ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

হিন্দু জাতীয়তাবাদের ওপর সওয়ার মোদি

শাহেদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৮, ১০ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হিন্দু  জাতীয়তাবাদের ওপর সওয়ার মোদি

শাহেদ হোসেন : হাতে ২৪ ঘন্টারও বেশি সময় নেই। এরপরই শুরু হবে প্রতিবেশী দেশ ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাতীয় নির্বাচন। কয়েকটি ধাপের এই নির্বাচন চলবে আগামী মে  মাস পর্যন্ত। এক মাস আগেও ক্ষমতাসীন বিজেপির দ্বিতীয় মেয়াদে জয়ের সম্ভাবনার মাত্রাটি ছিল অনেক বেশি। তবে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে সেই সম্ভাবনার চিত্র উল্টে গেছে।

উন্নয়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান তুলে ক্ষমতায় আসা বিজেপির এই চিত্র কেন?  সংবাদমাধ্যমগুলোর ভাষ্য, উন্নয়নের বিশাল ফিরিস্তি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও সেই উন্নয়নের দৌড়ের গতি মন্থরই ছিল। এছাড়া টানা কয়েক বছর ধরে কৃষকের আয় হ্রাস এবং চাকরির সংকটের কারণে ক্ষমতাসীন দলটির প্রতি ক্ষোভ বেড়েছে ভোটারদের। এ কারণে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে বিজেপির নেতাদের মতোই হিন্দু উগ্র জাতীয়তাবাদের ওপর সওয়ার হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, মোদি সরকার প্রতি মাসে ১০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে। একই সঙ্গে কৃষিপণ্যের মূল্য ক্রমাগত নিম্মমুখী হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে কৃষক। উত্তর প্রদেশে আখ চাষীদের বকেয়া পাওনা আর দক্ষিণে নতুন জাতীয় কর বৃদ্ধির কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই দেশের দুই প্রান্তের মানুষের মধ্যে ক্ষোভে বেড়েছে বেশি।

গত ডিসেম্বরে পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে তিনটিতেই ভরাডুবি হয়েছিল হিন্দু জাতীয়তাবাদের ধারক দল বিজেপির। জনপ্রিয়তার দিকে থেকে এগুতে শুরু করে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস। সাইরেন তখনই বেজেছিল মোদির কানের পাশে। এরপরই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সঙ্গে ফেব্রুয়ারিতে সংঘাতে জড়ায় ভারত। এরপর নিজেকে ও তার দল বিজেপিকে জাতীয় নিরাপত্তার একমাত্র রক্ষক হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেন মোদি। যারা পাকিস্তানের বালাকাটো তথাকথিত সন্ত্রাসী শিবিরে হামলার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিল সেই বিরোধী জোটের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

গত সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী জনসভায়ে মোদি বলেছেন, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক থেকে এয়ার স্ট্রাইক—এসব আগে কেউ ভাবতে পারেনি। এখন তা হচ্ছে। ভারতে একসময় এসব ছিল স্বপ্ন।

বিরোধীদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘আজ এই এয়ার স্ট্রাইক নিয়ে কারা প্রশ্ন তুলেছে? কারা সেনাবাহিনীকে নিরাশ করছে? তা জনগণ জানে।’

বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে উবার  চালক শিব চন্দ্র রায়ের কথায় মোদি সরকারের ওপর জনগণের ক্ষোভের মাত্রাটা বোঝা যায়। তিনি বলেন, ‘মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা না করায় জনগণ অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ।’

তিনি জানান, উত্তর প্রদেশে তার ভাইয়েরা কাজ পাচ্ছে না। সংসারের ভরণপোষনে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

জাতীয়তাবাদের দোহাই দিয়ে মোদি যে ভোটের চিড়ে কিছুটা ভেজাতে পেরেছেন তার দিকে ইঙ্গিত দিয়ে শিব চন্দ্র বলেন,‘সবাই বলছে চাকরি নেই, সব জায়গায় কৃষকদের সংকটের মুখে পড়তে হচ্ছে। তবে পাকিস্তান ইস্যুতে আমরা এখন দ্বিধান্বিত। কিছু লোক ভাবছে এই ইস্যুতে মোদিকে ভোট দেওয়া উচিৎ, এটা জাতীয় সমস্যা।

নয়া দিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর দ্য  স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটিসর পরিচালক সঞ্জয় কুমার বলেন, ‘বিজেপির প্রচারণা ব্যাপকভাবে জাতীয়তাবাদ, জাতীয় নিরাপত্তার ওপর ভিত্তি করে এবং তাদের ইশতেহারে তার প্রতিফলন ঘটেছে। আর কংগ্রেস রাহুল গান্ধীর উপদেষ্টা স্যাম পিত্রোদা জানান, মোদির নির্বাচনী কৌশলটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে ধার করা।

তিনি বলেন, ট্রাম্পের ‘কৌশলটি ছিল সীমান্তে শত্রু রয়েছে, এই শত্রুরা হচ্ছে মেক্সিকান এবং দেশের ভেতরে থাকা অভিবাসীরা। প্রায় একইভাবে মোদি বলছেন, সীমান্তে শত্রু আছে... এ ক্ষেত্রে আপনি যেটাই বলবেন, দ্রুত সবাই আপনার ওপর হামলা চালাবে।’

রয়টার্স ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যম অবলম্বনে




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ এপ্রিল ২০১৯/শাহেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়