ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

জুলহাজ-তনয় হত্যা মামলা : তদন্তেই বছর পার

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪৯, ২৫ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জুলহাজ-তনয় হত্যা মামলা : তদন্তেই বছর পার

জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর কলাবাগানে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইডের কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব তনয় হত্যা মামলার তদন্ত এক বছরেও শেষ হয়নি।

গত বছরের এই দিনে রাজধানীর ধানমন্ডির কলাবাগানের ৩৫ নম্বর বাড়িতে নৃশংসভাবে খুন করা হয় জুলহাজ ও তনয়কে। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত এক বছরেও শেষ করতে পারেনি পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ (ডিবি)। দীর্ঘ দিনেও চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্তে দৃশ্যমান তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে নিহতের পরিবার।

মামলার বাদী ও নিহত জুলহাজ মান্নানের ভাই মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ‘দেখতে দেখতে ঘটনার এক বছর পার হলে গেল। এক বছরেও  মামলার তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি। এখন পর্যন্ত খুনিরাই চিহ্নিত হয়নি। এরপর তাদের ধরার চেষ্টা, তারপর চার্জশিট। তারপর বিচার আর তারও পরে বিচারের প্রতি পরিবারের সন্তুষ্টি সবই অনেক দূরের বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘আমার ভাই খুন হয়েছে। রাষ্ট্রের কাছে সারাজীবন আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার চেয়ে যাব। রাষ্ট্রের দায়িত্ব সুষ্ঠু বিচার করা। তবে রাষ্ট্রের কাছে এতটুকুই দাবি অনন্তকাল যেন বিচারের জন্য অপেক্ষা করতে না হয়।’

এদিকে এক বছর ধরে তদন্ত করে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া পাঁচ ঘাতককে শনাক্ত করতে পেরেছে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা। তাদের দাবি, এখন পর্যন্ত তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলেও ওই পাঁচ খুনির প্রশিক্ষকসহ দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। তারা দুজনেই গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য দিয়েছেন। ওইসব তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। অভিযানের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের আশার আলো খুঁজছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হাসান আরাফাত বলেন, ‘ওই পাঁচ খুনির প্রশিক্ষক ছিল রশীদ উন নবী নামের এক ব্যক্তি, যাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তা ছাড়া অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজির উদ্দিন সামাদকে সে সরাসরি কুঁপিয়েছে। ওই মামলায় রশীদ উন নবী আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে সে জুলহাজ-তনয় হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া পাঁচ খুনিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। অপর আসামি শরিফুল ইসলাম খুনিদের অস্ত্র সরবরাহসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে। এ ছাড়া কিলিং মিশনে থাকা ওই পাঁচ খুনির সাংগঠনিক নামের পাশাপাশি প্রকৃত নাম-ঠিকানাও তদন্তে পাওয়া গেছে। খুনিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

কবে নাগাদ এ মামলার চার্জশিট দাখিল করা যেতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নতুন একজন আসামি ধরতে পারলে আরো তথ্য পাওয়া যাবে। মূলত এ জন্যই অপেক্ষা করা। তা ছাড়া চাইলে চার্জশিট অল্প সময়ের মধ্যেও দেওয়া সম্ভব।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৫ এপ্রিল চার থেকে পাঁচজন দুর্বৃত্ত ‘জুলহাজ সাহেবের পার্সেল আছে’ বলে রাজধানীর ধানমন্ডির কলাবাগানের ৩৫ নম্বর বাড়িতে প্রবেশ করে। এরপর জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে ফাঁকা গুলি ছুড়ে দুর্বৃত্তরা বাসা থেকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় জুলহাসের বড় ভাই মিনহাজ মান্নান ইমন ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সি অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। একই ঘটনায় ওইদিনই ওই থানার এসআই মোহাম্মদ শামীম বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে হত্যা মামলাটি তদন্ত করছেন ডিবি ইন্সপেক্টর বাহাউদ্দিন ফারুকী ও অস্ত্র মামলাটির তদন্ত করছে ডিবির পুলিশ পরিদর্শক নুরুল আফসার। মামলা দুটির মধ্যে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্য রশীদ উন নবী ভূইয়া ওরফে টিপু ও শরিফুল ইসলাম ওরফে কেরামত ওরফে সিয়াম বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। আর অস্ত্র মামলায় এখন পর্যন্ত শরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার হয়েছে।

এদিকে মামলা দুটির মধ্যে হত্যা মামলায় প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৯ বার এবং অস্ত্র মামলায় প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৮ বার সময় নিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, নিহত জুলহাজ বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনার প্রটোকল কর্মকর্তা ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের আগে ‘রূপবান’ সম্পাদনার পাশাপাশি জুলহাজ উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডিতে কাজ করতেন। জুলহাসের সঙ্গে নিহত তনয় নাট্য সংগঠন ‘লোক নাট্যদল’ এর শিশু সংগঠন পিপলস থিয়েটারে জড়িত ছিলেন।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ এপ্রিল ২০১৭/মামুন খান/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়