ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের জন্মস্থান সংরক্ষণের উদ্যোগ

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২২, ২৪ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের জন্মস্থান সংরক্ষণের উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা: ৮০’র দশকে দখল হওয়া খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি গ্রামের কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের জন্মস্থান সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।

১১২ বছর আগে বাংলা ১৩১৩ সনের পৌষে কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার প্রয়াত হন। কবির স্মৃতি রক্ষার্থে মন্দিরের জন্য নিজ পুত্রের দানকৃত জমি এখন অবৈধ দখলে। মন্দিরটি থাকলেও মন্দিরের ভাসান ঘাটে  (প্রতিমা ভাসানোর ঘাট) তৈরি করা হয়েছে পাকা স্থাপনা। স্থানীয় ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে একটি চক্র মূল্যবান এ জমি ডিসিআরের মাধ্যমে বরাদ্দ নিয়ে বছরের পর বছর দখল করে নিয়েছে। মুক্ত করার কোন উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।

সেনহাটি শিববাড়ী পুজা মন্দির পরিচালনাকারী সংগঠন হিন্দু সমাজ কল্যান পরিষদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিলকৃত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের পুত্র উমেশ চন্দ্র মজুমদার কবির স্মৃতি রক্ষার্থে শিববাড়ী মন্দিরের জন্য সেনহাটি মৌজার ৪টি দাগে ৭০ শতক জমি দান করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে সেখানে কৃষ্ণ চন্দ্র ইনস্টিটিউট স্থাপনের জন্য নামফলক উন্মোচন করা হয়। ওই জমিতে ১৩৪৯ সালে স্থানীয় নারী সরোজিনী দেবী তার স্বামী রায় কুমুদ বন্ধু দাশ শর্মা বাহাদুরের নামে মন্দির ভবন নির্মাণ করেন। আশির দশকে মন্দিরের সম্পত্তি প্রথম দফায় অবৈধ দখলে চলে যায়।

এ বিষয়ে অভিযোগ করা হলে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সরেজমিনে তদন্ত করে মন্দিরের অনুকূলে রায় প্রদান করেন। অবৈধ দখলমুক্ত হলে তখন থেকেই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা ওই মন্দিরে পূজা অর্চনা করে আসছে।

এদিকে, ২০১৬ সালের দিকে আবারও একটি চক্র উপজেলা ভূমি অফিসে অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে মন্দিরের ৪ শতক জমি নিজেদের নামে বরাদ্দ নেয়। সেনহাটি গ্রামের মৃত আব্দুস সালাম খাঁনের ছেলে চঞ্চল খাঁন তিন শতক এবং একই এলাকার আব্দুল ওহাব এক শতক জমি বরাদ্দ নেন। এরপর ভৈবর নদ সংলগ্ন মন্দিরের ভাসান ঘাটে চঞ্চল খাঁন পাকা স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেন। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিষ্ণুপদ পালকেতদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি  তদন্ত প্রতিবেদনও দাখিল করেন। কিন্তু অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে স্থানীয় হিন্দু সমাজ কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র দত্ত এ প্রতিবেদককে বলেন, তারা মন্দিরের জমি দখলমুক্ত করার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করার পর বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন তদন্তের নামে সময় ক্ষেপন করে। ফলে মন্দিরের জমি এখনও অবৈধ দখল মুক্ত করা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে খুলনার জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান বলেন, ‘কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের জমিসহ সকল স্মৃতি সংরক্ষণ করা হবে। সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভও নির্মাণ করা হবে।’

অবৈধ দখল প্রসঙ্গে বলেন, ‘দখলের বিষয়টি তিনি সরেজমিনে দেখেছেন, সেখানে কয়েকটি পিলার স্থাপন করা হয়েছে। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা জানান, জেলা প্রশাসনের সাথে যৌথভাবে কবির জন্মস্থানটি সংরক্ষণের জন্য একটি প্রস্তাব প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। অধিদপ্তর সেনহাটি মৌজার তফশিল চেয়ে খুলনা জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি পাঠিয়েছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।



রাইজিংবিডি/২৪ জুন ২০১৮/খুলনা/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়