ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ঘাটতি মেটাতে সার্বভৌম বন্ডে না অর্থনীতিবিদদের

|| রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৭, ২১ জুন ২০১৩   আপডেট: ০৮:৪৫, ১১ আগস্ট ২০২০
ঘাটতি মেটাতে সার্বভৌম বন্ডে না অর্থনীতিবিদদের

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
ঢাকা, ২১ জুন: সার্বভৌম বন্ডের মাধ্যমে বিদেশি ঋণ প্রাপ্তির ঘাটতি মেটাতে যাচ্ছে সরকার।

মূলত: বাজেট ঘাটতি মেটাতেই সরকার এই উদ্যোগ নিচ্ছে।

সরকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে একদিকে যেমন বিদেশি সাহায্যের ঘাটতি মিটবে, অন্যদিকে সার্বিক বাজেট ঘাটতিও কমবে অনেকটাই। কিন্তু সরকারের এই অবস্থানের সঙ্গে একমত নন দেশের অর্থনীতিবিদেরা।
 
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থউপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম  বলেন, এ মুহ‚র্তে সার্বভৌম বন্ডের দিকে যাওয়াটা ঠিক হবে না।

পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত এই পথ নিয়েছে বলেই আমাদেরও তাদেরকে অনুসরণ করতে হবে বিষয়টা এমন নয়। কারণ ভারতের বিদেশি মূদ্রার সঞ্চিতি বা রিজার্ভ আমাদের থেকে অনেকে অনেক বেশী। তাই বন্ড আমাদের জন্য সঠিক কোন উপায় হতে পারে না।  
 
মেয়াদের শেষ বছরে আশানুরূপ বিদেশি অর্থসহায়তা না পাওয়ায় উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। এ পরিস্থিতিতে সার্বভৌম বন্ডের মাধ্যমে ৫০ কোটি ডলারের বিদেশি ঋণ নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইতিপূর্বে গতবছরের এপ্রিল মাসে সরকার সার্বভৌম বন্ড ছেড়ে বিশ্ববাজার থেকে ৫০ কোটি ডলার মার্কিন ঋণ পাবার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু লেনদেনের ভারসাম্য নিয়ে চাপে থাকায় সরকার তখন দাতা সংস্থা আইএমএফের পাশাপাশি বিশ্ববাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করে। এজন্য তখন একটি কারিগরি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটি সার্বভৌম বন্ড ছেড়ে অর্থ সংগ্রহের সুপারিশ করলেও এর প্রভাব সম্পর্কেও সরকারকে সতর্ক করেছিল।

পাশাপাশি কমিটি সার্বভৌম বন্ডের অর্থ অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ এবং মুদ্রা ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার পরামর্শও দিয়েছিল। তবে সমালোচনার মুখে এ ঋণ গ্রহণে সরকার আর এগোয়নি। কারণ তখনই লেনদেনের ভারসাম্য মেটাতে আইএমএফ ১০০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে। এর ফলে ভাটা পড়ে সরকারের সার্বভৌম বন্ড ছাড়ার উদ্যোগেও। এর জের ধরে তখন থেকেই সার্বভৌম বন্ডের মাধ্যমে ঋণ গ্রহণের প্রক্রিয়াটি স্থগিত হয়ে থাকে।

এ বিষয়ে কথা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সঙ্গে। তিনি  বলেন, নিজেদের দুর্বলতা ও অনীহার কারণে আমরা হারালাম সহজ শর্তে পদ্মাসেতুর ঋণ। আমাদের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তিগুলো স্বচ্ছ নয়। ঋণ খরচের জায়গাগুলোও অস্পষ্ট। সুতরাং এতসব অগোছালো অবস্থায় সার্বভৌম ঋণ নেয়ার সময় এখনই এসেছে বলে মনে হয় না। এ ঋণ গ্রহণ প্রক্রিয়া পরীক্ষামূলক অবস্থানে আছে। ওখানেই থাকুক।

সূত্র জানায়, মেয়াদের শেষসময়ে বিশ্ববাজার থেকে ঋণ গ্রহণে সরকার সার্বভৌম বন্ডের সুযোগ কাজে লাগাতে চাচ্ছে। কারণ গত দু’ অর্থবছর ধরেই বাজেট ঘাটতির বৈদেশিক অংশ মেটাতে পারছে না সরকার। ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিয়ে তা মেটাতে হচ্ছে। এতে সরকারের ব্যাংক ঋণ ব্যাপক হারে বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ২৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে ব্যাংক ঋণ। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সার্বিক অর্থনীতিতেও।

অথচ বাজেটে বৈদেশিক ঋণ প্রাপ্তির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, গত দু’বছর ধরে তা অর্জিত হচ্ছে না। ফলে বাজেট কাটছাট করে বৈদেশিক সাহায্যের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হচ্ছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০১২-’১৩ অর্থবছরের বাজেটে বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে।

গত ২০১১-’১২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বৈদেশিক সাহায্যের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার কোটি টাকা কমাতে হয়েছিল। এখন স্থানীয়ভাবে এ ঘাটতি মেটাতে হলে সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়ে যাবে। এতে সরকারকে আবারও পড়তে হচ্ছে সমালোচনার মুখে। কিন্তু সরকার সমালোচনা এড়াতে সার্বভৌম বন্ড থেকে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ  বলেন, বায়ার কারা। কি প্রজেক্ট। লাভজনক হবে কিনা। সুদের হার কেমন। নানা জটিলতা আছে। বিষয়টিতে পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। সব মিলিয়ে একটা সংশয় থেকে যায় বলে মনে করেন তিনি। যদি যেতেও হয় তবে তা যেন অনেক সতর্কতার সঙ্গে হয়। অভিজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে হয়, বলেন সাবেক এ গভর্নর।   

বাংলাদেশ ব্যাংক নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র ম. মাহফুজুর রহমান অবশ্য জানান, গঠিত কমিটি একটি সুপারিশমালা তৈরি করে গত মাসে সরকারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। এতে রয়েছে-খাতগুলো চিহ্নিতকরণ, চাহিদার পরিমাণসহ লাভজনক কিনা এমনসব নানা বিষয়। এখন সরকার যা ভালো মনে করবে তা হবে।

 

 

রাইজিংবিডি/এসকে

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়