মুখে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশ আশ্রয় নিয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর আউটপোস্টে সন্ত্রাসী হামলার অজুহাতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন শুরু করে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় উগ্রবাদী বৌদ্ধরা।

জাতিসংঘসহ অধিকার রক্ষায় কাজ করা অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা ও গ্রুপ এবং পশ্চিমা দেশগুলো রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর বর্বর অভিযানের তীব্র নিন্দা করেছে এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে চাপ দিয়ে যাচ্ছে।

আসেম সম্মেলনের সমাপনী দিনে এক বৈঠক শেষে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি হয়েছে কি হয়নি, তা আমরা বলতে পারি না। সরকারের দায়িত্বের জায়গা থেকে আমরা নিশ্চিত করছি, এমনটি আর হবে না।’

শান্তিতে নোবেলজয়ী ও প্রধানমন্ত্রীর সমমর্যাদায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় পরামর্শক এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা সু চির দলের নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকারের মেয়াদে দেশটির জেনারেলরা সরকারের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেনাবাহিনীর ওপর সু চির নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মধ্যে নীরব থাকায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক নিন্দার মুখে পড়েন সু চি। অবশ্য নীরবতা ভেঙে কথা বললেও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, বুধবার- বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিয়ানমারের বৈঠক হবে। তিনি আরো বলেন, মিয়ানমারে ফিরতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের আবেদনপত্র কী প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি হবে সে বিষয়ে গত মাস থেকে দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে।

তিনি বলেছেন, ‘আমরা আশা করছি এর ফলে একটি চুক্তি (মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং-এমওইউ) খুবই শিগগিরই স্বাক্ষরিত হবে। আর এর মাধ্যমে যারা সীমান্ত পার হয়ে গেছে, তাদের সবাইকে নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হবে।’

তবে এবারও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি সু চি। সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের এই নৃতাত্ত্বিক পরিচয়সূচক নাম ব্যবহার করে না মিয়ানমার। তা ছাড়া মিয়ানমারের নৃগোষ্ঠীগুলোর তালিকায় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে রাখা হয়নি।

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অধিকাংশ লোকই ‘রাষ্ট্রহীন’। মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা তাদের অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী মনে করে, যদিও এর কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই।

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের জাতিবিদ্বেষী আচরণের অভিযোগ অ্যামনেস্টির

সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার ‘অমানবিক জাতিবিদ্বেষী’ আরচণ করছে বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করেছে লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। রোহিঙ্গাদের অধিকার, তাদের আইনি স্বীকৃতি ও বৈষম্যমূলক আইন সংস্কারের তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিস্তারিত বিষয়গুলো তুলে ধরে অ্যামনেস্টির কর্মকর্তারা। রোহিঙ্গাদের ওপর দুই বছর ধরে গবেষণার করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করল সংস্থাটি। ১০০ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রীয় মদদে’ এক বছরের বর্বর অভিযানে রোহিঙ্গাদের জীবন-যাপন চরম হুমকির মুখে পড়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গবেষণা পরিচালক এনা নেইস্ট্যাট প্রতিবেদনের ওপর আলোকপাত করে বলেছেন, মিয়ানমার সরকারের বর্ণবাদী আচরণের কারণে সব দিক থেকে বঞ্চনার শিকার হয়েছে রোহিঙ্গারা।

তথ্যসূত্র : রয়টার্স অনলাইন



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ নভেম্বর ২০১৭/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়