ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

নৌপথে অস্ত্র আনার পরিকল্পনা নব্য জেএমবির

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৯, ২৮ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নৌপথে অস্ত্র আনার পরিকল্পনা নব্য জেএমবির

নিজস্ব প্রতিবেদক : নব্য জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপ বিদেশ থেকে নৌপথে দেশে অস্ত্র-গোলাবারুদ আনার পরিকল্পনা করেছিল। এ জন্য ভুয়া কাগজ তৈরি করে তারা জাহাজে নিজেদের লোক রিক্রুট করার চেষ্টা করছিল। হাতিয়াসহ উপকূলীয় অঞ্চলে তাদের বেশ কিছু ট্রলার রয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। 

গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৮টার দিকে সাভারে একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে তামিম দ্বারীকে (৩২) দুই সহযোগীসহ আটক করে র‌্যাব-৪। আটক অন্য দুই সদস্য হলেন- কামরুল হাসান ওরফে কাজল ওরফে নুরুদ্দিন (২৬) ও মোস্তফা মজুমদার ওরফে শিহাব ওরফে হামজা (৩২)। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৫ রাউন্ড গুলি, দুটি ম্যাগজিন, প্রায় এক কেজি প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভসহ আইইডি তৈরির সরঞ্জাম, তিনটি চাকু, একটি চাপাতি, একটি ল্যাপটপসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, তাদের তদন্তে তামিম দ্বারী নামে একজনের নাম উঠে এসেছিল যিনি গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার আগে থেকেই নিহত জঙ্গি নেতা তামিম চৌধুরীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈঠক করে নাশকতার পরিকল্পনাও করেছিলেন। পরে র‌্যাব খোঁজ নিয়ে জানতে পারে তামিম দ্বারী ওরফে আব্দুল্লাহ আল হাসান ওরফে আজিজুর রহমান ওরফে আব্দুল্লাহ আল জাফরী ওরফে আমির হামজা ওরফে আল হুজাইফা নামে পরিচিত।

সংবাদ সম্মেলনে মুফতি মাহমুদ খান জানান, আটককৃতরা প্রাথমিকভাবে তামিম-সারোয়ার গ্রুপের সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকার করেছেন। হলি আর্টিজান হামলা পরবর্তী বেশ কিছু অভিযানে নব্য জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ অনেকেই মারা যাওয়ার পর সংগঠনে যে শূন্যতা তৈরি হয়ে তা পূরণ করতে কাজ করছিল তামিম। তিনি যেকোনো সময় ঢাকায় ঢুকতে পারে এমন তথ্য পায় র‌্যাব। ফলে সম্ভাব্য সকল স্থানে নজরদারী বৃদ্ধি করে তারা। গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাভারে ঝিটকা-গাবতলীগামী ভিলেজ পরিবহনের একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

তিনি জানান, গত বছরের ৮ অক্টোবর র‌্যাবের অভিযানে পালানোর সময় নিহত হন সারোয়ার। পরে তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ নথিপত্র উদ্ধার করা হয়। সেসব নথিপত্র বিশ্লেষণ করে এ পর্যন্ত তামিম-সারোয়ার গ্রুপের ২৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। যাদের মধ্যে ১৪ জন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। সেসব নথিপত্রেই তামিম চৌধুরীর বিশ্বস্ত তামিম দ্বারীর নাম পাওয়া যায়। তামিম জঙ্গিবাদে আগ্রহী যুবকদের উদ্বুদ্ধ করাসহ তামিম চৌধুরীকে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন নাশকতার পরামর্শ দিতো।

 



তিনি আরো জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব জানতে পারে, তামিম দ্বারীর বিদেশ থেকে নৌপথে অস্ত্র-গোলাবারুদ আনার পরিকল্পনা ছিল। এ জন্য ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বিভিন্ন জাহাজে তাদের লোক রিক্রুটের চেষ্টা করে সে। এ বিষয়ে নিহত তামিম চৌধুরী ও তামিম দ্বারীর মধ্যে বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়।

তামিম দ্বারী মেরিন একাডেমিতে পড়াশোনার পর বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের বাংলার কাকলীসহ বিভিন্ন জাহাজে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একই জাহাজে কর্মরত আবু বক্করের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন এবং তামিম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন।

এদিকে আটক মোস্তফা মজুমদার কুমিল্লা পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে ২০০৭ সালে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানিতে উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। কর্মজীবনে এসে তিনি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন।

অন্যদিকে কামরুল হাসানের পিতা বিডিআর বিদ্রোহের অভিযোগে ৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত। ২০০৬ সালে কুমিল্লার একটি মাদ্রাসায় অধ্যায়নকালে তিনি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৪ সালে তামিম চৌধুরী ও তামিম দ্বারীর মাধ্যমে জিহাদে উদ্বুদ্ধ হন। ২০১৬ সালের নভেম্বরে তিনি হিজরতের জন্য গৃহত্যাগ করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ এপ্রিল ২০১৭/নূর/উজ্জল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়