ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বিশ্ব বাজারে জায়গা করছে বাংলাদেশের প্লাস্টিক পণ্য: জাহিদ হাসান

|| রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ২১ জুন ২০১৩   আপডেট: ০৮:৪৫, ১১ আগস্ট ২০২০
বিশ্ব বাজারে জায়গা করছে বাংলাদেশের প্লাস্টিক পণ্য: জাহিদ হাসান

বাংলাদেশে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বিপণনে এগিয়ে থাকাদের মধ্যে অন্যতম তালুকদার গ্রুপ। একদিকে তাদের উৎপাদিত পণ্য দেশের চাহিদা মেটাচ্ছে; অন্যদিকে তা রপ্তানির মাধ্যমে আয় করছে বিপুল বিদেশি মুদ্রা। সংশ্লিষ্টদের মতে, এখন যে অবস্থা তার সঙ্গে আরো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরো বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদন করতে পারলে বিশ্ববাজারে খুব সহজেই জায়গা নিতে পারে বাংলাদেশের প্লাস্টিক পণ্য।

বাংলাদেশের প্লাস্টিক পণ্যের বাজার ও ভবিষ্যত নিয়ে রাইজিংবিডি’র সঙ্গে কথা বলেছেন তালুকদার গ্রুপের মিডিয়া ও ব্র্যান্ড ম্যানেজার বিএম জাহিদ হাসান মারুফ। সাক্ষাতকার নিয়েছেন কাফি আমান।


প্রশ্ন: বাংলাদেশে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের শুরুর সময়টা সম্পর্কে বলুন।

উত্তর: আমাদের দেশে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন শিল্পের শুরুটা ষাটের দশকে। এখনকার মতো উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার তখন হতো না। নানা চড়াই উৎরাই পাড়ি দিয়ে এখন এ শিল্প বলা চলে শক্ত ভীতের উপর দাঁড়িয়ে। সমস্যা আছে এখনো। তারপরও সম্ভাবনা আরো বেশি। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় প্লাস্টিক পণ্যের মান যেমন বেড়েছে, বেড়েছে ক্রেতা। এ শিল্পের বিকাশ অনেক দ্রুত হচ্ছে। ধাতব ও উদ্ভিদজাত পণ্যের তুলনায় সাশ্রয়ী, মজবুত ও টেকসই হওয়ায় প্লাস্টিক পণ্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।  

প্রশ্ন: প্লাস্টিক শিল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাই?

উত্তর: দেশের চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমরা মেটাচ্ছি। সেইসঙ্গে রপ্তানিও হচ্ছে। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি থেকে বছরে ৮০০ কোটি টাকার বেশি বিদেশি মুদ্রা আসছে। এ ধরনের পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১২তম। এছাড়া বাংলাদেশের ভেতরে প্লাস্টিক পণ্যের বাজার বছরে ৯০০ কোটি টাকার। যদিও অভ্যন্তরীণ বাজার দ্রুত বাড়ছে। ফলে এ শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশকে এ ধরনের পণ্য আমদানি করতে হয় কী?

উত্তর: এ শিল্পে বাংলাদেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ন। এখন সব ধরনের প্লাস্টিক পণ্য দেশেই তৈরি হচ্ছে। কিছু কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। এগুলো হচ্ছে পলি প্রোপাইলিন, পলি ইথাইলিন, এইচএপিএফ, জিপিপিএস ইত্যাদি। আশার কথা হলো এগুলো দেশেই উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। বড় বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে এলে, উন্নত প্রযুক্তির সংযোজন ঘটালে প্লাস্টিকের বিশ্ববাজার দখল করা সম্ভব।

প্রশ্ন: বাংলাদেশি প্লাস্টিক পণ্য কোন কোন দেশে রপ্তানি হচ্ছে?

