ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

স্মরণ : কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২১ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্মরণ : কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

শাহ মতিন টিপু: দীর্ঘশ্বাস নিয়ে যেতে হয়/সবাইকে/অজানা গন্তব্যে/হঠাৎ ডেকে ওঠে নাম না জানা পাখি/অজান্তেই চমকে উঠি/জীবন, ফুরালো নাকি!/এমনি করে সবাই যাবে, যেতে হবে…

রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র ‘চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়’ শিরোনামের কবিতার শেষ ক’টি লাইন খুবই স্পর্শক। রুদ্র কবি’র ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ’ গানের এই স্রষ্টা ১৯৯১ সালের ২১ জুন মাত্র ৩৫ বছর বয়সে আকাশের ঠিকানায় চলে গেছেন।

দিনটি স্মরণে রুদ্র স্মৃতি সংসদ আজ কবির গ্রামের বাড়ি মোংলার মিঠেখালির সমাধীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার আয়োজন করেছে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের মোংলা শাখা ও মোংলা প্রেসক্লাব আজ সন্ধ্যায় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে কবির স্মরণে স্মরণসভার আয়োজন করেছে। স্মরণসভা শেষে রুদ্রের কবিতা আবৃত্তি ও রুদ্রের গান পরিবেশিত হবে।

স্বল্পায়ু’র জীবনে তিনি সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য ও অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন। ‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ’ গানটির জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি প্রদত্ত ১৯৯৭ সালের শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরণোত্তর) সম্মাননা লাভ করেন। ‘উপদ্রুত উপকূল’ ও ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ কাব্যগ্রন্থ দুটির  জন্য ‘সংস্কৃতি সংসদ’ থেকে পর পর দু’বছর ‘মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।

অকালপ্রয়াত এই কবি তার কাব্যযাত্রায় যুগপৎ ধারণ করেছেন দ্রোহ ও প্রেম, স্বপ্ন ও সংগ্রামের শিল্পভাষ্য। ‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন’—এই নির্মম সত্য অবলোকনের পাশাপাশি ততোধিক স্পর্ধায় তিনি উচ্চারণ করেছেন, ‘ভুল মানুষের কাছে নতজানু নই’।

তিনি মূলত কবি হলেও কাব্য চর্চার পাশাপাশি সঙ্গীত, নাটক, ছোটগল্পের ক্ষেত্রেও ছিলেন সমান উৎসাহী। জন্ম ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর বরিশাল রেডক্রস হাসপাতালে। রুদ্রের মায়ের নাম শিরিয়া বেগম, বাবার নাম শেখ ওয়ালীউল্লাহ। বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার সাহেবের মেঠ গ্রাম তাদের স্থায়ী নিবাস। তার চিকিৎসক পিতার কর্মস্থল ছিল বরিশাল। দশ ভাই বোনের মাঝে তিনিই ছিলেন সকলের বড়।

বাড়ির পাশেই ছিল নানা বাড়ি। শৈশবের অধিংকাশ সময় নানাবাড়িতেই কাটিয়েছেন। নানাবাড়ির পাঠশালাতেই লেখাপড়ার হাতেখড়ি। এমনকি লেখালেখির আগ্রহও সৃষ্টি নানাবাড়ি থেকেই। নানাবাড়িতে সেসময় ‘বেগম’ আর কলকাতার ‘শিশুভারতী’ পত্রিকা আসত নিয়মিত। তা থেকেই শিশুমনে তৈরি হয়ে গিয়েছিল সাহিত্য প্রেমী একটা সত্ত্বার। ঢাকা ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুল থেকে ১৯৭৩ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৫ সালে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্সসহ এমএ পাস করেন।

আলোচিত এবং বিতর্কিত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে তিনি ১৯৮১ সালে বিয়ে করেন এবং ১৯৮৬ সালে তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে।

রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্মসম্পাদক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রথম আহবায়ক কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ সংগীত পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও প্রকাশনা সচিব। বিগত স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনেও রুদ্র সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ জুন ২০১৮/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়