ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার না পেলে মাঠে নামবে জোট : সাঈদ

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১১, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার না পেলে মাঠে নামবে জোট : সাঈদ

এস কে রেজা পারভেজ : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার না পেলে ২০ দলীয় জোট ‘মাঠে নেমে জবাব’ দেবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাম্যবাদী দলের প্রধান কমরেড সাঈদ আহমেদ। বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে মামলাকে ‘ষড়যন্ত্রমুলক’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘সরকার বাধ্য করলে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে রাস্তায় নামবেন জোট নেতারা।’

সম্প্রতি রাজধানীর গুলিস্তানে দলের ঢাকা মহানগর কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার মামলা ছাড়াও তিনি কথা বলেন সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এস কে রেজা পারভেজ

রাইজিংবিডি : দীর্ঘদিন রাজনীতিতে আছেন। বর্তমান পরিস্থিতিকে কিভাবে মুল্যায়ণ করবেন?

সাঈদ আহমেদ : বর্তমানে দেশে রাজনীতি বলতে কিছু নেই। খুন-গুম-মামলা-হামলা আর বিরোধী রাজনৈতিক দলকে ধ্বংস করার ধুম চলছে। কিন্তু মানুষের ইতিবাচক রাজনীতির যে ডিমান্ড, তার দিন দিন পরিবর্তন হচ্ছে। সেজন্য বর্তমান সরকারের প্রতি তাদের অনাস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি হচ্ছে এই জন্য যে, দেশ-জাতি-জনগণের ওপর যেভাবে স্টিম রোলার চালানো হচ্ছে, পাকিস্তান সরকারের সময়েও এই ধরনের ঘটনা এবং নির্যাতন চলেনি। কারণ, আমরা বহু সরকারের শাসন দেখেছি। সব শাসনকে হার মানিয়েছে এই সরকারের দু:শাসন।

বলতে পারেন রেডিক্যাল চেঞ্জ। গ্রাম-গঞ্জ থেকে শুরু করে ঢাকায় চায়ের দোকানে সব জায়গায় যে কোনো পর্যায়ের মানুষের কাছে বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইবেন, দেখবেন তারা বলবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, হত্যা, খুন, গুম, টেন্ডারবাজি এসব চলছেই। ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে কোথাও তা গ্রহণযোগ্য হয়নি। সংবিধান লঙ্ঘন করে যে ভাবে একনায়কতন্ত্র চালানো হচ্ছে তা নজিরবিহীন।

রাইজিংবিডি : আপনারা বলছেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন করছেন। সরকারকে সংলাপে ডাকছেন। কিন্তু সরকার তো তা নাকচ করে দিয়ে বলছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে?

সাঈদ আহমেদ : সরকার নাকচ করবে এটিই স্বাভাবিক। কারণ, তারা তো জনগণের মতামত নিয়ে সরকার গঠন করেনি। রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করে এই সরকার সংসদ গঠন করে ক্ষমতায় টিকে আছে। তারা আমাদের দাবি মানবে না, এটিই তো ঠিক। তবে আমাদের কর্মকৌশল প্রনয়ণে আরো কার্যকর ভুমিকা এবং সিদ্ধান্তগুলো সঠিকভাবে নিতে হবে। তাহলেই সরকার বাধ্য হবে। আশা করছি, ভবিষ্যতে তা হবে।

রাইজিংবিডি : সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলেই কি বিএনপি জোটের সংলাপের ডাকে সরকার সাড়া দিচ্ছে না?

সাঈদ আহমেদ : জোট জনগণের মৌলিক অধিকার আদায় করার জন্য অবশ্যই সঠিক পথে আছে। কিন্তু সরকারের যে চরিত্র তাতে মনে হচ্ছে তারা পিছপা হবে না। তবে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দাবি আদায় করবো। এটি আমাদের বিশ্বাস ও মনোবল। ২০ দলের কোনো ব্যর্থতা নেই। সরকার পুরো ব্যর্থ। কারণ, তারা বলেছিলো এটি একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। সংবিধান রক্ষার জন্য। কিন্তু তারা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছে। ক্ষমতার লোভে একনায়কতন্ত্র সৃষ্টি করলো। প্রশাসনকে তার দলীয় বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করলো। শুরু যার আছে, শেষ তার আছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারকে বাধ্য করবো একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য।
 