উত্তর: যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অষ্ট্রেলিয়া, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলোই বাংলাদেশী পণ্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। বিশ্ববাজারে আমাদের পণ্যের কদরও বাড়ছে। বর্তমানে ২৩টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশের প্লাস্টিক পণ্য। এ বাজার বাড়ারও সুযোগ রয়েছে। প্রধান রপ্তানি আইটেমগুলোর মধ্যে রয়েছে পলিব্যাগ, হ্যাঙ্গার, ওভেনসেফ ব্যাগ, হাউজহোল্ড আইটেম, ফার্নিচার, বিভিন্ন ধরনের খেলনা ও শোপিস। এছাড়া গৃহনির্মাণ সামগ্রী, জানালা ও দরজা, চিকিৎসা উপকরণ ও ওষুধ কন্টেইনার, রক্তের ব্যাগ, ইনজেকশন টিউব, স্যালাইন ব্যাগ, প্লাস্টিক পাইপ, বড় চৌবাচ্চা, গাড়ি ও সাইকেলের বাম্পার, হাতলের কভার, ব্যাক লাইট, স্পোক লাইট, পোল্ট্রি ও মাছের পট, জার, মাচের জাল, বল, মাছ ও ডিম রাখার ঝুঁড়ি, অডিও ভিডিও ক্যাসেট, কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্র-উপকরণসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্য তৈরি হচ্ছে দেশে। উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে এসব পণ্যের মান যেমন ভালো হচ্ছে, তেমনি পণ্যে বৈচিত্র আনা সম্ভব হচ্ছে।

প্রশ্ন: প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের সুবিধা সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?

উত্তর: এগুলো বার বার ব্যবহার করা যায়। সহজে ভাঙ্গে না, অর্থাৎ ভঙ্গুর পণ্য নয়। আবার ব্যবহারের পর সেগুলো ফেলে দিতে হয় না। রিসাইক্লিং ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে তা কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে নতুন পণ্যে বানানো যায়। এসব পণ্য পরিবেশবান্ধব।

প্রশ্ন: তালুকদার গ্রুপের পণ্য সম্পর্কে বলুন।

উত্তর: আমরা শতভাগ আন্তর্জাতিক মানের পণ্য তৈরি করি। পণ্যের উচ্চমানের কারণেই ক্রেতারা তা সাদরে নিয়েছেন। মান এবং ফিনিশিং এ দুটো বিষয়েই আমরা সচেষ্ট। বিশেষ করে পণ্যের রং টেকসই, ব্যবহারও নিরাপদ। তালুকদার গ্রুপের প্লাস্টিক পণ্য সামগ্রীতে যুক্ত হয়েছে অসংখ্য আইটেম। তালুকদার ফাউন্ড্রি লিমিটেড, পিভিসি এবং ঢালাই পণ্যের পাশাপাশি ইউপিভিসি পাইপ, ফিটিংস এবং প্লাস্টিক ফার্নিচার, গৃহস্থালী সামগ্রী উৎপাদন করছি। এছাড়া কফি টেবিল, ওভাল শেপ টেবিল, স্মাইল বাস্কেট তৈরি করছি। সময়ের প্রয়োজনে ঘরে ঘরে জায়গা করে নিয়েছে এসব পণ্য। আর তাই বাজারে এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা। আমাদের গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে তালুকদার প্লাস্টিক কোম্পানি লিমিটেড, তালুকদার ফাউন্ড্রি লিমিটেড, তালুকদার ইউপিভিসি ফিটিংস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, তালুকদার ইউপিভিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও তালুকদার ডোর এন্ড শিট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

প্রশ্ন: আপনাদের পণ্যের প্রচার এবং বাজার বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে জানতে চাই।  

উত্তর: কাজের সুযোগ সৃষ্টি, বাজার বাড়ানো ও পণ্য সেবা পৌঁছে দেয়া এবং দেশ-বিদেশে বাংলাদেশী পণ্যের বাজার তৈরিতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা দেশ-বিদেশে প্লাস্টিক পণ্য আরো জনপ্রিয় করতে কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া পণ্যের প্রচার প্রসারের জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিয়মিত বিজ্ঞাপন দিচ্ছি। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ন সুস্থ ধারার নাটক নির্মাণ এবং সম্প্রচারে সহায়তা দিচ্ছি। এর বাইরে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে সামাজিক দায়বদ্ধতার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের প্রচার, প্রসার এবং সুনাম বাড়াতে কাজ করছি।

প্রশ্ন: রাইজিংবিডি’র পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।

উত্তর: আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।  

 

রাইজিংবিডি / ২১ জুন, ২০১৩

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়