ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে কিছু নতুন প্রস্তাবনা

মাছুম বিল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩০, ২১ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে কিছু নতুন প্রস্তাবনা

মাছুম বিল্লাহ: সরকার ঘোষিত রুপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে প্রাথমকি শিক্ষাব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন আনতে গুণগতমানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ একান্ত অপরিহার্য। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে ২০১৩ সালে প্রণীত বিধিমালা অনুযায়ী যেখানে  প্রধান শিক্ষক পদে সরাসরি শতকরা ৩৫ভাগ এবং সহকারী শিক্ষক থেকে শতকরা ৬৫ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করার বিধান প্রচলিত। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থার উন্নয়নকল্পে  ২০১৪ সালের ৯মার্চ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। ফলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়টি পিএসসির বিবেচনাধীন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালায় আরও কিছু পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে মন্ত্রণালয়ে।

২০১৩ সালে প্রণীত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক বিধিমালা অনুযায়ী পুরুষ ও নারীর জন্য আলাদা শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে। সহকারী শিক্ষক পদে পুরুষের জন্য স্নাতক আর নারীদের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পাস হতে হয়। এখানে পরিবর্তন আনাসহ আরও কয়েকটি  বড় ধরনের পরিবর্তন আসার কথা শোনা যাচ্ছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সহকারী শিক্ষক পদে নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক করার প্রস্তাব। এই প্রস্তাব একটি সময়োচিত পদক্ষেপ বলে আমরা মনে করি। দ্রুত এর বাস্তবায়ন প্রয়োজন। প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে সকল শিক্ষার মূল ভিত্তি , এই ভিত্তিকে অবশ্যই মজবুত করতে হবে। আমরা জানি সাধারণত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ভালো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা এখনও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন না।  তার প্রধান কারণ সামাজিক মর্যাদা। ব্যানবেইসের দেওয়া তথ্যমতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে তিন লাখ ৫১হাজার ২১৩জন শিক্ষক রয়েছেন। যাদের মধ্যে ১৩.১ শতাংশ এসএসসি, ২৯.৩ শতাংশ এইচএসসি, ৩২.৭ শতাংশ অনার্স-ডিগ্রী (পাস) এবং ২৯.৪ শতাংশ মাস্টার্স পাস।  বিভিন্ন বিষয়ে অনার্স কিংবা মাষ্টার্স ডিগ্রীধারী হলেও শিক্ষক শিক্ষায় তাদের কোন ডিগ্রী নেই। ফলে তারা শ্রেণিকক্ষে পেশাগত দক্ষতার পরিচয় দিতে পারছেন না সবক্ষেত্রে। এমনকি একবিংশ শতাব্দীর শিক্ষক হিসেবেও তারা চ্যালেঞ্জ নিতে পারছেন না। তাই প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষক শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে , কোন ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়া শ্রেণিকক্ষে দাঁড়ানোটা শিক্ষকদের জন্য একটি ভয়ের ব্যাপার, আর শিক্ষার্থীরাও অতটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। তবে সরকার এখন অনেকটাই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলে আশা করা যায় যে, ভবিষ্যতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেধাবী তরুণরা আসবেন। বর্তমানে মাস্টার্স ডিগ্রী পাস অনেকেই ঢুকছেন যদিও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা। কাজেই নারীদের ক্ষেত্রে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার কোন যুক্তি নেই। তাছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মান নিয়ে হাজার প্রশ্ন রয়ে গেছে। সহজে পাশ করিয়ে দেওয়া, উদারতার সাথে উত্তরপত্র মূল্যায়ন, পরীক্ষায় নকল, প্রশ্নপত্র ফাঁস ইত্যাদি কারণে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক থেকে পাশ করে আসা প্রার্থীদের যোগ্যতা নিয়ে বেশ প্রশ্ন আছে। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। আমরা ব্যতিক্রমকে ব্যতিক্রমই ভাববো। কাজেই তাদের দ্বারা প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করা কতটা ভালোভাবে সম্ভব তা বোঝাই যাচ্ছে।এই প্রেক্ষাপটে নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে যোগ্যতা স্নাতক করার প্রস্তাব খুবই প্রশংসনীয়। তাছাড়া নারীদের ক্ষেত্রে উচ্চ মাধ্যমিক করার অর্থ হচ্ছে তাদেরকে করুণা করা যা নারীদের জন্য কিছুটা বিব্রতকর। এখন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে নারী পুরুষের হার সমান নয় বরং বেশি। তবে নারীদের জন্য ৬০ শতাংশ কোটা বহাল থাকবে। এটি থাকুক। কারণ প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের আদর স্নেহ ভালবাসা ও মাতৃস্নেহ দিয়ে বড় করতে হয়, পাঠদান করতে হয় সেখানে বেশি সংখ্যক নারীর অংশগ্রহণের জন্য এই কোটা অনেকটাই যৌক্তিক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের নারী শিক্ষকগণ সরকারি প্রাইমারীতে কি আসলেই মাতৃস্নেহে পড়ান? তাদের সেই উপযুক্ত প্রশিক্ষণ আছে কি? বিষয়টি দেখভাল করার ভালো ব্যবস্থা আছে কি?

সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এতদিন স্নাতক পাস হলেই আবেদন করা যেত। নতুন বিধিমালার খসড়ায় এই শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটিও চমৎকার প্রস্তাব । প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। সেদিন হয়তো আর বেশি দূরে নয় যেদিন এই পদটি শ্রীলংকা ও মালয়েশিয়ার মতো প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করা হবে। প্রধান শিক্ষকের পদটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী হলে এর সম্মান ও পদটির গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে যা অনেক উচ্চমানের প্রার্থীদের এই পেশায় আকৃষ্ট করবে। আর প্রয়োজনও তাই। এই পেশার এই লেভেলে যত বেশি ভালো প্রার্থী আসবেন, এই স্তরের শিক্ষার মান ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত হবে। এতদিন প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ছিল ২৫ বছর থেকে ৩৫ বছর। কিন্তু এখন এই পদটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করায় সরকারি কর্মকমিশনের নীতিমালার সঙ্গে সংগতি রেখে বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ থেকে ৩০ বছর। তবে আগের মতো সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে ৬৫ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক হওয়ার বিধানও থাকছে। এই পদোন্নতির ব্যবস্থা না থাকলে কিন্তু মেধাবী প্রার্থীরা এই পেশায় আসবে না। এই পদোন্নতির সীমা শুধুমাত্র প্রধান শিক্ষক পর্যন্ত রাখলে চলবে না। এটি থানা শিক্ষা অফিসার , জেলা শিক্ষা অফিসার, ডেপুটি ডাইরেক্টর, ডাইরেক্টর পর্যন্ত কিংবা মহাপরিচালক পর্যন্ত বিস্তৃত করা প্রয়োজন। তাহলে মেধাবী তরুণদের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা এবং এক চাকরি থেকে অন্য চাকরিতে যাওয়ার অযথা কসরত ও সময় নষ্ট করা বিষয়টি আর বেশি ঘটবে না। বাকি ৩৫ শতাংশ পদে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে এই পদে নিয়োগ ও পদোন্নতির পুরো দায়িত্বই থাকবে পিএসসির উপর। এটিও সময়োচিত পদক্ষেপ।

নতুন বিধিমালায় বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগে জোর দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যে কোন বিষয়ে পাস করা প্রার্থীর সমান সুযোগ রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষকতায় প্রবেশ করার। কিন্তু এতে মানবিক বিভাগ থেকে আসা শিক্ষকরা গণিত ও বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলো সহজে আত্মস্থ করতে পারেন না। বিষয়টি এতদিনে যে, কর্তপক্ষের নজরে এসেছে সেজন্য ধন্যবাদ। কারণ কেউ কেউ  মনে করেন, বাচ্চাদের গণিত পড়াতে আর এমন কি প্রয়োজন বা বাচ্চাদের ইংরেজি পড়াতে আর কি ইংরেজি জানতে হয়। আসলে বাচ্চাদের পড়াতেই গভীর জ্ঞানের এবং সার্থক শিক্ষকের প্রয়োজন। গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজির মতো বিষয়গুলোতে আমাদের প্রাথমিক থেকে শুরু করে সব স্তরের শিক্ষকের অপ্রতুলতা রয়ে গেছে। এই বিষয়টিকে ভালভাবে ডিল করতে হবে। তবে, অন্যান্য বিষয় থেকে পাস করা প্রার্থীরাও  যাতে শিক্ষক হতে পারেন সেটিও খেয়াল রাখতে হবে।  আগের মতো যাতে শুধুমাত্র রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজকল্যাণ, ইতিহাসের প্রার্থীরাই প্রাথমিক শিক্ষকের কোটা ভরে না ফেলে এই বিষয়টির জোর দিতে হবে। এ কারণে নতুন বিধিমালায় সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট পদের শতকরা ২০ ভাগ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রীধারীদের মধ্য থেকে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্লাস্টার বা উপজেলাভিত্তিক আর্ট ও সংগীত শিক্ষক রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আর্ট ও  সংগীত আমাদের শিক্ষার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ বিষয়গুলো যেহেতু পরীক্ষায় থাকে না তাই গুরুত্ব প্রদান করা হয় না। কিন্তু এগুলো মূল বিষয়গুলোর মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে না হলেও অন্তত ক্লাষ্টার পদ্ধিতে আর্ট ও সংগীতের শিক্ষক রাখার সিদ্ধান্ত বাহবা পাওয়ার উপযুক্ত।