সরকারের কাছে আহ্বান জানাবো এখনো সময় আছে, খালেদা জিয়া ও ২০ দলের দাবি মেনে নিয়ে সংলাপে বসুন। আলোচনা ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই। একনায়কতন্ত্র থাকে না, থাকবে না সেকথা ইতিহাসই বলে দেয়। আপনারা একটি নির্বাচন দিয়ে পরীক্ষা করুন জনগণ কার পক্ষে। আমাদের দাবি পরিস্কার, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। নির্বাচনে জনগণ যাকে ম্যান্ডেট দেবে তাকে মেনে নেবে ২০ দলীয় জোট।

সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে সাহস পাচ্ছে না। কারণ, তারা ২০ শতাংশ ভাগ ভোটও পাবে না। এটা নিশ্চিত জেনেই সংলাপ বসতে ভয় পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। প্রয়োজনে রাজপথেই এর সমাধান হবে।

রাইজিংবিডি : খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে জোটের অবস্থান কি?

সাঈদ আহমেদ : খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার যে কার্যক্রম চলছে তা চক্রান্তমুলক, মিথ্যা মামলা। মূলত তারেক রহমানকে মোকাবিলা করার লক্ষেই এতোবড়ো মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে। কারণ, তারেক রহমান হচ্ছে জিয়ার সৈনিক। সরকার তাকে ভয় পাচ্ছে। এজন্য তার মা খালেদা জিয়া ও দলের অন্যান্য নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করছে। আমার বিশ্বাস একদিন জনগণ এসবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। জনগণ এই অবস্থা মেনে নেবে না। সরকার বাধ্য করলে আমরা ২০ দলীয় জোট যে কোনো পরিস্থিতিতে মোকাবেলা করতে রাস্তায় নামবো।

এই ধরনের মামলা এখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামেও ছিলো এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতার বিরুদ্ধেও ছিলো। ক্ষমতায় এসে তারা সেই সব মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। খালেদা জিয়াকে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে, জাতিকে হয়রানি করছে। আমাদের দাবি, অতি শিগগিরই খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আপত্তিকর রায় দেওয়া হলে জাতি মানবে না। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।

রাইজিংবিডি : ২০ দলীয় জোটের সাম্যবাদী দল বামপন্থি রাজনৈতিক দল। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ডানপন্থি। আদর্শগত অমিল রয়েছে। বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন।

সাঈদ আহমেদ : কমরেড মাসেতু বলেছেন, দেশ জাতি জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্রতম শত্রুর সাথেও আপোষ করা যায়। এই জোট আন্দোলনের জোট, নির্বাচনের জোট। আমাদের কাজের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। কারণ, আমাদের লক্ষ্য এক, সেটি হচ্ছে স্বৈরাচারি সরকার হটাও। জামায়াতে ইসলামী কোনো সমস্যা নয়। আমরা একে অপরের সহযোদ্ধা হিসেবে আছি। ম্যাডাম বলেছেন, এখানে কে বড়, কে ছোট; বাম-ডানের কোনো প্রশ্ন নয়। সবাই সমান। সবার চিন্তা-চেতনা অভিন্ন। প্রয়োজনে আমরা একদফার আন্দোলনের নামবো।

রাইজিংবিডি : আন্দোলন ও নির্বাচনের জন্য জোট ও সাম্যবাদী দল কতটা প্রস্তুত?

সাঈদ আহমেদ : নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে শতভাগ। ম্যাডাম সর্বশেষ বৈঠকেও আন্দোলনের পাশপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, জোটে ছোট-বড় নয়, সবাইকে সম মর্যাদার ভিত্তিতে রাখবেন। নির্বাচনে সবাইকে পূর্ণ মর্যাদা দেবেন। আমরা সেই অর্থে কাজ করছি।

খালেদা জিয়া জোটের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের মর্যাদা দিয়ে নির্বাচনের বিষয়ে সবাইকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে নির্বাচন করার সুযোগ দেবেন বলে বিশ্বাস করি। তিনি স্ব স্ব অঞ্চলে নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন জোট নেতাদের। আমিও আমার নির্বাচনী এলাকা নারায়ণগঞ্জ ৫ আসন থেকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।

রাইজিংবিডি : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ

সাঈদ আহমেদ : আপনাকেও ধন্যবাদ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/রেজা/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়