ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ট্রাম্পকে হুঁশিয়ার করেছিলেন আকায়েদ উল্লাহ

রাসেল পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:২০, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ট্রাম্পকে হুঁশিয়ার করেছিলেন আকায়েদ উল্লাহ

আকায়েদ উল্লাহ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটানের বাস টার্মিনালে বোমা হামলায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত সন্দেহভাজন আকায়েদ উল্লাহ হামলার ঠিক আগে ফেসবুকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‍হুঁশিয়ার করেছিলেন।

ফেসবুক পোস্টে আকায়েদ লেখেন, ‘ট্রাম্প, আপনার দেশ রক্ষায় আপনি ব্যর্থ হয়েছেন।’ মঙ্গলবার তার বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয় তাতে ফেসবুকের এই পোস্ট নথিভুক্ত করেন ফেডারেল প্রসিকিউটররা। তারা বলেছেন, ২৭ বছর বয়সি বাংলাদেশি অভিবাসী আকায়েদ উল্লাহ জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আদর্শে প্ররোচিত হয়ে এই হামলা চালিয়েছেন।

বিবিসি অনলাইনের এক খবরে বুধবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সোমবার সকালে কার্মস্থলে যাওয়ার ব্যস্ততার সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ‘পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনাল’-এর ভূগর্ভস্থ সড়কে নিজের শরীরে পাইপ বোমা বেঁধে তার বিস্ফোরণ ঘটান আকায়েদ। এ ঘটনায় আকায়েদ নিজে গুরুতর আহত হন। এছাড়া আহত হন আরো তিন জন।

নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে, সন্ত্রাসী কাজের জন্য নিজের কাছে অস্ত্র রাখা, সন্ত্রাসবাদে সমর্থন করা এবং সন্ত্রাসী হুমকি সৃষ্টি করাসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে আকায়েদের বিরুদ্ধে।

ফেডারেল প্রসিকিউটররা আকায়েদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ নথিভুক্ত করেছেন মঙ্গলবার শেষ ভাগে তা প্রকাশ করা হয়। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনকে সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা, গণবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহার এবং পাবলিক প্লেসে বোমা হামলা চালানো।

প্রসিকিউটরদের নথিতে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আকায়েদ উল্লাহ স্বীকার করেছেন, ‘ইসলামিক স্টেটের জন্য আমি এ কাজ করেছি।’ নথিপত্র থেকে আরো জানা যায়, তিনি বলেছেন, আইএসের অবস্থান লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার বদলা নিতে এ হামলা চালিয়েছেন।

অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, বিস্ফোরক বস্তু তৈরির জন্য খ্রিষ্টমাস লাইট ব্যবহার করেন আকায়েদ উল্লাহ। দুই স্তরবিশিষ্ট ফিতার সাহায্যে সেটি নিজের শরীরে বেঁধে নিয়েছিলেন তিনি।

প্রসিকিউটর জুম কিম সাংবাদিকদের বলেন, সন্দেহভাজনের ব্রুকলিনের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ধাতব দণ্ড, তারের টুকরো ও ধাতব স্ক্রু পাওয়া গেছে, যা বিস্ফোরণের স্থান থেকে উদ্ধার করা ধাতব সরঞ্জামাদির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

তিনি আরো বলেন, সন্দেহভাজন স্বীকার করেছেন, প্রায় এক বছর আগে থেকে বোমা বানানোর কৌশল নিয়ে গবেষণা করছেন এবং কয়েক সপ্তাহ ধরে এই হামলা চালানোর পরিকল্পনা এঁটেছেন। জুম কিম বলেন, এই স্থান ও এমন সময় বেছে নেওয়ার কারণ ছিল, তিনি চাইছিলেন হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি হোক।

২০১১ সালে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ থেকে পারিবারিক ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী হন আকায়েদ। বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে, দেশে তার কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ নেই। তার চাচা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেছেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে শেষবার দেশে আসেন আকায়েদ। শেষবার এসে ছয় সপ্তাহ ছিলেন।

আকায়েদের স্ত্রী বাংলাদেশ থাকেন। তার স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের এখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে- কীভাবে তিনি মৌলবাদী হয়ে উঠলেন, তা জানার জন্য।

এই হামলার পর অক্টোবর মাসে ম্যানহাটানের আরেক  হামলার উদাহরণ টেনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার জনগণকে রক্ষার জন্য জরুরিভিত্তিতে অভিবাসন আইন সংস্কার করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন। অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে এক উজবেক অভিবাসী হামলা চালিয়ে আট জনকে হত্যা করেন।

ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই তার ত্রুটিপূর্ণ অভিবাসন আইন রোধ করতে হবে। এই আইনের কারণে অপর্যাপ্ত যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ নিয়ে অনেক ভয়ংকর লোক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে।

বাংলাদেশে আকায়েদের স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদ
মঙ্গলবার ঢাকায় আকায়েদ উল্লাহর স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এদিন দুপুরে ঢাকার জিগাতলার মনেশ্বর রোডের বাসা থেকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটি) তাদের তিন জনকে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়।

ঢাকা সিটির উপ-কমিশনার সাইফুল ইসলাম জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ ডিসেম্বর ২০১৭/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়