নতুন বিধিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে ১৩তম থেকে ১৬তম বেতন গ্রেডের কোন পদে থাকা শিক্ষককে দশম থেকে দ্বাদশ বেতন গ্রেডের কোন পদে পদোন্নাতির  সুপারিশ করা যাবে। আর দশম থেকে দ্বাদশ গ্রেডে থাকা শিক্ষক নবম বা তদুর্ধ্ব গ্রেডের কোন পদে পদোন্নতির সুপারিশ পেতে পারেন। তবে উভয় ক্ষেত্রেই পিসএসরি সুপারিশ প্রয়োজন হবে।  বর্তমানে কোন ব্যক্তির শিক্ষক পদে যোগদান করার তিন বছরের মধ্যে প্রশিক্ষণ বা উচচতার ডিগ্রী অর্জনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও নতুন বিধিতে তা থাকছে না। নতুন বিধিমালা কার্যকর হলে শিক্ষক নিয়োগ আগের মতোই উপজেলা বা থানাভিত্তিক হবে। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে গঠিত সহকারী শিক্ষক নির্বাচন কামিটির সুপারিশ ছাড়া কোন ব্যক্তিকে সহকারী শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা না হলে কাউকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এমন ব্যক্তিকে বিবাহ করেছেন অথবা বিবাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যিনি বাংলাদেশের নাগরিক নন, এমন ব্যক্তিকেও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এগুলো পিসএসসির নিয়মানুযায়ী হচ্ছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য পিইডিপি-৩ এর আওতায় দেশের ৬৬টি প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে দেড় বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন (ডিপিএড) কোর্স চালু আছে। ইতিমধ্যে ২১ হাজারের অধিক শিক্ষক এই কোর্স সম্পন্ন করেছেন। তবে এখনও তিন লাখ ৩০হাজার শিক্ষক এই কোর্সের আওতায় আসেনি। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ শ্রীলংকাসহ অনেক দেশে যেমন অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, হংকং, জাপান ও সিঙ্গাপুরে শিক্ষকতায় আসতে হলে শিক্ষক শিক্ষার ডিগ্রী নিয়েই প্রবেশের বাধ্যবাধকতা আছে। এমনকি আফ্রিকান অনেক দেশেও তাই। সেসব দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোতে প্রাথমিক শিক্ষায় অনার্স কোর্স চালু রয়েছে। ফল তারা ইতিমধ্যে পাওয়া শুরু করেছে। শ্রীলংকায় শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নের জন্য ইন-সার্ভিস এবং প্রি-সার্ভিস দুই ধরনের সুযোগ রয়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় ও ন্যাশনাল কলেজ অব এডুকেশনের অধীনে শিক্ষক শিক্ষার ওপর প্রি-সার্ভিস কোর্সের ব্যবস্থা রেখেছেন। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স এবং কলেজগুলোর অধীনে দুই বছরের এই কোর্স সম্পন্ন করার ব্যবস্থা আছে। যেখানে এক বছর মেয়াদি ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা রয়েছে। তারা প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের যেমন ভাষা, গণিত, বিজ্ঞান, নৈতিক শিক্ষা, আইসিটি, শারীরিক শিক্ষার পাশাপাশি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়গুলোর ওপর প্রি-সার্ভিস প্রোগ্রামের ব্যবস্থা রেখেছে। এখান থেকে যারা পাস করেন তাদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। আমরা এসব দেশের কিছু উদাহরণ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারি।

শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম সামনের দিকে এগিযে নেন যেখানে পাঠ্যপুস্তক সহায়কের ভূমিকা পালন করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে টেকসই উন্নয়নের অন্যতম একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে আর সেটি হচেছ গুণগত প্রাথমকি শিক্ষা নিশ্চিত করা। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে ‘Ensure inclusive and quality education for all and promote lifelong learning’। বাংলাদেশও এটি বাস্তবায়নের অংশীদার। প্রাথমিক স্তরে প্রায় শতভাগ ভর্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি ঝরে পড়ার হার বাংলাদেশ অনেকাংশে কমিয়ে এনেছে। উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে বাংলাদেশের প্রাথমিক স্তরের ভর্তির হার ছিল ৮৭.২, ২০১৫ সালে তা ৯৭.৭ শতাংশে উন্নীত হয়। অন্যদিকে প্রাথমিকে শিশুদের ঝরে পড়ার হার ২০০৫এ ছিল ৪৭.২ শতাংশ, ২০১৫ সালে তা  ২০.৪এ নেমে আসে। প্রাথমিক স্তরে ভর্তির হার বৃদ্ধি ও ঝরে পড়ার হার কমিয়ে নিয়ে আসার কারণে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের কাছে ইতিবাচক উদাহরণ তৈরি করেছে।  গুণগত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষক, শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক। জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ২০৩০ সালে মধ্যে প্রাথমিক স্তরের শিশুদের পাঠদানের জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষকদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার তাগিদ  দিয়েছে। তবে, একটি বিষয় আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, তা হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা মানের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে আছি। এই মান উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে, প্রস্তাব করা হচ্ছে কিন্তু কবে আসলে আমরা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারব সেটি নিয়ে বোধ হয় আর কালক্ষেপন করার সময় নেই। কারণ এই প্রাথমিক শিক্ষা থেকে এসেই  কিন্তু শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করবে। তারপর জাতিকে নেতৃত্ব দিবে। তাই তাদের প্রাথমিক শিক্ষাটা যেন প্রকৃত অর্থে মানসম্পন্ন ও একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী হয় তা সংশ্লিষ্ট সবাইকে গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।

লেখক : প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি





রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ এপ্রিল ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়